বিজ্ঞাপন

জার্মান মেশিন গুড়িয়ে জাপানের অবিশ্বাস্য জয়

November 23, 2022 | 9:00 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

‘ফুটবল একটি সরল খেলা। যেখানে ২২ জন ৯০ মিনিট বল তাড়া করে এবং শেষে এসে জার্মানরা জিতে’—সাবেক ইংলিশ ফুটবলার এবং বর্তমান ফুটবল বিশ্লেষক গ্যারি লিনেকার এমনটাই বলেছিলেন জার্মানির ফুটবল নিয়ে। তবে সময় পাল্টেছে। বিশেষ করে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের পরে হাওয়া বদল হয়েছে। দুঃস্বপ্ন যেন পিছুই ছাড়ছে না জার্মানির। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া জার্মানির কাতার বিশ্বকাপের শুরুটাও সুখকর হলো না। এবারে জাপানের দুর্দান্ত ফুটবলের কাছে হার মানতে হলো জার্মান মেশিনদের।

বিজ্ঞাপন

কাতারের খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শুরুতে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে ২-১ গোলের ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নিয়েছে জাপান। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে জার্মানিকে লিড এনে দেন ইয়াকি গুন্দোয়ান। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের ৭৫ মিনিটে জাপানকে সমতায় ফেরান রিতসু দোয়ান আর ৮৩তম মিনিটে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের থমকে দেন তাকুমা আসানো। তার গোলেই শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।

এর আগে জাপানের বিপক্ষে খেলা চার ম্যাচে অপরাজিত ছিল জার্মানি। যার মধ্য দুটি জয় আর দুটি ম্যাচে ড্র করেছিল দুই দল। এবার প্রথমবারের মতো জার্মানির বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পেল জাপান। আর সেই জয়ও এলো বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চ ফুটবল বিশ্বকাপে।

বিজ্ঞাপন

ম্যাচের প্রথমার্ধে জার্মানি ৮১ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য মোট ১৪টি শট নেয় যার ভেতর পাঁচটিই ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে জাপান শট নিতে পেরেছিল মাত্র একটি। শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে জাপানের রক্ষণকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি জার্মানি।

ম্যাচের আট মিনিটের মাথায় প্রথমে লিড নিয়েছিল জাপান। মিডফিল্ডার জুনিয়া ইতোর ক্রস থেকে ডি বক্সে বল পেয়ে জালে পাঠান ফরোয়ার্ড ডেদাইজেন মায়েদা। তবে সে দফায় অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় গোলটি।

বিজ্ঞাপন

এরপর থেকেই জার্মান পাওয়ার ফুটবলের শক্তি প্রদর্শন গোটা প্রথমার্ধ জুড়ে। মুহুর্মুহ আক্রমণে জাপানের রক্ষণকে তছনছ করে দিচ্ছিল জার্মানরা। ১৬ মিনিটের মাথায় অ্যান্টোনিও রুডিগারের হেড সামান্যের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। মিনিটে চারেক পর জশুয়া কিমিচের শট দারুন দক্ষতায় রুখে দেন জাপানিজ গোলরক্ষক। ম্যাচের ২৯তম মিনিটে দূর থেকে গুন্দোয়ানের শট সহজেই ঠেকান জাপান গোলরক্ষক শুইচি গোন্দা। একটু পর ডাভিড রাউমের শট তিনি ঠেকানোর পর আলগা বল পেয়ে শট নেন গুন্দোয়ান তবে আটকে দেন ডিফেন্ডার মায়া ইয়োশিদা।

দারুণ সব আক্রমণ করলেও জাপানের রক্ষণের ডেডলক ভাঙতে পারছিল না জার্মানি। ৩৩তম মিনিটে সফল স্পট-কিকে জার্মানিকে এগিয়ে নেন গুন্দোয়ান। রাউমকে গোলরক্ষক গোন্দা ফাউল করলে পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি। এরপর প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময় শেষে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে সার্জ গ্ন্যাব্রির কাছ থেকে পাওয়া বল আলতো টোকায় জালে জড়ান কাই হার্ভাটজ তবে অফসাইডের কারণে বাতিল হয় গোলটি।

খেলার মোড় ঘুরে যেতে শুরু করে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই। প্রথমার্ধটা জার্মানদের দখলে থাকলে দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময়জুড়ে ছিল জাপানিজদের আধিপত্য। ম্যাচের ৫৮ মিনিটের মাথায় ডান দিক থেকে আক্রমণে উঠেন মিতোমা। বল নিয়ে অ্যান্টোনিও রুডিগারকে পেছনে ফেলে ডি বক্সে ঢুকে শট নিলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে তখন থেকেই গোল আসবে আসবে করছিল জাপানিজদের জন্য।

বিজ্ঞাপন

ম্যাচের ৬০ মিনিটের মাথায় খেলাটা নিজেদের করে নিতে পারতো জার্মানি। তবে জার্মানদের বাধ সাধে গোলপোস্ট। ইয়াকি গুন্দোয়ানের দূরপাল্লার দুর্দান্ত শট জাপানিজ গোলরক্ষককে পরাস্ত করলেও গোলপোস্টে লেগে বাইরে বেরিয়ে যায়। এরপর একের পর এক আক্রমণে জার্মান রক্ষণের ভালোই পরীক্ষা নিচ্ছিল জাপান।

তবে অপেক্ষার অবসান ঘটে ম্যাচের ৭৫তম মিনিটে। মিতোমা বল নিয়ে আক্রমণে ওঠেন, এরপর দারুণ এক বল বাড়ান মিনামিনোর দিকে। ডি বক্সে বল পেয়ে মিয়ামিনো শট নিলে তার শট রুখে দেন ম্যানুয়েল নয়্যার। তবে বল বিপদমুক্ত করতে পারেননি তিনি। ফিরতি বল দৌড়ে গিয়ে জোরালো শটে জালে জড়ান রিতসু দোয়ান। আর তাতেই ১-১ গোলে সমতায় ফেরে জাপান।

সমতায় ফেরার পর দ্বিতীয় গোলের জন্য আরও মরিয়া হয়ে খেলতে শুরু করে। সেই সঙ্গে নিজেদের রক্ষণটা গুছিয়ে রাখে জাপান। সমতায় ফেরার মিনিট আটেক পর নিজেদের অর্ধে ফ্রিকিক পায় জাপান। সেই ফ্রিকিক থেকে লম্বা করে বল বাড়ান কো ইতাকুরা। লম্বা করে বাড়ানো বল পেয়ে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠেন তাকুমা আসানো। এরপর জার্মানির দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডি বক্সে ঢুকে ম্যানুয়েল নয়্যারকে পরাস্ত করে দারুণ এক গোল করেন আসানো। আর তাতেই ইতিহাস গড়ে ফেলে জাপানিজরা।

শেষ দিকে জার্মানি চাপ দিয়েও ভাঙতে পারেনি জাপানিজ রক্ষণদূর্গ। এতেই ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে জাপান।

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন