বিজ্ঞাপন

‘বিকেন্দ্রীকরণ না করাই এসডিজির বড় বাধা’

November 13, 2022 | 10:17 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিকেন্দ্রীকরণ না করাই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। এক্ষেত্রে আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিকেন্দ্রীকরণ জরুরী। আরেকটি বাধা হলো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার রাজনীতিকরণ করা। তবে এসডিজিটির সঠিক বাস্তবায়নে তৃণমূলকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড.শামসুল আলম।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৩ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশে এসডিজি স্থানীয়করণ: ত্বরান্বিত করার উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট এই সভার আয়োজন করে। হাঙ্গার প্রকল্পের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

সভায় আরও বক্তব্য দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং শিশু অধিকার সংক্রান্ত সংসদীয় ককাসের ভাইস চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য এ্যারোমা দত্ত এবং প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল বোর্ড অব ডিরেক্টরের চেয়ারম্যান শেরি স্টমবার্গ। এছাড়া সংস্থাটির বোর্ডের ডিরেক্টরসহ সদস্যরাও বক্তব্য দেন।

এ বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, ‘উপর থেকে পরিকল্পনা ও কৌশল তৈরি করা হয়। কিন্তু তা বাস্তবে রূপ নেবে যদি পরিকল্পনাটি আমরা তৃণমূলে নিয়ে যেতে পারি। শুধু এসডিজি না, যেকোনো কিছু তৃণমূলে নিয়ে যেতে না পারলে সুফল পাওয়া যাবে না। সরকার এসডিজি বাস্তায়নে অনেক পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ন্যাশনাল একশন প্ল্যান তৈরি করেছে। হাঙ্গার প্রজেক্ট এসডিজি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। হাঙ্গার প্রজেক্টের সফলতা হচ্ছে সংস্থাটি তরুণদের সংগঠিত করতে পেরেছে। আমি নিজে এটি দেখেছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশিরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বোঝে না। এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আমাদের বিশ্বের কাছে নিজেদের অর্জন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

এ্যারোমা দত্ত বলেন, ‘শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী খুব অল্পতেই তুষ্ট থাকে। সীমিত সম্পদ দিয়েও তারা চমকপ্রদ কিছু করে দেখাতে পারে। আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে যেতে হবে।’

শেরি স্টমবার্গ বলেন, ‘২০০৫ সালে আমি প্রথম বাংলাদেশে আসি। এরপর ২০১৪ সালে আবার বাংলাদেশে আসি। এই ৯ বছরে বাংলাদেশে অসাধারণ পরিবর্তন লক্ষ করেছি। নারী নেতৃত্ব, বাল্যবিয়ে রোধ, পুষ্টি, স্যানিটেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। আমি আশা করি এসডিজি স্থানীয়করণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’

বিজ্ঞাপন

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা এখন একটি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছি। এর থেকে উত্তরণ করতে হলে গ্রাম পর্যায়ে, তৃণমূলে সংগঠিত করতে হবে। আমাদের কাজটা মূলত মানুষকে ক্ষমতায়িত করা, যাতে তারা স্থানীয় পর্যায়ে পরিবর্তনের রূপকার হয়ে উঠতে পারে। আমাদের প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাব্রতীরা স্থানীয় সম্পদ কাজে লাগিয়ে পরস্পরের কাঁধে কাঁধ রেখে সমস্যা সমাধান করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তৃণমূল পর্যায়ে সবাইকে নিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মতো যার যা আছে তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এসডিজি স্থানীয়করণের লক্ষ্যে হাঙ্গার প্রজেক্ট স্বেচ্ছাব্রতীরা স্থানীয় জনগণ, নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সবাইকে যুক্ত করে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করি, কেউই বাদ থাকে না ‘

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এসডিজি স্থানীয়করণ অধিকারবোধ, মালিকানাবোধ এবং সক্রিয় নাগরিকত্ববোধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা একটি বড় বিষয়। সামাজিক দায়িত্ববোধের মতো বিষয় প্রয়োগ করতে হবে। স্থানীয় সরকারে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা ছিল একটি বড় ধরনের ভুল। কারণ, এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার আগে যতটুকু অবদান রাখতে পারত এখন তাও পারছে না ‘

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে দেশের বিভিন্ন আর্থসামাজিক উন্নয়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ভূমিকা ভুলে গেলে হবে না। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে আমরা অনেক সময় ব্যাকগ্রাউন্ড ভুলে যায়। এজন্য পরিসংখ্যান ব্যুরোকে শক্তিশালী করতে হবে। হাঙ্গার প্রজেক্টের কাজটি একটি মডেল, এখানে সরকারি সহায়তা লাগবে।’

বিজ্ঞাপন

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়ছে। স্থানীয় পর্যায়ে প্রচুর টাকা যাচ্ছে। কিন্তু টাকাগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। হাঙ্গার প্রজেক্ট বহুদিন ধরে স্থানীয় পর্যায়ে গুরত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ শুনছে বলে মনে হচ্ছে না। কেউ বুঝারও চেষ্টা করছে না এই কাজের শক্তির জায়গাটা কোথায়।’

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে এসডিজি বাস্তবায়নের ইন্ডিকেটরগুলোতে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো করেছে। বাংলাদেশের এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতীয় নীতি হচ্ছে হোল সোসাইটি এপ্রোচ।’

সারাবাংলা/জেজে/এনএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন