Tuesday 29 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাসেলের ঘটনা কোনোভাবেই ‘অ্যাক্সিডেন্টালি অ্যাক্সিডেন্ট’ নয়!


৩০ এপ্রিল ২০১৮ ১৯:৩৮ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৮ ১৯:৪৩

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: রাজধানীর ধোলাইপাড়ে গ্রীন লাইনের বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারের ঘটনা ‘নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি সুস্থ মস্তিষ্কের খামখেয়ালি’ বলে মন্তব্য করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মো. সাহিদ হাসান। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাসেলের সঙ্গে প্রাইভেটকারে থাকা এপিআর এনার্জি বিদ্যুৎ কোম্পানির কান্ট্রি সিকিউরিটি ম্যানেজার ইমতিয়াজ নবী একই মত দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

তারা বলছেন, বাস চালক ইচ্ছে করলেই ফাঁকা রাস্তা দিয়ে চলে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটি না করে ইচ্ছে করে রাসেলকে চাপা দিয়েছেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা সাহিদ হাসান বলেন, ‘প্রাইভেটকার চালক রাসেলকে চাপা দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছি, দুর্ঘটনাস্থলের ছবি তুলেছি। আমার কোনোভাবেই মনে হয় না, এটি অ্যাক্সিডেন্টালি অ্যাক্সিডেন্ট।’

দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে পা হারানো রাসেল সরকার

গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীর ধোলাইরপাড় হানিফ ফ্লাইওভার ঢালে গ্রিন লাইন পরিবহনের একটি বাস রাসেলের প্রাইভেটকারকে প্রথমে ধাক্কা দেয়। রাসেল একটি রেন্ট-এ-কার প্রতিষ্ঠানে গাড়ি চালাতেন। সেদিন তিনি এপিআর এনার্জি বিদ্যুৎ কোম্পানির কান্ট্রি সিকিউরিটি ম্যানেজার ইমতিয়াজ নবীকে নিয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন।

প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দেওয়ার পর রাসেল ওই বাস চালককে গ্রীন পরিবহনের বাসটি থামাতে অনুরোধ জানান। কিন্তু বাস চালক রাসেলের অনুরোধ উপেক্ষা করে বাসটি নিয়ে চলে যেতে চান। গাড়িচালক এ সময় বাসটি রাসেলের পায়ের ওপর দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যান। রাসেল সরতে গিয়ে রেলিংয়ে আটকে পড়লে তার পায়ের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে যান চালক। এতে ঘটনাস্থলে রাসেলের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনার পর পথচারীরা বাসের পিছু নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে বাসটির গতিরোধ করে ও বাসের চালক কবির মিয়া শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে সোর্পদ করে। পরে মামলা হয়।

বিজ্ঞাপন

বাসচালক কবির মিয়া

অ্যাপোলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছেলেকে দেখতে রাসেল সরকারের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলেটার বয়স কম। বিয়ে করেছে, দুই বছরের একটি ছেলে রয়েছে।’

চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘ছেলেটার সংসার এখন কী করে চলবে। সারাজীবন কে তাকে দেখবে?’ ছেলেটা বাসা থেকে বেরুলো সুস্থ আর বাসায় ফিরবে পঙ্গু হয়ে এটা আমরা কী করে মেনে নিই’ বলেন শফিকুল ইসলাম।

ছেলের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার চোখের ওপর ছেলেটা পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকবে, ছেলেটা এভাবে সারাজীবন কাটাবে। কী হবে ছেলেটার, কী করে খাবে-আমি গরীব মানুষ।’

হাসপাতালের রাসেলের বাবা শফিকুল ইসলাম

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, রাসেলের মাইক্রোবাস ছিল বামে এবং গ্রীন লাইন বাসটি ছিল ডানে। প্রথমে বাসটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয়। রাসেল গাড়ি থামিয়ে চালককে জিজ্ঞেস করে, ‘কেন তাকে ধাক্কা দেওয়া হলো।’ রাসেল যখন তার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে সে কথা বলতে পারত। কিন্তু চালক সেটি করেনি। বরং, চালক বামে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে রাসেলের বাম পায়ের ওপর দিয়ে বাস টেনে নিয়ে যায়।

‘যেটা প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে জানিয়েছে এবং আমি ঘটনাস্থলে গিয়েও এ রকম প্রমাণই পেয়েছি। বেশকিছু স্থিরচিত্র আমার হাতে রয়েছে’বলেন সাহিদ হাসান।

তিনি বলেন, ‘সেদিন সেখানে যানজট ছিল না, পুরো রাস্তাটাই ফাঁকা। আমি বলবো, এটা হত্যা চেষ্টা।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘চালক বাসটি বামে টার্ন করে রোড ডিভাইডারের সঙ্গে চাপিয়ে দেয়। যার কারণে রাসেল পড়ে যায় এবং পরে রাসেলের বাম পায়ের ওপর দিয়ে বাসটি টেনে নিয়ে যায়। যে কারণে রাসেলের পা সেখানেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’

‘সুস্থ মস্তিষ্কে-খামখেয়ালি’ করে বাসচালক এ ঘটনা ঘটিয়েছে যোগ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

গাড়ি চালক রাসেল সরকার

এদিকে রাসেল যার গাড়ি চালাচ্ছিলেন, সেই এপিআর এনার্জি বিদ্যুৎ কোম্পানির কান্ট্রি সিকিউরিটি ম্যানেজার ইমতিয়াজ নবী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ছিলাম গাড়িতে, আমার চোখের সামনে সবকিছু ঘটেছে।’

তিনি বলেন, ‘গাড়িকে ধাক্কা দেওয়ার পর রাসেল গাড়ি থেকে নেমে বাসচালকের সঙ্গে কথা বলতে যায়, তখন প্রাইভেটকারের স্টিয়ারিং আমার হাতে ছিল।’

‘চালক এমনভাবে বাস রেখেছিল যে আমি ওভারটেক করে সামনেও যেতে পারছিলাম না। ফ্লাইওভারের ওপরে রাসেল বাসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, বাস তো চলছিল না, থেমে ছিল। এরপর ১০ সেকেন্ড থেমে রাসেলের ওপর দিয়ে চালিয়ে দিয়েছে। এটা দুর্ঘটনা না- একদম কিলিং অ্যাটেম্প। ফ্লাইওভার ফাঁকা ছিল, রাসেলকে হিট করেই সোজা টান মেরেছ’ বলেন ইমতিয়াজ নবী।

অ্যাপোলো হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. ফারাহ নূর সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাসেলের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। গতকাল (২৯ এপ্রিল) তার একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে, তার আরও একটি অস্ত্রোপচার হবে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি অনেক চেষ্টা করেও তার পা জোড়া লাগানো যায়নি। তবে কিছুটা আশঙ্কা মুক্ত হওয়াতে রাসেলকে গতকালই আইসিইউ থেকে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে।’

এবার পা হারালেন প্রাইভেটকার চালক
গ্রিন লাইন পরিবহনের সেই চালক কারাগারে, তদন্ত প্রতিবেদন ২৯ জুন

সারাবাংলা/জেএ/একে

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর