বিজ্ঞাপন

বিশ্বকাপ ফুটবলে ‘ব্যাহত’ ঢাবির স্বাভাবিক জীবন!

December 8, 2022 | 8:31 pm

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী চলছে উন্মাদনার আমেজ। সেই আমাজ ছড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও। বড় পর্দায় খেলা দেখানোর আয়োজন আছে এই ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকটি জায়গায়। কেবল শিক্ষার্থীই নয়; আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সদলবলে বাঁশি-পতাকা নিয়ে খেলা দেখতে আসেন অনেকেই। তবে এই আমেজে সৌন্দর্যের পাশাপাশি আছে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সুর।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব স্থানে বড় পর্দায় দেখানো হয় যেসব স্থানে, তার আশেপাশের হলগুলোর শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, খেলা চলাকালীন ভুভুজেলার শব্দ ও মোটরসাইকেলের হর্ন তাদের পড়ালেখাসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। এছাড়া, বিভিন্ন ধরনের লোকজনের সমাগম নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি বলছেন অনেকেই। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা খেলা চলাকালীন ক্যাম্পাসের ভেতরে অধিক যানবাহনের উপস্থিতির বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একটি, ডাচের পেছনে একটি এবং হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠে একটি করে সর্বমোট তিনটি বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাসহ বড় দলগুলোর খেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকা থেকে মানুষ এসে জড় হয় ক্যাম্পাসে। খেলা চলাকালীন এসব জায়গার কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। মোটরসাইকেলের আতিশয্যে হাঁটার জায়গা থাকে না ক্যাম্পাসে। অতিমাত্রায় ভুভুজেলা ও মোটরসাইকেলের হর্ন নিত্য বিষয়। যে অংশগুলোতে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর ব্যবস্থা আছে তার আশেপাশের হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয় বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বড় দলগুলোর খেলা দেখতে সবচেয়ে বেশি মানুষ জড়ো হয় হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের মাঠে। এক্ষেত্রে মোটরসাইকেল ও ভুভুজেলার শব্দের আধিক্য মুহসীন হল ও পার্শ্ববর্তী স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবন ব্যহত করছে বলে অভিযোগ করেছেন এই দুই হলের শিক্ষার্থীরা।

মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফাহিনুর অভি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বহিরাগতরা গ্রুপিং করে খেলা দেখতে আসে।এর মধ্যে অনেক গ্রুপ প্রকাশ্যেই মাদক সেবন করে। হল মাঠ থেকে আসা প্রচুর ধূলাবালির কারণে হলে অনেকের শ্বাসকষ্ট। রাতে বড় দলের খেলা থাকলে ৪টার আগে ঘুমানো যায় না শব্দে। বিপুল সংখ্যক মানুষ দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করে। এছাড়া এখানে পয়ঃনিষ্কানের ব্যবস্থা না থাকায় খোলা মাঠেই মল-মূত্র ত্যাগ করছে বহিরাগতরা। ফলে দুর্গন্ধে মাঠসংলগ্ন কক্ষগুলোতে থাকা যায় না।’

স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নুরুল আফসার মুন্না সারাবাংলাকে বলেন, ‘বড় দলগুলোর খেলা যেদিন থাকে, সেদিন হলে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এত শব্দ! বাইরে বেরোলেই দেখি মোটরসাইকেলে সয়লাব। ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও থাকে না।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় আছে দুটি বড় পর্দা। পার্শ্ববর্তী দুটি হল— রোকেয়া হল ও শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, শব্দদূষণের কারণে স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হচ্ছে তাদের। রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শাহনাজ শম্পা সারাবাংলাকে বলেন, ‘হলের নব্বই শতাংশ শিক্ষার্থী টিএসসির নানাবিধ অনুষ্ঠানসহ খেলাকেন্দ্রিক আয়োজনে আর রাস্তার যানবাহনের শব্দদূষণে অতিষ্ঠ। স্বাভাবিক কার্যক্রম যেমন ঘুম, পড়াশোনা, বিশ্রাম নেওয়া যেগুলো সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনে আবশ্যিক; সেই পরিবেশ দিতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ।’

এদিকে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারীর মৃত্যু নিরাপত্তার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। এই ঘটনায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদও করেছেন শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিসহ সর্বমোট ১১টি দাবি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছেন একদল শিক্ষার্থী। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনায় সরব ছিলেন অনেকেই। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খেলা দেখতে আসা হাজার হাজার বহিরাগত মানুষ এবং মোটরসাইকেল শো-ডাউনের মহড়ায় শঙ্কা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এ সব বিষয় নিয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা বহিরাগতদের অনুরোধ করছি, যাতে গভীর রাতে এসে এখানে খেলা না দেখেন।’ তার দাবি, একজন শিক্ষার্থীও এ পর্যন্ত এই ব্যাপারে তাকে ফোন করেননি। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বললেই তবে ব্যবস্থা নেব।’

বিজ্ঞাপন

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা মিলছে ভিন্ন চিত্র। নিরাপত্তা, শব্দদূষণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে প্রতিদিনই আলোচনা হচ্ছে। মায়িশা ফাহমিদা নামে একজন শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘গতদিন হলে ছিলাম খেলার সময়। মাথায় যন্ত্রণার কারণে বমি হওয়ার উপক্রম হচ্ছিল।’

এহসান উদ্দীন জুয়েল লেখেন, ‘মুহসিন হলের মাঠে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বহিরাগতসহ উৎসব করে খেলা দেখছেন নিয়মিত। ক্যাম্পাসে কে মরল, কে বাঁচল সেটা দেখার টাইম নেই। কারণ আমরা উন্মাদ হয়েছি। আবার এই বহিরাগত দিয়েই ক্যাম্পাস বহিরাগত মুক্ত করা চিন্তা করে কেউ কেউ! আশে-পাশের হলের যারা দুঃখজনকভাবে(!) উন্মাদ হতে পারেনি, শব্দের কারণে রাত দুটোয় তাদের ঘুম ভেঙ্গে গেলো কিনা তা আমরা থোড়াই কেয়ার করি। এ পর্যন্ত যতদিন রাত একটায় খেলা হয়েছে (একদিন বাদে) ততদিন রাতে ঘুম ভেঙ্গেছে।’

বিশ্বকাপের আমেজ হলে হলে

কাতার বিশ্বকাপকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোও সেজেছে রঙিন সাজে। আবাসিক হলগুলোর মূল ফটকে শোভা পাচ্ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশের পতাকা। এ ছাড়া হলগুলোর ভেতরে বিভিন্ন অংশে আছে ছোটো ছোটো পতাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে করা হয়েছে গ্রাফিতি। মেসি, নেইমার, এলিসন বেকারে গ্রাফিতির পাশাপাশি হলটির দেওয়ালে আঁকা হয়েছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দিন হলের মাঠের সঙ্গে লাগোয়া দেওয়ালে আঁকা হয়েছে ব্রাজিলের বেশ কয়েকটি পতাকা।

হাঁটতে পথে দেখা মেলে বাহারি জার্সি গা’য়ে শিক্ষার্থীদের। চায়ের কাপের আড্ডায় কিংবা হল মাঠের এককোণে দাঁড়িয়ে ভিন্ন দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল তর্কের দৃশ্যও দেখা যায় এখন।

সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন