বিজ্ঞাপন

শিশু থাকুক নিরাপদে, অধিকারগুলো থাকুক সুরক্ষিত

October 2, 2022 | 5:23 pm

সংগীতা বড়ুয়া

শিশুদের জীবনের নানা চাহিদা, প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি নিয়ে রয়েছে ‘জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সনদ যা ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত হয়। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৯১টি দেশ সনদটি অনুমোদন করেছে। প্রথম যে সকল দেশ এই সনদটি স্বাক্ষর ও অনুমোদন করে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে একটি। ইতিহাসে এটি হচ্ছে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে গৃহীত একটি মানবাধিকার চুক্তি যা শিশুদের নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, স্বাস্থ্যগত, শিক্ষাগত এবং সাংস্কৃতিক অধিকার নির্ধারণ করে। এটি শিশুদের যে কোনো ধরনের ক্ষতি এবং নির্যাতন থেকে সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি এবং সংস্থার প্রতি আইনী বাধ্যবাধকতা ও দায়িত্বস্বরূপ।

বিজ্ঞাপন

শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের দেশে প্রচলিত আছে নানা আইন। কিন্তু শিশুর বয়স নির্ধারণ নিয়ে এসব আইনে আছে সমন্বয়হীনতা। এর প্রভাব পড়ছে শিশুর অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে। শিশুর সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সর্বপ্রথম যা প্রয়োজন, তা হলো শিশুর জন্য সর্বত্র গ্রহণযোগ্য একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করা। কারণ, শিশুর সংজ্ঞার সঙ্গে জড়িত থাকে শিশুর অধিকার, সুরক্ষা ও তার বিকাশ সম্পর্কিত বিষয়গুলো। শিশুর বয়স নিয়ে নানা ধরনের আইনী ব্যাখ্যার কারণে অনেক ক্ষেত্রে শিশুর অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। শিশু তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের আইনের আশ্রয় লাভের ক্ষেত্রেও জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

বাংলাদেশের জাতীয় শিশুনীতি-২০১১-এর ২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘শিশু বলতে ১৮ বছরের কম বয়সী বাংলাদেশের সকল ব্যক্তিকে বুঝাবে।’ আর ‘কিশোর-কিশোরী বলতে ১৪ বছর থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের বুঝাবে।’ এই সংজ্ঞা অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী সকল ব্যক্তি শিশু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কিন্তু পরের সংজ্ঞা অনুযায়ী ১৪ থেকে অনুর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সীরা একই সঙ্গে ‘শিশু’ ও ‘কিশোর-কিশোরী’ হিসেবেও সংজ্ঞায়িত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রবর্তন করে এবং পরবর্তীতে ২০১৩ সালে সেটি সংশোধন করে প্রণীত হয় শিশু আইন-২০১৩ যা শিশুদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে। শিশু আইন ২০১৩-এর ধারা-৪-এ বলা হয়েছে, ‘বিদ্যমান অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশু হিসেবে গণ্য হইবে।’ জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ এবং বাংলাদেশ সংবিধানেও ১৮ বছরের কম বয়সী যে কোনো ব্যক্তিকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ সংবিধান, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ এবং বাংলাদেশ শিশু আইন-২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশের অনুর্ধ্ব ১৮ যেকোনো ব্যক্তিকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়।

বিজ্ঞাপন

‘গড়বে শিশু সোনার দেশ, ছড়িয়ে দিয়ে আলোর রেশ’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২২। শিশুদের বিশেষ মানবাধিকারের মধ্যে রয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার, একটি নামের অধিকার, শিশু সম্পর্কিত বিষয়ে তার মত প্রকাশের অধিকার, চিন্তার স্বাধীনতার অধিকার, বিবেক এবং ধর্মের অধিকার, স্বাস্থ্যসেবার অধিকার, অর্থনৈতিক ও যৌন শোষণ থেকে সুরক্ষার অধিকার এবং শিক্ষার অধিকার ।

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের চারটি মুলনীতি রয়েছে- বৈষম্যহীনতা, শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ, শিশুদের অধিকার সমুন্নত রাখতে পিতা-মাতার দায়িত্ব এবং শিশুদের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।

শিশুদের প্রভাবিত করতে পারে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে তাদের শারীরিক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক ও কল্যাণধর্মী বিষয়াবলী এবং তাদের যেকোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে তাদের বয়স এবং বুঝার ক্ষমতা অনুযায়ী তাদের চিন্তাভাবনা ও মতামতকে বিবেচনায় আনতে হবে। শিশুর সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতকরণে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা।

বিজ্ঞাপন

অধিকারের সাথে জড়িত থাকে দায়বদ্ধতা। তবে শিশুর অধিকার রক্ষার দায়িত্ব সরকারের একার নয়। এ দায়িত্ব শিশুদের সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত প্রত্যেকেরই। বাংলাদেশ বেশ কিছু জাতীয় আইন এবং নীতিমালা পাস করেছে যেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রদানের মাধ্যমে সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারগণ দেশে শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও এর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, মর্যাদা রক্ষা এবং শিশুদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা করতে বাধ্য। শিশুর সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতকরণে সমাজকেও প্রস্তুত করতে হবে। শিশুদের সুরক্ষা এবং তাদের পূর্ণাঙ্গ বিকাশের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই একটি আলোকিত প্রজন্ম গঠন সম্ভব।

লেখক: ডেপুটি ম্যানেজার, এইচ আর অ্যান্ড সেইফগার্ডিং, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন