বিজ্ঞাপন

সারাবাংলায় বেশ আছি

December 6, 2022 | 9:50 am

আসাদ জামান

‘ছোট বেলায়’ সাংবাদিক দেখলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম। ‘মহান’ পেশার এই মানুষগুলোকে ভিন গ্রহের ‘প্রাণী’ মনে হতো আমার। সে কারণেই হয়তো ‘বড় বেলায়’ সাত-পাঁচ না ভেবে সাংবাদিকতায় ঢুকে পড়ি। কিন্তু, এই ‘ঢুকে পড়া’ মোটেই সুখকর হয় নি।

বিজ্ঞাপন

যে পত্রিকাটায় আমার সাংবাদিকতা শুরু, সেখানে টানা ১১মাস কাজ করার পর বেতন চাইতে গেলে সম্পাদক মহোদয় যা বললেন, তার সারসংক্ষেপ দাঁড়ায় এমন— ‘কেবল তো সাংবাদিকতা শিখছ, এখনই বেতন কীসের? এসিওয়ালা অফিসে বসে কাজ করার সুযোগ পেয়েছ, ফিল্টার করা পানি খেয়েছ— এটাই তো অনেক কিছু।

হ্যাঁ, সেটা ‘অনেক কিছু’ ছিল! ঠিক কচ্ছপের কামড়ের মতো! নইলে কি আর কর্মজীবনের প্রথম ১১ মাস বিনা বেতনে কাজ করার পরও পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা বেছে নিতাম? তবে হ্যাঁ, বিনা বেতনে ওই ১১ মাস কাজ করার পর জীবনে আর কোনো দিন বেতন ছাড়া কাজ করতে হয় নি। ‘‘মাঝে মাঝে তব (বেতন-ভাতা) দেখা পাই/ সারা বছর কেন পাই না’’ টাইপের সাংবাদিকতার অভিশাপ থেকে পরম করুনাময় আমাকে হেফাজত করেছে।

হঠাৎ করে কেন এই প্রসঙ্গ? বলছি সে কথা— ২০১৭ সালের অগাস্ট-সেপ্টেম্বর দিকে বাংলানিউজের সদ্য সাবেক ‘হেড অব নিউজ’ মাহমুদ মেনন খান (অধুনা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শ্রদ্ধেয় মেনন ভাই) ফোন দিয়ে বললেন, ‘আসাদ, তুমি তো জানো- আমরা একটা নতুন প্রোজেক্ট নিয়ে এগোচ্ছি। গাজী গ্রুপ ইনভেস্ট করছে। আমি চাই, তুমি আমাদের সঙ্গে কাজ কর। এখনই কিছু বলতে হবে না। সময় নিয়ে ভাবো। তারপর জানাও।’

বিজ্ঞাপন

আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই, আপনাদের অনলাইন নিউজ পোর্টালের নাম কী হবে?’ মেনন ভাই বললেন, ‘এখনই কিছু বলব না। আমাদের সঙ্গে কাজ করলে সময় মতো সব জানতে পারবে।’ অতঃপর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে সারাবাংলার ক্যাম্প অফিসে (মূলত, কনটেন্ট ম্যাটারসের হেড অফিস) এসে দৈনিক সারাবাংলা ও সারাবাংলা.নেট-এর নির্বাহী সম্পাদক মাহমুদ মেনন খানের হাত থেকে নিয়োগপত্র নিয়ে গেলাম।

নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে দৈনিক সারাবাংলা ও সারাবাংলা.নেট এ স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট হিসেবে কাজ করার শর্তে নিয়োগপত্র তো নিলাম। কিন্তু চিন্তায় আর ঘুম আসে না। বাংলানিউজ ছেড়ে সারাবাংলা! আলমগীর ভাইকে (বাংলানিউজের তৎকালীন এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন) ছেড়ে মেনন ভাই! প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া ছেড়ে নতুন মিডিয়ায়! কাজটা কি ঠিক করলাম? কোনো কারণে যদি মিডিয়াটা বন্ধ হয়ে যায়!

যাই হোক। এমনসব ভাবনা ভাবতে ভাবতে অক্টোবর শেষ হলো। নভেম্বরের ১ তারিখে সারাবাংলার ক্যাম্প অফিসে এসে জানতে পারলাম- আমাদের জন্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক সড়কে প্রীতম জামান টাওয়ারের ১৬ তলায় অফিস প্রস্তুত হচ্ছে। মেনন ভাই, ফায়সাল ভাই (মিয়া ফায়সাল হাসন-ম্যানেজার, সারাবাংলা) আতা ভাই ( মো. আতাউর রহমান, সাবেক হেড অব অ্যাকাউন্স-সারাবাংলা) দিন/রাত পরিশ্রম করে অনিন্দ্য সুন্দর এক অফিস বানাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার ওই অফিস প্রস্তুত হওয়ার আগেই সেখানে একদিন টাউন হল মিটিং ডাকা হলো। মেনন ভাই জানালেন, মিটিংয়ে ম্যানেজিং এডিটর এ.এস.এম রফিকউল্যাহ (সানা ভাই) অ্যাটেন্ড করবেন। সানা ভাই এলেন। দীর্ঘক্ষণ কথা বললেন। সারাবাংলার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, স্বপ্ন, মিশন, ভিশন— সব কিছুই বললেন তিনি। কথার এক ফাঁকে বললেন— ‘এমনও হতে পারে, এক বছরের মধ্যে সারাবাংলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে!’

একজন বাস্তবাদী লোক হিসেবে তিনি হয়তো সব রকম সম্ভাবনার কথা বলতে চেয়েছিলেন। আর মিডিয়াতে তো এ ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। খুব ধুমধাম করে যাত্রা শুরুর পর বছর না যেতেই ’মন মাঝি তোর বৈঠা নে রে/ আমি আর বাইতে পারলাম না’ টাইপের ঘটনা অনেক দেখেছি। অথবা ‘দোকান খোলা রেখে বেচা-কেনা বন্ধ রাখার’ নজীরও কম দেখি নি। অর্থাৎ মিডিয়া খোলা থাকবে, বন্ধ থাকবে বেতন। আর সাংবাদিক নামক ভিন গ্রহের প্রাণীগুলো বেঁচে থাকবে হাওয়া-বাতাস খেয়ে।

লেখার শুরুতেই বলেছিলাম, এই টাইপের সাংবাদিকতার অভিশাপ থেকে পরম করুনাময় আমাকে হেফাজত করেছে। আর এই হেফাজত বলয়ের দেয়ালটা আরও সুদৃঢ় ও মজবুত হয়েছে সারাবাংলায় এসে। গত ৬০ মাসে বেতন-ভাতা নিয়ে একবারের জন্যও ভাবতে হয় নি। মাসের প্রথম দিন বেতন নিয়ে ঘরে ফেরা— মিডিয়াতে যেটা রীতিমতো অকল্পনীয়, সারাবাংলায় সেটা বাস্তব। আর করোনাকালে নিয়মিত বেতন, শতভাগ বোনাস, ইনক্রিমেন্ট— এসব পুরোনো গল্প না হয় নাই বললাম।

ও হ্যাঁ, এতো সব প্রাপ্তীর ভীড়ে না ‘পাওয়া’র কিছু গল্প হয়তো চাপা পড়ে গেল! ৬-এ পা’ দেওয়া সারাবাংলা হয়তো সেই না ‘পাওয়া’র গল্পও মুছে দেবে। আমরাও গলা ছেড়ে বলতে পারব— সারাবাংলায় বেশ আছি।

বিজ্ঞাপন

লেখক: স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা ডট নেট

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন