বিজ্ঞাপন

মিরাজ বীরত্বে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়

December 7, 2022 | 8:22 pm

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট

২০১৫ সালে বাংলাদেশে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে এসে তরুণ মোস্তাফিজুর রহমানের ভয়ঙ্কর কাটার বিষের মুখে পড়েছিল ভারত। পরপর দুই ম্যাচ হেরে এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল ভারত। ছয় বছর পর বাংলাদেশে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে এসে আবার সেই তেঁতো স্বাদটা পেতে হলো ভারতীয়দের। পরপর দুই ম্যাচ হেরে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ হারল ভারত। এবার বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের নায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ।

বিজ্ঞাপন

মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভারতকে আজ ৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে খাদের কিনারা থেকে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়ার পর বল হাতে ২টি উইকেটও নিয়েছেন মিরাজ।

বাংলাদেশের ইনিংসে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়া আহত রোহিত আজ নয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন। ২৮ বলে ৩টি চার ৫টি ছয়ে ৫১ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে জয়ের কাছাকাছিই নিয়ে গিয়েছিলেন সফরকারী অধিনায়ক। ভারতের জয়ে শেষ বলে দরকার ছিল ৬ রান। মোস্তাফিজুর রহমানের ইয়র্কার ডেলিভারিতে কোনো রানই নিতে পারেনি রোহিত। তাতে মিরাজময় ম্যাচে বাংলাদেশেরই জয় হয়েছে।

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটিতেও দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়েছিলেন মিরাজ। ভারতের ১৮৬ রানের জবাব দিতে নেমে ১৩৬ রানে নবম উইকেট হারিয়ে হার দেখছিল বাংলাদেশ। তারপর শেষ ব্যাটারকে নিয়ে ৩৮ বলে ৩৯ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলে অবিশ্বাস্যভাবে বাংলাদেশকে জিতিয়েছিলেন মিরাজ।

বিজ্ঞাপন

আজকের ব্যাটিংটা আরও অবিশ্বাস্য। আগে ব্যাট করতে নেমে ৬৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তারপর অষ্টম ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে নেমে ৮৩ বলে ১০০ রানের অপরাজিত দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর এনে দেন মিরাজ। খাদের কিনারা থেকে সপ্তম উইকেটে মাহমুদউল্লাহর (৭৭) সঙ্গে গড়েন ১৪৮ রানের জুটি। পরে দুই সেট ব্যাটার শ্রেয়াস আয়ার ও লোকেশ রাহুলকেও ফিরিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন মিরাজ।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ২৭১ রানের জবাব দিতে নেমে ভারতের শুরুটা ছিল অস্বস্তিতে ভড়া। ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়া রোহিত শর্মা ব্যাটিং করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আগে থেকেই শঙ্কা ছিল। তার জায়গায় ওপেনিং করতে নেমে বিরাট কোহলি করতে পারলেন মাত্র ৫ রান। অপর ওপেনার শিখর ধাওয়ানও ৮ রান করে ফিরলে শুরুতেই চাপে পরে ভারত।

ওয়াসিংটন সুন্দর, লোকেশ রাহুল দ্রুত ফিরলে ৬৫ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় সফরকারীরা। তারপরই ম্যাচে নিজেদের সেরা জুটিটা গড়েছে ভারত। স্পিন বোলিংয়ের পাশাপাশি টুকটাক ব্যাটিং করতে পারা অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ১০১ বলে ১০৭ রান তোলেন শ্রেয়াস আয়ার।

বিজ্ঞাপন

১০২ বলে ৮২ রান করা আয়ারকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন মিরাজ। তারপর শারদুল ঠাকুর ও দ্বীপক চাহারকে দ্রুত ফিরিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও ইবাদত হোসেন। মনে হচ্ছিল সহজেই ম্যাচ জিততে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ চোট পেয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়া রোহিত শর্মা যে ব্যাটিং করতে পারবেন না ততক্ষণে সেটা ছড়িয়ে পড়েছিল।

কিন্তু অনুমান মিথ্যা প্রমাণ করে ভারতীয় অধিনায়ক মাঠে নামেন নয় নম্বরে। তার প্রথম কয়েকটা বল মোকাবিলায় চোটের অস্বস্তি ফুটে উঠছিল। তবে খানিক বাদে চোট একপাশে রেখে যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে চাইলেন রোহিত! মাহমুদউল্লাহ, ইবাদত হোসেনদের ওপর চড়াও হয়ে ভারতকে জয়ের কাছাকাছিও নিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও মোস্তাফিজের বিপক্ষে শেষের হিসেবটা মেলাতে পারেননি।

৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৬৬ রানে থেমেছে ভারত। ভারতের হয়ে দারুণ ব্যাটিং করেছেন অক্ষর প্যাটেলও। ৫৬ বলে ২টি চার ৩টি ছয়ে করেছেন ৫৬ রান। বাংলাদেশের সফল ব্যাটার ইবাদত হোসেন। প্রথম ওয়ানডেতে চার উইকেট নেওয়া ইবাদত আজ ১০ ওভারে ৪৫ রানে নিয়েছেন তিন উইকেট। সাকিব ৩৯ রানে ও মিরাজ ৪৬ রানে নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।

বিজ্ঞাপন

এর আগে বাংলাদেশের পুরো ইনিংসটাই ছিল মিরাজময়। আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ছিল হতশ্রী। দ্বিতীয় ওভারেই ফিরেছেন ওপেনার এনামুল হক বিজয়। অপর ওপেনার লিটন দাস নতুন বলের বিপক্ষে সময় নিচ্ছিলেন। তবে সময় নিয়ে উইকেটে সেট হওয়ার পরই ফিরেছেন লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে। মোহাম্মদ সিরাজের বলটি খুব বেশি কঠিন ছিল না। কিন্তু ২৩ বলে ৭ রান করা লিটন বড় শট খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে সরাসরি বোল্ড হয়েছেন।

আজ তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত বেশ স্বচ্ছন্দে খেলছিলেন। অপর দিকে সাকিব আল হাসান উইকেটে সেট হতে সময় নিচ্ছিলেন। তবে দুজনের কেউই বড় স্কোর গড়তে পারেনি। উমরান মালিকের গতিতে সরাসরি পরাস্ত হয়ে বোল্ড নাজমুল (৩৫ বলে ২১ রান)। খানিক বাদে স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরকে হাঁকাতে গিয়ে সাকিব আল হাসান বল বাতাসে ভাসিয়ে দেন। ফেরার আগে ২০ বলে ৮ রান করেছেন সাকিব।

সাকিব ফেরার পরের বলেই সাতে নামা আফিফও বোল্ড হলে বড় বিপদেই পড়ে বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে শক্ত হাতে দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব যেন নিজের কাঁধে তুলে নিলেন মাহমুদউল্লাহ, মিরাজ। মাহমুদউল্লাহ একপ্রান্তে সাবধানে এগুনোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অপর প্রান্তে মিরাজ বেশ সাবলীল। আগের ম্যাচে যেখান থেকে শেষ করেছিলেন আজ যেন সেখান থেকেই শুরু করেছিলেন!

মাহমুদউল্লাহ ৯৬ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৭৭ রান করে ফেরেন। তখন মিরাজের রান ছিল ৭১ বলে ৬৬। এরপর ৩৪ রান তুলছেন মাত্র ১২ বল খেলে! শেষ দিকে ভারতীয় বোলারদের রীতিমতো অসহায় বানিয়ে ফেলা মিরাজ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন ৮৩তম বলে।

৮৩ বলে তার অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংসটিতে চারের মার ৮টি, ছক্কা ৪টি। শেষ দিকে নাসুম আহমেদ ১১ বলে ১৮ রান করে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন মিরাজকে। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান তুলেছে বাংলাদেশ। ভারতের হয়ে ৩৭ রানে তিন উইকেট নিয়েছেন ওয়াাশিংটন সুন্দর। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন উমরান মালিক ও মোহাম্মদ সিরাজ।

সারাবাংলা/এসএইচএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন