বিজ্ঞাপন

বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন প্রায় পূরণ করেছি: প্রধানমন্ত্রী

December 9, 2022 | 3:40 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্বপ্ন প্রায় পূরণ করেছি। কারণ আমাদের সংসদে স্পিকার, লিড অব দ্য হাউস, লিড অব দ্য অপজিশন ও ডেপুটি লিডার চারজনই নারী ছিলাম। সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী কিছু দিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে এই শূন্যস্থান পূরণ আবার একজন নারীকে দিয়েই করব।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে নারীদের শিক্ষা, জাগরণ ও অর্জনের পেছনে বেগম রোকেয়ার অবদান রয়েছে। ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জন্মদিন। তিনি যদি সেই অচলায়তন ভেঙে নিজে শিক্ষা গ্রহণ করে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করতেন। তাহলে আমরা (নারীরা) আজ যেখানে আছি, কেউ সেখানে থাকতে পারতাম না। বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন ছিল মেয়েরা জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হবে। নারীরা সমস্ত দায়িত্ব নেবে। তিনি যে আকাঙ্ক্ষা করে গেছেন। আমরা কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা অর্জনের পথে।’

ছেলেমেয়ে উভয়কে নিজের কাজটা নিজে করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব নারীরা বাইরে কাজ না করে শুধু সংসারে কাজ করেন… একটি সংসার গুছিয়ে রাখা, এটা কিন্তু অনেক কাজ। এটাও তাদের কর্মক্ষেত্রে হিসেবে ও শ্রম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অনেকে গবেষণা করেন, মেয়েরা কোথায় কোথায় কাজ করছে। কিন্তু এই জায়গাটা (সংসার), যেখানে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। সেই জায়গাকে কর্মক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করা হয় না।’

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে নারী অগ্রযাত্রার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে মনে হয় ছেলেদের থেকে মেয়েরা বেশি স্মার্ট। ছেলেরা তো অনেক স্মার্ট। মন খারাপ করার কিছু নেই। আগে বিমান, নৌ, সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ডে কোনো নারী সদস্য ছিল না। বর্তমানে সব জায়গায় নারীদের দিয়েছি। জাতির পিতা পুলিশে কিছু নারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। আমি দেখলাম কোনো ডিসি, এসপি পদে নারীদের স্থান নেই। বলা হতো, মেয়েরা পারবে না। সচিব নেই। মেয়েদের স্থান অনেক নিচে। সিনিয়রিটির ক্ষেত্রে একসঙ্গে তালিকা করা হতো। আমি বলেছি, নারীদের আলাদা তালিকা চাই। সব জায়গায় ফাইট করে আনতে হয়েছে। তারপরও তারা সচিব পর্যায়ে উঠতে পারে না। প্রশাসনে একটি ব্যবস্থা আছে, রাষ্ট্রপতির কোটায় ১০ শতাংশ অফিসার নিয়োগ দেওয়া যায়। আমি সেই কোটা ধরে প্রথম মেয়ে নিয়োগ দিলাম। আমার অফিসে সচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রী দফতরে প্রথম নিয়োগ দিলাম। এভাবে দরজা খুলে দিয়েছি। প্রথম এসপি যখন করতে গেছি, প্রচণ্ড বাধা। মেয়েরা এসপি হবে। আমি বলেছি, হ্যাঁ, মেয়েরাই এসপি হবে।’

তৃতীয় লিঙ্গ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা তো কোনো অপরাধ করেনি। তারা তো কোনো বাবা-মায়েরই সন্তান। বাবা-মাকে ফেলে দিয়ে তাদের রাস্তায় চলে যেতে হবে কেন? তাদের জীবন-জীবিকার কিছু থাকবে না, এটা তো হতে পারে না। শুধু নারী অধিকার, নারী অধিকার বলে অনেকে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু কখনো এই শ্রেণির কথা কেউ চিন্তা করেননি। আমরা সংবিধানে তাদের স্বীকৃতি দিয়েছি। একইসঙ্গে তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকবে, লেখাপড়া শিখবে, চাকরি পাবে, কাজ ও প্রশিক্ষণ পাবে। তারা একটা সুস্থ জীবন পাবে। প্রতিটি ফরমে নারী-পুরুষের সঙ্গে থার্ড জেন্ডার লাগিয়ে দিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার যে স্বপ্ন, আজকে বাংলাদেশে বলতে গেলে স্বপ্ন প্রায় পূরণ করেছি। কারণ আমাদের সংসদে স্পিকার, লিড অব দ্য হাউস, লিড অব দ্য অপজিশন ও ডেপুটি লিডার— চারজনই নারী ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় সাজেদা চৌধুরী কিছু দিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে এই শূন্যস্থান পূরণ আবার একজন নারীকে দিয়েই করব।’

বিজ্ঞাপন

কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘যা হোক, আমাদের সবাই যোগ্য, আমি কাউকে অযোগ্য বলছি না। কিন্তু আমাদের এই সমাজটাকে তো উৎসাহিত করতে হবে। সেটাই আমি করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন অনেকটা বাস্তবায়নও করেছি। আজকে তিনি থাকলে হয়তো খুশি হতেন। তার নামে কলেজ করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় করেছি এবং তার জন্মস্থান পায়রাবন্দে নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ এই নারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দিকেও আরও নজর দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যানও করেছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছি। করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রতিটি মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। শুধু আমাদের দেশ না। উন্নত দেশগুলো আরও খারাপ অবস্থায় আছে।’

তাই সবাইকে সাশ্রয়ী, সঞ্চয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা এসেছে, তা যেন আমাদের দেশে আসতে না পারে। তাই নিজেদেরকেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের পাঁচ বিশিষ্ট নারীর হাতে বেগম রোকেয়া পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর এদিন সরকারিভাবে রোকেয়া দিবস পালন করা হয়।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বেগম রোকেয়া দিবস ও বেগম রোকেয়া পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ বছর পদকপ্রাপ্তরা হলেন— নারী শিক্ষায় ফরিদপুরের রহিমা খাতুন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় চট্টগ্রামের প্রফেসর কামরুন নাহার বেগম (অ্যাডভোকেট), নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সাতক্ষীরার ফরিদা ইয়াসমিন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে নারী জাগরণে নড়াইলের ড. আফরোজা পারভীন এবং পল্লি উন্নয়নে ঝিনাইদহের নাছিমা বেগম। পদকপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেট মানের পঁচিশ গ্রাম সোনা দিয়ে নির্মিত একটি পদক, পদকের রেপ্লিকা, চার লাখ টাকার চেক ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।

সারাবাংলা/এনআর/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন