বিজ্ঞাপন

এসির তাপমাত্রা ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি বাড়ালে বিদ্যুতের চাহিদা কমবে

October 22, 2022 | 7:11 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: এসি ব্যবহারের সময় তাপমাত্রা চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি বাড়ালে শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগ বিদ্যুতের চাহিদা কমানো সম্ভব। এ জন্য টেকসই নগর গড়তে ও বিদ্যমান বিদ্যুৎ সংকট কমাতে চাই এসি ব্যবহারের চাহিদা ব্যবস্থাপনা ও নীতিমালা।

বিজ্ঞাপন

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট আইপিডির নগর পরিকল্পনা বিষয়ক এক সংলাপে বিশেষজ্ঞরা এ অভিমত জানিয়েছেন।

শুক্রবার (২১ অক্টোবর) ভার্চুয়ালি আয়োজিত আইপিডি নগর সংলাপের মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ভবনে এসি ব্যবহারজনিত বিদ্যুৎ চাহিদা ও নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি টেকসই ভবন ও শহর বিনির্মাণে করণীয়। নগর সংলাপে আইপিডি’র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত পরিকল্পনাবিদ মো. রেদওয়ানুর রহমানের গবেষণার সারাংশ উপস্থাপন করেন আইপিডির নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রয়োজনে এসির ব্যবহার বেড়েই চলেছে যা নগর তাপদ্বীপ তৈরি করছে এবং পরিবেশের প্রভূত ক্ষতি করছে। অথচ কার্যকর নগর পরিকল্পনা, ইমারত বিধিমালা এবং এসি ব্যবহারের সঠিক নীতিমালা থাকলে এসির ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ এর উপর চাপ বহুলাংশে কমানো যেত।

বিজ্ঞাপন

শুধু ঢাকা শহরেই প্রতি বছর এসির ব্যবহার ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে এবং সারা দেশের ব্যবহৃত এসির সিংহভাগই ঢাকা শহরে ব্যবহৃত হচ্ছে। একইসঙ্গে নগর এলাকায় ধূসর কাঠামো বেড়ে যাওয়াতে বিগত কয়েক দশকে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে তাৎপর্যপূর্ণভাবে যা পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য প্রভূত হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অধ্যাপক আদিল বলেন, ‘এসি ব্যবহারের সময় তাপমাত্রা চার-পাঁচ ডিগ্রী বাড়িয়ে ২০-৩০ ভাগ বিদ্যুৎ চাহিদা কমানো সম্ভব। অনুরূপভাবে সঠিক পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে এসির ব্যবহার সীমিত করবার মাধ্যমে সারা দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা বহুলাংশে কমানো সম্ভব। অন্যথায় শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব বাড়িয়ে দেশের বিদ্যমান বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলা করা সম্ভবপর হবে না বলে মন্তব্য করা হয় আইপিডির পক্ষ থেকে।’

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট এর বরাত দিয়ে বলেন, ‘সারা বিশ্বেই এসি ব্যবহারের কারণে বিদ্যুৎ চাহিদা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। পাশাপাশি নগরে ভবনের আকার-আয়তন বাড়বার কারণে নগরের তাপমাত্রা বাড়ছে যার রাশ টেনে ধরা প্রয়োজন।’

বিজ্ঞাপন

বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)এর প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নগর এলাকায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লটের মধ্যে যে উঁচু ভবনগুলো নির্মিত হচ্ছে, সেখানে আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা না থাকাতে মানুষ এসি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত ব্লক ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে উন্মুক্ত স্থান ও ভবনে আলো বাতাসের প্রবাহ বাড়িয়ে দিয়ে এসির ব্যবহার হ্রাস করে বিদ্যুতের উপর চাপ কমানো সম্ভব।’

সংলাপে অংশ নিয়ে পরিবেশবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এসির নিরবিচ্ছিন্ন ব্যবহার নিশ্চিত করতে অনেকেই তেলনির্ভর জেনারেটর চালানো চালাচ্ছেন, যা শব্দ দূষণ-বায়ূ দূষণ করবার মাধ্যমে সামগ্রিক পরিবেশ দূষণের কারণ। এসি ব্যবহার সমাজে এক ধরনের বিদ্যুৎ বৈষম্য তৈরি করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এসি ব্যবহারের অচ্ছেদ্য চক্র থেকে বের না হতে পারলে আমাদের বিদ্যুত সংকটের টেকসই সমাধান হবেনা।’

স্থপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক শাহরিয়ার ইকবাল রাজ বলেন, ‘যেসব ভবনে এসি’র চাহিদা বেশি, সেখানে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা করা গেলে বিদ্যুৎ চাহিদা কমে। এছাড়া ভবনের ছাদে–দেয়ালে ও অভ্যন্তরে বিভিন্ন নির্মাণ কৌশল ব্যবহার করে টেকসই ভবন নির্মাণ করা সম্ভব।’

প্রকৌশলী মো. মামুন ফেরদৌস বলেন, ‘এসি সংক্রান্ত নীতিমালা না থাকবার কারণে ভবন নির্মাতাদের চাপের কারণে ২৪ ডিগ্রী তাপমাত্রার এসি সিস্টেম স্থাপন করা যাচ্ছে না। অথচ এটা করতে পারলে ভবনের ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ চাহিদা কমানো সম্ভব হত। পাশাপাশি আমাদের নির্মাণ বিধিমালায় এনার্জি এফিসিয়েন্সি রেশিও (ইইআর) সংক্রান্ত নীতিমালা না থাকায় ভবনগুলো এনার্জি সাশ্রয়ী হিসেবে নির্মাণ করা যাচ্ছে না।’

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনাবিদ ও উন্নয়ন গবেষক মো. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ‘ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র’সহ অনেক দেশেই এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ২৫-২৬ ডিগ্রীর নিচে নামতে না দেবার বিষয়ে নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। আমাদের দেশেও এ ধরনের নীতি প্রণয়ন ও কার্যকরী বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চাহিদা কমানো সম্ভব হবে। সরকারি বিভিন্ন ভবন নির্মাণের সময় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ভবন নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’

নগর সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন, পরিকল্পনাবিদ ড. চৌধুরী মোঃ জাবের সাদেক, প্রকৌশলী জামিল আহমেদ চৌধুরী, জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ড. ফরহাদুর রেজা।

সারাবাংলা/আরএফ/ইআ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন