বিজ্ঞাপন

চোখ উপড়ে নেওয়ার ২৭ বছর পর বিচার পেল মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

April 26, 2018 | 5:31 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহানের দুই ছেলের চোখ উপড়ে নেওয়া এবং অ্যাসিডে মুখ ঝলসে দেওয়ায় আট আসামিকে সাজা দিয়েছেন চট্টগ্রামের আদালত। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ঘটনার ২৭ বছর পর বিচার পেল মুক্তিযোদ্ধা পরিবার।

বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) চট্টগ্রামের পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ স্বপন কুমার সরকার এই রায় দিয়েছেন।
আবদুস সোবহানের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার পশ্চিম নিশিন্তাপুর এলাকায়।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা পিপি অ্যাডভোকেট লোকমান হোসেন সারাবাংলাকে জানান, মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহানের সঙ্গে প্রতিবেশী আবুল হাশেমের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। ওই বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ১৯৯১ সালের ১৭ মার্চ আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার পথে আবদুস সোবহানের দুই ছেলেকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সাবেক বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্যাডার আইয়ুব এবং তার সহযোগীরা তুলে নিয়ে যায়। কবির আহমেদ ও সবুর আহমেদের হাত-পা বেঁধে খেজুর কাঁটা দিয়ে খুঁচিয়ে চোখ উপড়ে ফেলে সন্ত্রাসীরা। এরপর এসিডে ঝলসে দেয় তাদের মুখমণ্ডল। দুই ভাইয়ের মধ্যে কবির পরে মারা যান।

বিজ্ঞাপন

ওই ঘটনায় আবদুস সোবহানের আরেক ছেলে ফরিদুল আলম তিনজনের নাম উল্লেখ করে রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। ১৯৯২ সালে ১৩ জনকে আসামি করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

একই বছরের ২১ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১৮ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। চলতি বছরের ১২ এপ্রিল আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।
মামলার ১৩ আসামির মধ্যে আইয়ুব ও ইব্রাহিমকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

আব্দুল হক, সোলায়মান, ইউসুফ, জাফর, দুলাহ মিয়া ও গোলাম কাদেরকে ৭ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা- অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় আবুল হাশেম, আব্দুস সালাম, জাহাঙ্গীর ও হাশেমকে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। মামলার আরেক আসামি রশিদ মারা যাওয়ায় আগেই তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে শুধুমাত্র আবুল হাশেম হাজতে ছিলেন। রায়ে তিনি মুক্তি পেয়েছেন।

তবে রায়ে সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি লোকমান হোসেন। উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষ।

লোকমান হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, রায়ে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। অভিযোগ গঠন করা হয়েছে দণ্ডবিধির ৩২৬ (ক) ধারায় (ইচ্ছা করে চোখ, হাত ও মুখ ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং অ্যাসিড নিক্ষেপ করার অভিযোগ)। আর আদালত রায় দিয়েছেন ৩২৬ ধারায় (ইচ্ছা করে বিপজ্জনক অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আঘাত করার অভিযোগ)। যত বড় অপরাধ হয়েছে, রায়ে শাস্তি সেই পরিমাণ হয়নি। দণ্ডবিধির ৩২৬ (ক) ধারা অনুযায়ী, আমরা মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রত্যাশা করি।

বিজ্ঞাপন

মর্মান্তিক ওই ঘটনার পর ১৯৯১ সালের ১ নভেম্বর আইয়ুব বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা সোবহানকেও হত্যা করে। সেই মামলায় আইয়ুব আলীসহ অন্যান্য আসামিদের সাজা হয়।

সারাবাংলা/আরডি/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন