বিজ্ঞাপন

গৃহকর নিয়ে মেয়র রেজাউলের বিরুদ্ধে অবস্থান সুজনের

November 7, 2022 | 9:26 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে বর্ধিত গৃহকর আদায় নিয়ে দলীয় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। কর আদায়ের নামে ‘জোরজবরদস্তি’ না করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরবাসীর বিভিন্ন সংকট নিয়ে আন্দোলনরত সংগঠন ‘নাগরিক উদ্যোগ’র এক নীতিনির্ধারণী সভায় সাম্প্রতিক গৃহকর ইস্যুতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন।

খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “গৃহকর আদায় নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে। ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন করদাতারা। এই বাড়তি গৃহকর সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করছে। স্বৈরাচার এরশাদ সরকার ‘দ্য সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস’ করেছিলেন। সেই আইন অনুসারে বাড়ি ভাড়ার ভিত্তিতে সিটি করপোরেশন গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ আয়তনের ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের জন্য আন্দোলনে নেমেছে।’

‘আমরা মনে করি, এর ফলে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নগরবাসীর দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। প্রয়োজনে চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি যুক্তিসঙ্গত কর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য মেয়রের প্রতি আমি অনুরোধ করছি। এতে করদাতারা কর দিতে উৎসাহ পাবেন এবং সিটি করপোরেশনের কর আদায়ও বেড়ে যাবে।’

বিজ্ঞাপন

মেয়র রেজাউল দায়িত্ব নেওয়ার আগে ছয় মাস চসিক প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করা সুজন আরও বলেন, ‘শহরের উন্নয়নের জন্য করের প্রয়োজন আছে। কিন্তু শুধু নগরবাসীর ওপর করের বোঝা চাপিয়ে চট্টগ্রাম শহরের মতো একটি বড় শহরের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ শহরকে ব্যবহার করে যারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে উপযুক্ত সার্ভিস চার্জ আদায়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের দৈনন্দিন ব্যয় মেটানোর জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন। করপোরেশনের আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে গৃহকর।’

মেয়রের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নগরবাসী কর দিতে প্রস্তুত। তবে সেটা কোনোভাবেই করদাতাদের অসন্তুষ্ট করে কিংবা জোরজবরদস্তি করে আদায় করা যাবে না। ইতোপূর্বে আরও কয়েকজন মেয়র বাড়ি ভাড়ার ভিত্তিতে কর আদায় করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। আপনি নির্বাচিত নগরপিতা, নগরবাসী অসন্তুষ্টে হোক, এটা নিশ্চয় আপনি প্রত্যাশা করেন না।’

করপোরেশনের কিছু আমলা বর্ধিত গৃহকর আদায়ের মাধ্যমে সুকৌশলে সরকারের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন খোরশেদ আলম সুজন।

বিজ্ঞাপন

নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ এবং মোহাম্মদ হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- রুহুল আমিন তপন, আব্দুর রহমান মিয়া, সাইদুর রহমান চৌধুরী, ছালেহ আহমদ জঙ্গী, নুরুল কবির, সমীর মহাজন লিটন, মো. শাহজাহান, জাহাঙ্গীর আলম, শহীদুল আলম লিটন, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, মো. ওয়াসিম, মনিরুল হক মুন্না।

উল্লেখ্য, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনঃমূল্যায়ন করে বর্ধিত হারে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ গঠন করে আন্দোলনে নামেন সাবেক মেয়র (বর্তমানে প্রয়াত) এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে কর আদায় স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের ওপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে দুই দফা চিঠি দেয় চসিক। এর ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় মন্ত্রণালয়। তখন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘গণহারে গৃহকর বাড়ানো হবে না, শুধুমাত্র করের আওতা বাড়ানো হবে।’

কিন্তু সম্প্রতি পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় শুরু হলে নগরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে পাঁচ বছর পর একই দাবিতে আন্দোলনে নামে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’। ‘গলাকাটা হোল্ডিং ট্যাক্স আইন বাতিল করো/দৈর্ঘ্য-প্রস্থ গুণ করো তার ওপর কর ধরো।’- এই স্লোগান নিয়ে সংগঠনটি গত একমাস ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন