বিজ্ঞাপন

‘প্রাণের দামে দেশ কিনেছি’

December 16, 2017 | 8:27 pm

জান্নাতুল ফেরদৌসী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

চারপাশে লাল-সবুজ। কেউ ফ্রক, কেউ সালোয়ার-কামিজ, কেউ-বা পরেছে পাঞ্জাবি। অনেকেই আবার পরে এসেছে শাড়ি। কিন্তু সব পোশাকের রং লাল কিংবা সবুজ। কারো বয়স তিন-চার, কেউ বড়জোর আট-নয়। এসেছে কিশোর-কিশোরীও। শিশু-কিশোর ছাড়াও অনেকেই এসেছে বাবা-মায়ের কোলে চরে। কারো কারো হাতে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। কারো গালে আল্পনা বা কপালে ব্যান্ডানা।

বলছিলাম আগারগাঁয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বিজয় দিবস উদ্‌যাপনে আসা শিশু-কিশোরদের কথা। দেশ আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ক্ষুদে শিশুদের এই আগ্রহ আর এখানকার পরিবেশ জানান দিচ্ছে— ‘অনেক ভালবাসি প্রিয় দেশটাকে’।

বিজ্ঞাপন

দৃষ্টিনন্দন ভবনের সামনের একতলা সিঁড়ি বেয়ে নিরাপত্তায় রাখা আর্চওয়ে পেরিয়েই বামে ভাস্কর্য অঙ্গন। সকাল ১০টা থেকে এখানে শুরু হয় বিজয় উৎসব। মঞ্চের চারপাশে মেঝেতে বসে আছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আর স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোররা। পাশে বসে আছেন অভিভাবকরাও।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ১২ বছরের লিথিকে মঞ্চে হাত ধরে উঠতে সাহায্য করলেন তার দাদি আয়েশা বেগম। হারমনিয়াম বাজাচ্ছেন মা সিনথিয়া, একটা স্ট্যান্ডে ভর দিয়ে দাঁড়ানো লিথি যখন গেয়ে উঠল— ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকায় মাথা!’ এক অসাধারণ সুরের ঝঙ্কারের আবেশ ছড়িয়ে পড়ল চারপাশ। সবাই তখন মন্ত্রমুগ্ধ। মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে ভিডিওধারণ করছিলেন মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। তার দুই চোখে তখন কান্না।

পরে পরিচয় জানতে চাইলে সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বললেন, ‘পেশায় চিকিৎসক আমি। কিন্তু আমার ছেলেটিও অটিস্টিক। এই মেয়েটির গান শুনে আনন্দে-গর্বে কেঁদেছি। দেশকে কতটা ভালবাসলে এমন সুন্দর করে গান গাইতে পারে, বলেন?’

বিজ্ঞাপন

লিথির মতো সোসাইটি ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব অটিস্টিক চিলড্রেন-এর শিশু-কিশোরদের দেশের গান, কবিতা আর নাচ— মন কেড়েছে সব দর্শকের। এরপর একে একে দেশাত্মবোধক গান, কবিতা, গল্প আর নাচ নিয়ে মঞ্চে আসে কল্পরেখা, খেলাঘর, আলোর ধারার স্কুল, বধ্যভূমি সন্তান দল, মৈত্রী শিশু দল, নৃত্যজন ও ইউসেফ স্কুলের শিশু-কিশোররা। অনুষ্ঠান চলার পুরো সময়টাতেই পাশেই বসে ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মুফিদুল হক ও তারেক আলী।

প্রতি বছরের এই আয়োজন সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সদস্য সচিব তারিক আলী জানান, ‘প্রাণের দামেই দেশ কিনেছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে অনেকদিন দেশের মানুষের কাছে পৌঁছতে পারিনি আমরা। অনেক মানুষেরই তা অজানা। এই দৈন্য থেকে বেরিয়ে আসতেই আমাদের এসব আয়োজন। আমাদের উদ্দেশ্য হলো নতুনপ্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধকে জানবে। তারা পরমতসহিঞ্চু, অসাম্প্রদায়িক ও বিজ্ঞানমনস্ক হবে। ’

বিজ্ঞাপন

নতুনপ্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতি বছরের আয়োজনে এবার ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে বড় পরিসরের গ্যালারি। যেখানে বাবা-মার হাত ধরে সন্তানরা এসেছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে। ১৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টিকেট বিক্রি হয় দুই হাজারের বেশি।

গ্যালারিতে দেখা গেল বেশ কজন বিদেশিকেও। জার্মান থেকে আসা ফটোজার্নালিস্ট হ্যারি মেইনার গ্যালারি ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন। কেন এসেছেন জানতে চাইলে সারাবাংলাকে বললেন, ‘বন্ধুদের কাছে জেনেছি খুব জাকজমকভাবে বাংলাদেশে ১৬ ডিসেম্বর উদ্‌যাপন করা হয়। এই দিনের ছবি তুলতেই এসেছি। ফ্রি ল্যান্সার ফটোসাংবাদিক আমি। শুক্রবার রাতে পৌঁছেই ছবি তোলা শুরু করি। এমন রঙিন শহর। এত মানুষ রাস্তায়। খুব ভাল লাগছে। অনেক ছবি তুলেছি। এখানকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সংগ্রহশালা সত্যিই অসাধারণ।’

সারাবাংলা/জেডএফ/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন