বিজ্ঞাপন

জামায়াতের বিচার শুরু কবে

December 17, 2017 | 8:41 am

আব্দুল জাব্বার খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের তদন্ত তিন বছর আগে সম্পন্ন হলেও এখনো বিচার কাজ শুরু হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতকে একটি অপরাধী সংগঠন সাব্যস্থ করে রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করে।  তারই আলোকে সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। এরপর আইন সংশোধনীর অজুহাতে কেটে গেছে তিনটি বছর।  কবে নাগাদ এর বিচার কাজ শুরু হবে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউই।

এদিকে, রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের পর চার বছরে কেটে গেলেও আপিলে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি সেটিও। আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ছাড়া রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে গেজেট প্রকাশের বিষয়টিও ঝুলে আছে।  কবে নাগাদ আপিল নিষ্পত্তি হবে সেটিও বলা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি জামায়াতের নিবন্ধন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জামায়াতের নিবন্ধন বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।  এখানে একটা জটিলতা আছে।  আপিল বিভাগ রায় না দেয়া পর্যন্ত সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না।’

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘জামায়াতের নিবন্ধনের মামলাটি আপিল বিভাগের চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় আছে। এ বিষয়ে মন্ত্রী যথার্থই বলেছেন। তবে মামলাটি আপিলের কার্য তালিকায় এলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

এতদিনেও কেন আপিল শুনানির জন্য কার্য তালিকায় আসছে না এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটা তো আদালতের বিষয়।’

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-২০১৩ সংশোধন করে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার করার জন্যে পাস করা আইনে অপরাধী ব্যক্তির সঙ্গে সংগঠনকেও যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আইনে সংগঠনের শাস্তি কি তা উল্লেখ করা হয়নি। আইন সংশোধন করে সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার এখনো শুরু না হওয়ায় সংশয় বাড়ছে বিচার প্রার্থীদের৷

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘জামায়াতের মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না শুধু আইন সংশোধনী না হওয়ায়। আমাদের দিক থেকে আমরা প্রস্তুত। আইনটি সংশোধন হলেই বিচার কাজ শুরু হবে। আর আইনটি কেন সংশোধন হচ্ছে না সেটি আইন মন্ত্রণালয় জানে।’

প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘জামায়াতের বিচারের জন্য প্রসিকিউশন টিম সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।  তবে আইন সংশোধনের জন্য এখনই শুরু করা যাচ্ছে না। ’

তিনি বলেন, ‘তদন্ত সংস্থা থেকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা পর প্রসিকিউশন টিম এটি নিয়ে পুরোদমে কাজ সম্পন্ন করেছে। বিচারিক কার্যক্রম শুরু করতে আমরাও তৈরি কিন্তু সংগঠনের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭৩ অ্যাক্ট কিছুটা সংশোধনী আনা দরকার। সেটির জন্যই আমরা অপেক্ষা করছি। ওই আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী ব্যক্তির সাজার কথা বলা আছে কিন্তু সংগঠনের সাজার বিষয়টি উল্লেখ নাই বিধায় বিচার শুরুর আগে আইনটির সংশোধনী দরকার।’

দীর্ঘদিন পরেও জামায়াতের মামলার শুরু না হওয়ায় এক ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক সারাবাংলাকে জানান, ‘প্রায় তিন বছর আগেই এ মামলাটির তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করেছি।  কিন্তু এখনও কেন বিচার শুরু হচ্ছে না সেটি আমাদের জানা নেই।

বিজ্ঞাপন

তদন্তে কোনো গাফলতি বা কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে প্রসিকিউশন থেকেও আমাদের কিছু জানায়নি। তবে এটুকু বলতে পারি তদন্ত সংস্থা সুষ্ঠভাবে, সুচারুভাবে তদন্ত করে তার প্রতিবেদন প্রসিকিশন টিমকে দিয়েছি।’

সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য ২০১৪ সালে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করে সংস্থাটি। পরে প্রসিকিউশন টিমের সাতজন আইনজীবী আড়াই মাস ধরে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযোগ তৈরির কাজ করেছেন। কিন্তু তা প্রস্তুত করে আদালেতে উপস্থাপন অভিযোগ আমলে নেওয়া এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন প্রক্রিয়ায় থেমে যায়। এরপর আইন সংশোধনী না হওয়ায় সেটি আর সামনে এগুতে পারেনি।

একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ২০১২ সালে সরকার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে দুটি করেছিল। পরে আবার একটিতে নিয়ে আসা হয়।

ট্রাইব্যুনালে সর্বপ্রথম সাঈদীর মামলার বিচার শুরু হলেও প্রথম রায় হয়েছে ফরিদপুরের মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সব মিলে এ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ৬৩ জনের বিরুদ্ধে ৩০টি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। এসব মামলায় বেশির ভাগ আসামির সাজা হয়েছে। কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। গোলাম আযমসহ কয়েকজন আসামি কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেছে। সাঈদীসহ বেশ কয়েকজন আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এখন কারাবন্দি।

অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর  নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে এ রায় ঘোষণা করে।

এর আগে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে দেয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের সভাপতি হুমায়ূন কবির, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হাসানসহ ২৫ ব্যক্তি।

ওই রিটের শুনানি শেষে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের বেঞ্চ।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানিয়া আমীর। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মহসীন রশিদ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।  জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক।

সারাবাংলা/এজেডকে/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন