বিজ্ঞাপন

‘অর্থ পাচারকারীদের তালিকা প্রকাশ করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে’

November 5, 2022 | 4:24 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করার চেয়ে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা প্রকাশ করা বেশি জরুবি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, যারা অর্থ পাচার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছেন, তারা জানেন কারা এই দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার করছেন। সুতরাং প্রতিবেদন প্রকাশ করার পাশাপাশি অর্থ পাচারকারীদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের ধরে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৫ নভেম্বর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ইআরএফ ডায়ালগ’-এ সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস. এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি এম শফিকুল আলম।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘দেশে কেনো ডলার সংকট এটা আমি, আপনি সবাই জানি। যারা বলছেন আন্ডার ইনভয়েসিং হচ্ছে, ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে, কারা এটা করছেন, তাদের স্পেসিফিক (নির্দিষ্ট করে) ধরে ফেললেই হয়। এ রিপোর্ট যারা দেয় তারা স্পেসিফিক ধরে ফেলুক। আমরাও চাই যারা পাচারকারী তাদের ধরা উচিত। কথার কথা বলার চেয়ে আমার মনে হয় অ্যাকশনে যাওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি আন্ডার ইনভয়েসিং হচ্ছে, ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে, অর্থ পাচার হচ্ছে। কারা পাচার করছে আমি আর ওখানে যেতে চাই না। যদি ব্যবসায়ীরা অর্থপাচার করে থাকে, ম্যাকানিজমটা আপনাদের সামনেই আছে। পাচার হওয়ার রিপোর্ট যদি আসে, তাহলে কে পাচার করেছে সে খবরও তাদের কাছে আছে। তাদের উচিত পাচারকারীদের ধরা এবং পানিসমেন্টে নিয়ে আসা।’

বিজ্ঞাপন

জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই অর্থ পাচারকারীদের ধরে তাদের শাস্তির আওতায় আনা দরকার এবং এদের শেষ করা দরকার। এই যে বলার জন্য বলা মুখরোচক কথা বলা, এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানো উচিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রিসার্স (গবেষণা) করেন তাদের কেউ আইএমএফ-কে রিপ্রেজেন্ট করেন, কেউ ওয়াল্ড ব্যাংকের রিপ্রেজেন্ট করেন। সুতরাং এখানে কে কী বলল, তার থেকে বড় কথা ইন্ডাস্ট্রি সারভাইভ করবে কি না। এখন এমনিতেই আমাদের জ্বালানি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। বড়, ছোট সব ব্যবসায়ী সমস্যায় রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে সুদের হার বাড়ালে অবস্থাটা কোথায় যাবে। আমি মনে করি না সুদের হার বাড়িয়ে আমরা সমস্যার সমাধান করতে পারবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকা সুদের হার বাড়িয়েছে ডলার আরও শক্তিশালী করার জন্য। যেন আমাদের মতো ছোট-খাটো দেশগুলো আরও বিপদে পরি। সুতরাং ওদের ফর্মুলা আমাদের দেশে চলবে বলে আমার ধারণা নেই। আমি যতটুকু বুঝি, এ মুহূর্তে সুদের হার বাড়ানো ঠিক হবে না। সুদের হার যদি বাড়ানো হয় তাহলে ইন্ডাস্ট্রিগুলো আরও বেশি বিপদে পড়বে। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকের ছয়-নয় সুদের হার যেটা বলছেন- ‘ছয়’ কিন্তু নেই। ব্যাংকগুলো এখন সাত, সাড়ে সাত পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। যেহেতু নিচের লিমিট ছয় নেই, ফলে উপরের লিমিট উঠাতে চাচ্ছি না। উপরের লিমিট উঠে গেলে ইন্ডাস্ট্রিগুলো সক্ষমতা হারাবে। ইনফ্লেশন কন্ট্রোল করার জন্য কিন্তু আমাদের উৎপাদন বাড়ানো দরকার। জ্বালানির ওপর সরকার যদি আমাদের সাবসিডারি বাড়িয়ে দেয় তাহলে ইনফ্লেশন কমানো সম্ভব।’

বিজ্ঞাপন

আইএমএফের ঋণের বিভিন্ন শর্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের ফরেন কারেন্সির দরকার আছে, গ্যাপটা মিনিমাইজ করার জন্য। তার অর্থ এ নয়, আমাদের সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসতে হবে। তাদের ঋণে তো তারা শর্ত দেবেন। তবে যে শর্ত আমেরিকার জন্য প্রযোজ্য হবে, একই শর্ত বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে কি না। যে শর্ত ভারতের জন্য প্রযোজ্য হবে, একই শর্ত বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে কি না। সেই সক্ষমতা আমাদের থাকতে হবে তাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করার।’

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুৎ আমাদের জন্য বড় ইস্যু। কোভিডের সময় শিল্পের উৎপাদন অব্যাহত রাখার কারণে আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল। জ্বালানি গ্যাসের জন্য আমরা সাফারিং করছি। আমরা যদি সাপ্লাই দিতে না পারি তাহলে তো বায়াররা আমাদের অর্ডার দেবে না। বায়াররা যদি ফিল করে বাংলাদেশে অর্ডার দেওয়ার পর গ্যাস-বিদ্যুৎ থাকবে না, এ জন্য প্রোডাক্ট পাবো না, তাহলে তারা বাংলাদেশে আসবে না। বাংলাদেশের বিজনেসটাও নিয়ে যাবে। যদি একবার সেটা নিয়ে যায়, তবে ফিরিয়ে আনা কঠিন। আমি মনে করি এ জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিজেলের দাম বেড়েছে, আমরা চিন্তা করেছিলাম লোডশেডিং কমবে, কিন্তু সেটা হয়নি। সেজন্য কথা-বার্তা চলছে। আমরা চেষ্টা করছি নতুন প্রাইস ঠিক করার। এক্ষেত্রে আমাদের সরকারেরও এগিয়ে আসতে হবে। এখানে ভর্তুকি দিচ্ছে, কিন্তু তার থেকে বেশি আমরা ট্যাক্স দিচ্ছি। আমি মনে করি বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বালানির ওপর রাজস্ব কমিয়ে নেওয়া এবং দাম একটু বাড়ানো যেতে পারে। যদি শিল্পে বিদ্যুৎ দেওয়া না হয়, তাহলে এখানে বড় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/ইআ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন