বিজ্ঞাপন

‘তোর বাবাকে তো আর পাবি না মিথিলা’

December 8, 2022 | 11:36 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘আমার মাইয়ারে এখন কে দেখবো! কারে বাবা বলে ডাক দিবো আমার মেয়ে! তোর বাবাকে তো আর পাবি না মিথিলা। তোরে আর কেউ কোলে আদর করবে না। আমারে কে দেখবো!’— একমাত্র শিশু মেয়ে মিথিলাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বিলাপ করছিলেন নয়াপল্টনে পুলিশের গুলিতে নিহত মকবুল হোসেন (৩৫) এর স্ত্রী হালিমা আক্তার।

বিজ্ঞাপন

ছোট্ট শিশু মিথিলা এখনও বোঝে না বড়দের সকল, তবু মর্গে পড়ে থাকা বাবার মৃতদেহের দিকে কান্না থামছিল না তারও। গতকাল বুধবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে এই দৃশ্য দেখা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গের সামনে।

মর্গের কলপসিবল গেট ধরে স্বামীর মৃতদেহ দেখার চেষ্টা করছিলেন হালিমা। সঙ্গে শিশু মেয়ে মিথিলাও গেইট ধরে বাবার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এসময় সঙ্গে ছিলেন মকবুলের বোন আয়েশা আক্তার, বড়ভাই আব্দর রহমান, স্ত্রীর বড়বোন নাসরিন আক্তার, ও শাশুড়ি।

মকবুলের স্ত্রী হালিমা আক্তার মেয়ে শিশুকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করে বলছিলেন, ‘কাকে তুই বাবা বলে ডাক দিবি! কে তোকে আদর করে কোলে নিবো। কে আমাদের দেখবো!’ এসময় মিথিলাও মায়ের সাথে কাঁদতে থাকে। কখনও গেট ধরে বাবাকে দেখার চেষ্টা করে। আবার কখনও মায়ের কোলে বসে উচ্চস্বরে চিৎকার করে কান্নাকাটি করে।

বিজ্ঞাপন

হালিমা আক্তার বলেন, ‘বাউনিয়াবাদ এলাকায় আগে অন্যের কারখানায় কাজ করতো আমার স্বামী। কয়েক বছর ধরে বাসার ভিতরে নিজেই শাড়ির কারচুপির কারখানা দেয়। কয়েকজন শ্রমিকও কাজ করে এখন। বুধবার সকাল ৯টার দিকে কারখানার জন্য মালামাল কিনতে বাসা থেকে বের হন তার স্বামী মকবুল। বাসা থেকে বের হবার ঘণ্টাখানেক পরে মোবাইলে কথাও হয়েছিল স্বামীর সঙ্গে। সে সময় মকবুল জানিয়েছিলেন মিরপুর ১১ নম্বরে আছেন। মিথিলা নাস্তা খেয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করছিলেন। এটাই ছিল তাদের শেষ কথা। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বড় বোন নাসরিনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে বের হয়েছিলেন মকবুল।’

মকবুলের স্ত্রী হালিমা আক্তার মর্গের সামনে বারবার জিজ্ঞাসা করছিল আমার স্বামীর ঘটনা কোন জায়গায় হয়েছে? উত্তরে অনেকে বলেন, ‘আপনার স্বামীকে রক্তাক্ত অবস্থায় নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে পাওয়া গেছে।’

বিজ্ঞাপন

স্ত্রী হালিমার সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন মকবুলের শাশুড়ি লালমতি বেগম, বোন আয়েশা বেগম, স্ত্রীর বড় বোন নাসরিন আক্তার ও বড় ভাই আব্দুর রহমান। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে পরিবারের সবাই বলছিল মকবুল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলও না।

নিহত মকবুলের ভাই ও স্বজনরা জানান, মকবুল রাজনীতি করতেন না, কোনো পদে ছিলেন না। তবে বিএনপির সমর্থক ছিলেন। যদিও প্রথমে তারা পুলিশি হয়রানির ভয়ে বিএনপিকে সমর্থনের কথাও অস্বীকার করেছিলেন।

নিহত মকবুলের বড় ভাই আব্দুর রহমান বলেন, ‘তারা মিরপুর ১১ বাউনিয়াবাদ লালমাটি এ ব্লকের টিনসেট কলোনিতে থাকে। চার বছর আগে বাবা আব্দুস সামাদ মারা যায়। মকবুলের বাসাতেই তার নিজের একটি বুটিকের কারখানা আছে। সকাল ৯টার দিকে বাসা থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে বের হয়। রায়সাহেব বাজারে কারখানার মাল কিনতে যাওয়ার কথা। পরে টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারি মকবুল নামে একজন পল্টনে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। পরে ঢাকা মেডিকেলে এসে ছোট ভাই মকবুলের মৃতদেহ দেখতে পাই।’

মকবুলের একমাত্র মেয়ে মিথিলা আক্তার স্থানীয় একটি মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: ‘নয়াপল্টনে নিহত মকবুল কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না’

সারাবাংলা/এসএসআর/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন