বিজ্ঞাপন

স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা দখলের পাঁয়তারা

October 5, 2022 | 5:31 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: গঠনতন্ত্রবিরোধী একের পর এক অনিয়ম সংঘটিত হচ্ছে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায়। সদস্যপদে সরকারি কর্মচারী নেওয়ার বিধান না থাকলেও তা নেওয়া হয়েছে, এমনকি তারাও কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছেন। নবাব সলিমুল্লাহ বাহাদুরের বংশধরদের মধ্যে জীবিত কোনো ব্যক্তির জন্য সভাপতির পদ সংরক্ষণের কথা উল্লেখ থাকলেও সেই নিয়ম মানা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ রয়েছে— এসব অনিয়মের সবকিছুই হচ্ছে এতিমখানার বর্তমান প্রশাসক কামরুল ইসলামের ইন্ধনে। এতিমখানার আগামী ১০ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিধি মোতাবেক ওই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি বলে অভিযোগ সংক্ষুব্ধদের। ফলে নির্বাচন বাতিলের জন্য  প্রতিষ্ঠানটির আজীবন সদস্যরা সমাজসেবা অধিদফতরে আবেদনও করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে— গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাধারণ সভার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। তাছাড়া গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ঝ-এর ধারা ১ (গ) মোতাবেক নির্বাচন কমিশন গঠনের পর সমাজসেবা অধিদফতরকে অবহিতকরণের কথা বলা থাকলেও তা কোনোপত্রের মাধ্যমে অবহিত করা হয়নি।

গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ চ-এর ধারা-৩ মোতাবেক কাযনির্বাহী পরিষদ গঠনে সভাপতি পদে নবাব সলিমুল্লাহ বাহাদুরের বংশধরদের মধ্যে জীবিত কোনো ব্যক্তির জন্য সভাপতির পদ সংরক্ষণের কথা উল্লেখ থাকলেও জীবিত বংশধরদের অবহিত না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

এক্ষেত্রে সাধারণ সদস্যদের অবহিত করতে কোনো ধরনের পত্র বা নোটিশ দেওয়া হয়নি। এমনকি এতিমখানার গঠনতন্ত্র মোতাবেক আজীবন সদস্য অন্তর্ভুক্তি করা হয়নি। তাছাড়া আজীবন সদস্য হওয়ার জন্য অনেকে আবেদন করলেও তাদের আবেদন কোনো ধরনের ত্রুটি না থাকা সত্ত্বেও বাতিল করা হয়েছে। যা গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ঙ (ধারা-১) এর স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। এসব আবেদনকারী পরবর্তীতে আজীবন সদস্যপদ লাভের জন্য নির্বাচনী তফসিল মোতাবেক গত ৭ সেপ্টেম্বর ও ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিশন বরাবর আপিল করলেও কমিশন তা খারিজ করে দেয়।

তাছাড়া যেসব আজীবন ও সাধারণ সদস্য করা হয়েছে তাদের অধিকাংশ সদস্যই সই জালিয়াতি এবং ভুয়া সদস্য। এসব ভুয়া সদস্যের মধ্যে রিকশাচালক, কাপড় সেলাইকারী এবং জুতার দোকানের কর্মচারী রয়েছেন। এমনকি সদস্যদের মধ্যে ভাড়াটিয়া ও বাসের হেলপারও রয়েছেন। এছাড়া সরেজমিন যাচাই না করেই অনেকে আজীবন সদস্য করা হয়েছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে এরইমধ্যে বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এমনকি একাধিক সরকারি কর্মকর্তাও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। যাকে কেন্দ্র করে এতিমখানায় যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এতিমখানার আজীবন সদস্য জয়নাল আবেদীন জামাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এতিমখানার বর্তমান প্রশাসক কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। তিনি স্বার্থান্বেষী একটি মহলকে সুবিধা দিতেই এমন কাজ করছেন। আজীবন সদস্যদের অবহিত না করে নতুন সদস্য নিয়েছেন। সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিধানও মেনে চলেননি তিনি। একটি ষড়যন্ত্রের নির্বাচন করতে চলেছেন তিনি। এখানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সদস্য করা হয়েছে এবং নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা। সবই করেছেন বর্তমান প্রশাসক।’

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সহ-সভাপতি পদে ফরম কিনেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি এতিম খানার একাউন্টস অফিসার এমদাদের বোন জামাই। নারী কেলেঙ্কারির জন্য এতিমখানা থেকে এমদাদের চাকরি চলে যায়। বর্তমান প্রশাসক আসার পর আবার এমদাদ ফের চাকরি ফিরে পান।

সহ-সম্পাদক পদে ফরম কিনেছেন জামাল উদ্দিন টিটু। তিনিও সরকারি কর্মকর্তা। ভূমি মন্ত্রণালয়ে চাকরি করছেন তিনি। কোষাধ্যক্ষ পদে ফরম কিনেছেন শহীদুল ইসলাম। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নায়েম’এ (জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি) চাকরি করেন তিনি। এছাড়া সদস্য পদের জন্য ফরম কিনেছেন নুরুন্নবী খন্দকার। তিনিও একজন সরকারি কর্মকর্তা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্থাপন শাখায় চাকরি করছেন তিনি।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

জানা গেছে, এতিমখানার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো সরকারি-কর্মকর্তা কর্মচারী সাধারণ ও আজীবন সদস্য হতে পারবেন না। নির্বাচনে অংশ নেওয়া তো দূরের কথা। এতিমখানা পরিচালিত হবে সাধারণ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদ গঠনের মাধ্যমে। অথচ সরকারি কর্মকর্তাদের এতিমখানার সদস্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন প্রশাসক।

এতিমখানার আজীবন সদস্যদের অভিযোগ, এতিমখানার নিয়ম অনুযায়ী কোনো এতিমের বয়স ১৮ পার হয়ে গেলে সেখানে আর কেউ থাকতে পারবেন না। অথচ অনেকে ছিলেন যাদের বয়স ২৮ থেকে ৩০ হয়েছে। এরকম একজন ছিলেন যার নাম হারুন। নানারকম বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। নেশা করে বাইরের বখাটেদের এতিমখানার ভেতরে নিয়ে রাত কাটাতেন তিনি। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা হতো। বর্তমান প্রশাসক আসার পর হারুনকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। হারুন কিছু দিন কারাভোগ করে বেরিয়ে আসেন। এরপর আবার সেই হারুনকেই নতুন সদস্য করা হয়েছে এবং তিনি নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছেন। এ সবের উদ্দেশ্যে হচ্ছে সলিমুল্লাহ এতিমখানাকে দখলে নেওয়া।

বিজ্ঞাপন

এ সব অভিযোগের বিষয়ে সলিমুল্লাহ এতিমখানার প্রশাসক কামরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সারাবাংলা/ইউজে/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন