বিজ্ঞাপন

সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে ঘরে ফিরব না: ফখরুল

November 7, 2022 | 7:35 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার শপথ নিয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে সোমবার (০৭ নভেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত উন্মুক্ত আলোচনায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ শপথের কথা বলেন।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। আমাদের অনেকে লোক গ্রেফতার হচ্ছেন, নিহত হচ্ছেন, জেলে যাচ্ছেন। গণতন্ত্রকে পেতে হলে, গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে হলে আমাদেরকে আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।’

‘আসুন, ৭ই নভেম্বর আমরা এই শপথ গ্রহণ করি যে, আমাদের লক্ষ্য অর্জন না করে, এই সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে না এনে, আমাদের অধিকারকে ফিরিয়ে না এনে আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৭ই নভেম্বর দিনটি আমাদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেন? এই দিনটিতে দ্বিতীয়বার আমরা স্বাধীনতাকে সংহত করেছিলাম। এই ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতা এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে বের করে নিয়ে এসে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল।’

‘সেই সঙ্গে যে নতুন এক অধ্যায় সূচিত হয়েছিল, সেটি ছিল সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের অধ্যায়, একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বার অধ্যায়। আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান সেই কাজটিই মাত্র চার বছরের মধ্যে করে দেখিয়েছিলেন। তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, তিনি একটা মুক্ত অর্থনীতি দিয়েছিলেন, এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় নিয়ে এসেছিলেন। মানুষের বাকস্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকারগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জিয়াউর রহমান স্বল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র জাতিকে একটা নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই স্বপ্ন হচ্ছে একটি জাতি হিসেবে তৈরি হবার স্বপ্ন। তিনিই প্রথম এই দেশে কৃষি বিপ্লব এনেছিলেন, খাল কেটেছিলেন। পথে-পথে, গঞ্জে-গঞ্জে, গ্রামে-গ্রামে তিনি হেঁটে বেরিয়েছিলেন মানুষকে উজ্জীবিত করার জন্য। একই সঙ্গে কলে-কারখানায় উৎপাদনের নীতি গ্রহণ করেছিলেন। দুর্নীতি হটাও যে আন্দোলন, সেই আন্দোলন তিনি শুরু করেছিলেন।’

‘কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের। যে শত্রুরা ৭ই নভেম্বরের আগে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল, সেই শত্রুরাই তাকে হত্যা করেছিল ১৯৮১ সালের ৩১ মে। তাই বলে শহিদ জিয়ার যে দর্শন, শহিদ জিয়ার যে আদর্শ, সেই আদর্শকে তারা ধ্বংস করতে পারেনি, হত্যা করতে পারেনি। কারণ, তার (জিয়াউর রহমান) যে পতাকা, সেই পতাকা হাতে নিয়ে আমাদের সামনে এসেছিলেন তারই যোগ্য উত্তারাধিকারী, তারই সহধর্মিণী, আমাদের নেত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সেই স্বাধীনতাকে আবার হরণ করা হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আজকের যে সরকার, অনির্বাচিত সরকার জনগণের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে আমাদের ওপর অত্যাচারের স্ট্রিম রোলার চালিয়ে, আমাদের নেতাকর্মীদে হত্যা করে, গুম করে, আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আবার বাংলাদেশকে সেই অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চায়। তাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য আবার আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন সেই শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেই জন্যই ৭ই নভেম্বর স্বাধীনতা রক্ষা করার অঙ্গীকার, সেই জন্যই ৭ই নভেম্বর আমাদের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার অঙ্গীকার।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। সেই আন্দোলনে অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। ভোলার আব্দুর রহিম, নূরে আলাম, নারায়ণগঞ্জের শাওন, মুন্সীগঞ্জের শাওন নিহত হয়েছেন এবং আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই স্বাধীনতার জন্যই তিন দিন, চার দিন ধরে আমাদের লোকেরা পায়ে হেঁটে, ভেঙে, ভেঙে সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। দফা এক, দাবি এক— শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিন এবং নতুন একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার অধীনে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করুন। সেই নির্বাচনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।’

উন্মুক্ত আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, নাজিম উদ্দীন আলম, সাইফুল আলম নীরব, ঢাকা দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এনইউ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন