বিজ্ঞাপন

কচুরিপানা ও বর্জ্যের জৈব সার বাঁচাবে ৮ হাজার কোটি টাকা!

October 25, 2022 | 9:42 pm

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রকৃতিতে সহজলভ্য কচুরিপানা এবং রান্না ঘরের বর্জ্য দিয়ে জৈব সার তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এটি করা গেলে বছরে রাসায়নিক সারে দেওয়া ভর্তুকি থেকে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। গত ১১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস)। এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রী, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব, পরিকল্পনা সচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিবের কাছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ কি-না, কিংবা বৈজ্ঞানিকভাবে কতটা সফল হবে সেগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলা যাবে। তবে এর সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয় জড়িত। তারা যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনো প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় আমরা দেখব।’

টিএমএসএস’র প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এদেশের নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওড়, ডোবা-নালা, গর্ত ইত্যাদিতে কচুরিপানা, সবুজ তরুলতা জৈব সারের উত্তম কাঁচামাল। এছাড়া প্রায় ৩ কোটি পরিবারের রান্না ঘরের বর্জ্য (তরকারির খোসা) যথাযথ ব্যবহারের অভাবে দেশটি বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। এই বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় বায়ু দূষিত হচ্ছে, বিভিন্ন অনুজীব ও কীট পতঙ্গের আধিক্য হচ্ছে। সেইসঙ্গে রোগ বালাই বাড়ছে। ফলে ব্যয় বাড়ছে চিকিৎসা খাতে।

সংগঠনটি আরও জানায়, রাসায়নিক সারে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে বছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা। ভুর্তকিবিহীন সময়ে কৃষক রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরশীল না থেকে দেশের ভেতরে জলাশয়, জলাভূমি থেকে কচুরিপানা ও বায়োমাস (তরকারির খোসা) তুলে কম্পোস্ট সার তৈরি করতো। ফলে খাল-বিল, নদী-নালার পানিতে মানুষ গোসল করতো এবং পানি নানা কাজে ব্যবহার করতো। আধুনিককালে কম্পোস্ট সার না করায় ডোবা, খাল-বিল, নদী-নালা কচুরিপানায় ভরে যাচ্ছে। নদীতে নাব্য ও স্রোত না থাকায় বছরের পর বছর কচুরিপানা স্তরে স্তরে পচে পানি নষ্ট হচ্ছে, জলজ মাছ ও প্রাণির বাস অযোগ্য হয়ে জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। অথচ সবুজে বেষ্টিত আগাছা, কচুরিপানা এবং কিচেন বায়োমাস ব্যবহার করলে রাসায়নিক সার আমদানিতে ২৮ হাজার কোটি টাকার স্থলে ২০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়াই যথেষ্ট হবে।

বিজ্ঞাপন

টিএমএসএস-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. হোসনে-আরা বেগমের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক পরিবারের জন্য রান্না ঘরের বর্জ্য পচানেরা মাধ্যমে কম্পোস্ট সার প্রস্তুত বাধ্যতামূলক করতে হবে। এছাড়া সর্বস্তরে এ বিষয়ে অনুশাসন জোরদার করতে হবে। প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের বা পৌরসভার ওয়ার্ড মেম্বার, কমিশনার এখতিয়ারভুক্ত নদী নালা, ডোবা, খাল-বিলের আগাছা, কচুরিপানা পরিষ্কার করে তা দিয়ে কম্পোস্ট সার প্রস্তুত করা বাধ্যতামূলক করতে হবে, যাতে জলাশয়ের পানি দেখা যায়। কিচেন বায়োমাসের গর্ত খনন বা নড়াচরাযোগ্য পিট বা চৌবাচ্চ, চেম্বার বাবদ প্রত্যেক পরিবারকে ৩০০ টাকা হিসেবে ৩ কোটি পরিবারকে ৯০০ কোটি টাকা (এককালীন) দেওয়া দরকার। খাল-বিল, নদী-নালা ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে স্বীয় বায়োমাস ও কচুরিপানা দিয়ে কম্পোস্ট সার প্রস্তুত করার জন্য স্থানীয় সরকার এবং এনজিওদের অনূকুলে ৪ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে।

এটা বাস্তবায়ন হলে পরিবারের গৃহিনীসহ প্রান্তিক বেকার মানুষদের কর্মসংস্থান হবে, রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে উপাদেয় জৈব সার সৃষ্টি হবে, মাটির স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটবে, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে ২৮ হাজার কোটি টাকার স্থলে ২০ হাজার কোটি টাকার রাসায়নিক সার আমদানিতে ভর্তুতি দিলেই চলবে। বায়োমাস এবং কচুরিপানার অপরিকল্পিত পচন দিয়ে দেশে পানির পচন হবে না। জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হবে না। পানি পচনের জন্য শুধুমাত্র শিল্প কারখানা মালিকদের হেনস্থা করতে হবে না। ব্যবসায় খরচ কমবে, বেকারত্ব কমবে, তিন কোটি পরিবার সরকারের প্রতি অনুগত এবং কৃতজ্ঞ থাকবে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন