বিজ্ঞাপন

কৈশোরের স্মৃতি চিত্রমালা সাঁতাও

October 21, 2022 | 6:19 pm

আহমেদ জামান শিমুল

মানুষের বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে কৈশোর বড় ভূমিকা রাখে। অনেকের ক্ষেত্রে তো কৈশোরে ঘটা কোনো ঘটনা, আচরণ, পাওয়া না পাওয়ার গল্প জীবনের পথ নির্ধারণ করে দেয়। আর নির্মাতা খন্দকার সুমনের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলেছে তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ‘সাঁতাও’-এ।

বিজ্ঞাপন

লালমনিরহাটের তিস্তা বাজারে বেড়ে উঠা এ নির্মাতার বাবা একজন কৃষি কর্মকর্তা ছিলেন। যার সুবাধে তিনি কৃষকদের কোলেই বড় হয়েছেন। খুব কাছ থেকে কৃষি ও কৃষকদের দেখেছেন। তাদের গায়ে লেগে থাকা যে মাটির গন্ধ তা এখনও তার মস্তিষ্কে গেঁথে রয়েছে। এ ঘ্রাণ তিনি এখনও খুঁজে ফেরেন। যার কারণে কৃষকের সংগ্রামী জীবন, নারীর মাতৃত্বের সার্বজনীন রূপ এবং সুরেলা জনগোষ্ঠীর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নায় আবর্তিত হয়েছে ছবিটির কাহিনি।

‘সাঁতাও হচ্ছে আমার কৈশোরের স্মৃতির চিত্রমালা। দেখা গেছে অবিরাম বৃষ্টির কারণে গৃহবন্দী হয়ে আছি। হয়তো বাইরে খেলতে যাবো, কিন্তু পারছি না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি কখন বৃষ্টি থামবে। কিন্তু টানা বৃষ্টি হতেই থাকে। ওই সময়ের যে অনুভূতিগুলো তা নিয়ে সাঁতাও তৈরি হয়েছে,’— ছবির গল্প ভাবনায় ব্যক্তিজীবনের প্রভাব নিয়ে সুমন।

বিজ্ঞাপন

এ নির্মাতা আরও বলছিলেন, ‘আমি গ্রামেই বড় হয়েছি। আমার পড়াশোনার শুরু পাটগ্রামে। আমি কৃষি ক্ষেতে ঘুরে বেড়াতাম। লোকগুলো আমার পরিচিত হওয়ায় তাদের কাছে আলাদা আদর পেতাম। এধরনের প্রভাব হয়তো আমার মধ্যে কাজ করে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কৃষকদের বানিয়েছি এমন না। আমি নিজেও প্রান্তিক মানুষ। কোনোভাবে কচুরিপানার মতো ভেসে ঢাকা শহরে চলে এসেছি। ওই যে শিকড় ছুটে যাওয়ার কষ্টটা অনুভূব করি বলেই, এর প্রভাব আমারও ভিতর কাজ করে।’

এমন নানা অনুভূতির কাহিনি ‘সাঁতাও’ ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া’, গোয়া উৎসবের ৫৩তম আসরে মনোনীত হয়েছে।গণঅর্থায়নে নির্মিত ছবিটি ‘সিনেমা অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’ বিভাগে প্রদর্শিত হবে। উৎসবটি চলবে ২০ থেকে ২৮ নভেম্বর। পরিচালক ও তার দল ২৩ নভেম্বর ভারতে যাবেন এতে অংশ নিতে।

বিজ্ঞাপন

এ ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আইনুন পুতুল ও ফজলুল হক। এর গল্পে দেখা যাবে, গ্রামের কৃষক ফজলু বিয়ের পর বুঝতে পারে নতুন সংসারে পুতুল একাকিত্ব অনুভব করছে। পুতুলের একাকিত্ব দূর করতে ফজলু একটি গাভী কিনে আনে। পুতুল তার সংসারে নতুন সঙ্গী পেয়ে বাবার বাড়ি ছেড়ে আসার কষ্ট গুলো কিছুটা ভুলতে শুরু করে। এই দিকে নদীর উজানে একের পর এক বাঁধের কারণে ভাটি অঞ্চল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন প্রতিকূল পরিবেশে ফজলুর মত কৃষকদের কৃষি কাজে নানান সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়। অবিরাম বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢল এসে উপচে না পড়া পর্যন্ত বাঁধগুলোর দরজা বন্ধ রাখা হয়। আবার বাঁধের দরজাগুলো খুলে দিলে আটকে থাকা বিশাল জলধারা নদীতে প্রবাহিত হতে শুরু করে। নদীর গভীরতা কম থাকায় হঠাৎ প্রবাহিত জলধারা নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়ে পশু-পাখিসহ জনজীবনে অভিশাপ বয়ে আনে। নদীর এমন বিরূপ আচরণে ফজলু এবং পুতুলের সুখি সংসার বিষাদময় হয়ে উঠে।

আইডিয়া এক্সচেঞ্জের ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন শরিফ উল আনোয়ার সজ্জন। পরিচালনার পাশাপাশি কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন খন্দকার সুমন। সম্পাদনা, রং-বিন্যাস, এফেক্ট ও টাইটেল, সাউন্ড ডিজাইন ও সাউন্ড মিক্সিং করেছেন সুজন মাহমুদ। শব্দ গ্রহণে ছিলেন নাহিদ মাসুদ। চিত্রগ্রহণে ছিলেন সজল হোসেন, ইহতেশাম আহমদ টিংকু ও খন্দকার সুমন। আবহ সংহীত করেছেন মাহমুদ হায়াৎ অর্পণ। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কামরুজ্জামান রাব্বী, লায়লা তাজনূর সাউদী, লিমা হক। শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন রবি দেওয়ান। পোশাক পরিকল্পনায় ছিলেন আফ্রিনা বুলবুল। নৃত্য পরিচালনা করেছেন ফাহিম রায়হান। রূপসজ্জা করেছেন ফরহাদ রেজা মিলন ও পোস্টার ডিজাইন করেছেন সাজ্জাদুল ইসলাম সায়েম।

পুতুল ও ফজলুল ছাড়াও ‘সাঁতাও’-এর অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন মো. সালাউদ্দিন, সাবেরা ইয়াসমিন, স্বাক্ষ্য শাহীদ, শ্রাবণী দাস রিমি, তাসমিতা শিমু, মিতু সরকার, ফারুক শিয়ার চিনু, আফ্রিনা বুলবুল, রুবল লোদী, কামরুজ্জামান রাব্বী, আব্দুল আজিজ মন্ডল, বিধান রায়, জুলফিকার চঞ্চল, বিনয় প্রসাদ গুপ্ত, সুপিন বর্মণ, রেফাত হাসান সৈকত, আব্দুল্লাহ আল সেন্টু, আলমগীর কবীর বাদল, রবি দেওয়ান, দীনবন্ধু পাল, হামিদ সরকার, মোঃ হানিফ রানা, আকতার হোসেন, আজিজুল হাকিম শিউস, সাইফুল ইসলাম লিটন, রাসেল তোকদার, মজনু সরকার, আবু কালাম, সিদ্দীক আলী, সুজন মাহমুদ, তাহসিনা আকতার তন্বী, নিশাত তাহিয়াত মিমন এবং তিস্তাবাজার এলাকাবাসী।

সম্প্রতি ছবিটি বিনা কর্তনে সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি এটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন