বিজ্ঞাপন

দ্বাদশ জয়ের টার্গেটে রাজপথ দখলে রাখার বার্তা আ.লীগের

December 9, 2022 | 10:56 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকারের ধারাবাহিকতার লক্ষ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে সরকারবিরোধী অপশক্তিকে ছাড় না দিতে অঙ্গীকার করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। রাজপথে সরকারবিরোধী নৈরাজ্য সৃষ্টির পায়তারা করলে পাল্টা আঘাতে জবাব দিতে নেতাকর্মীদের বার্তাও দিয়েছেন দলটির নেতারা। পাশাপাশি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার রাজপথ দখলের হুঙ্কার দিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে নেতারা এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এদিন বিকেল ৩টার মধ্যে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

এদিকে, জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করে বিএনপি। শনিবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকার সমাবেশ শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

বিএনপির ঢাকার সমাবেশ ঘিরে কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয় দেশের রাজনীতিতে। সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিলেও বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের বিষয়ে অনড় থাকে। পরে বিকল্প ভেন্যু হিসাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মতিতে গোলাপবাগে সমাবেশের অনুমতি পায়।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও কয়েকদিন আগে থেকেই রাজপথে শক্তির মহড়া দিতে শুরু করে। শুক্রবার বিকেলে এ লক্ষ্যে মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও অব্যাহত দেশবিরোধী সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করে।

বিএনপির ক্ষমতাকেন্দ্রিক রঙিন খোয়াব কপূর্রের মতো উবে যাবে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেত্রী আপনার আওয়ামী লীগ প্রস্তুত আছে। বিএনপি কাল থাকবে গোলাপবাগে। মানুষ আতঙ্কিত কেন হবে? জনগণকে বলব, আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। আমরা চলে যাচ্ছি কাল সাভারে। ঢাকায় আমরা নাই। বিএনপিকে এই শহর দিয়ে গেলাম। আতঙ্ক কেন হবে। আমরা ক্ষমতায়। আমরা কেন অশান্তি চাইব।’ তারপরও আগামীকাল বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সতর্ক পাহারায় থাকতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের ৩০ পর্যন্ত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেছিল। সেখানে আমাদের বিভিন্ন সম্মেলন হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের নেত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা ৮ডিসেম্বর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় কাউন্সিল থাকার পরও তিনি পরিষ্কার নির্দেশ দিয়ে দিলেন, যেহেতু বিএনপি ১০ তারিখ বিশাল সমাবেশ করবে, সেই কারণে সম্মেলনের তারিখ এগিয়ে আনতে হবে। কিন্তু এই চোরারা না শোনে ধর্মের কাহিনী। ওদের গাত্রদাহ ওই সোহরাওয়ার্দী। কারণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওদের আব্বাজান পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এদেশের মুক্তিযোদ্ধা আর মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। তাই ওদের গাত্রদাহ রয়েছে। তাই সেখানে যাবে না।’

বিজ্ঞাপন

নানক বলেন, ‘ওরা ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে আমাদের হাত কেটেছে, পা কেটেছে, চোখ উপড়ে ফেলেছে। আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। তারপরও আমরা কিছু বলি নাই। কারণ নেত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা ছিল। সেই মাইরটা কিন্তু পেন্ডিং রয়েছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে সেই মাইর কিন্তু শুরু হয়ে যাবে।’

ঢাকাবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘আতঙ্কের কোন কারণ নেই। আপনাদের পাহারায় আমরা রয়েছি। ওরা যদি কোনো জায়গায় হাত দেয় তাহলে সেই হাত ভেঙে দিতে হবে।’

বিএনপির নেতারা ক্ষমতা হারিয়ে পাগল হয়ে গেছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান। তিনি দলের নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য শুধু ১০ ডিসেম্বর নয়, বাংলাদেশ থেকে তাদের চিরতরে উৎখাত না করা পযর্ন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক অশুভ শক্তি বার বার ভিন্ন কথা বলে দেশকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যেতে চায়। ওরা একবার বলে শেখ হাসিনার সরকার পতন করা ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নাই। আবার বলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন না করে এই দেশে নির্বাচন হবে না। ওরা আবার বলে, তত্ত্বাবধায়ক নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আসলে ওই রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে একটা সংকট আছে। সেই সংকট হলো খালেদা জিয়া আর তারেক জিয়া দুজনেই দণ্ডিত আসামি। ওরা নির্বাচন করতে পারবে না। তাই দলকে নির্বাচনমুখী করতে চায় না। তারেক জিয়া কোনো অবস্থাতেই বিএনপির ফখরুল-মোশারফদের নেতা বানাতে চায় না। ওরা চায়, অন্ধকার গলিপথ দিয়ে অশুভ শক্তি ক্ষমতায় আসুক। ওদের দণ্ড মওকুফ হোক, তার পর নির্বাচনে যাবে।’ বিএনপির উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘এখনো সময় আছে। সহজ-সরল পথে আসেন। যদি আঙুল বাঁকা করতে হয় আপনাদের পাকিস্তানে চলে যেতে হবে।’

নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার আহ্বান সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীরবিক্রম বলেন, ‘আজকের সমাবেশ প্রমাণ করে ঢাকা নেত্রী শেখ হাসিনার। দীর্ঘদিন রাজপথে আমরা লড়াই সংগ্রাম করেছি। ঢাকা শহরে আওয়ামী লীগ ছাড়া যেন কোনো নেতাকর্মী না থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিতে হবে। আজকে রাতভর পাহারা দেব। কালকে যদি দেখি রাস্তায় নেমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তাহলে যারে যেখানে পাওয়া যাবে নুড়াইয়া ঠিক করে ফালামু।’

সরকারের অর্জনকে নসাৎ করতে বিএনপি দেশে আগুন সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশীয় আন্তর্জাতিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নেত্রী আমাদের যথাসময়ে নির্দেশ দিয়েছেন, এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার। এটাই হবে আজকের সমাবেশের শপথ।’

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘এই বাংলাদেশ জাতির পিতার বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে স্বাধীঅনতা এসেছে।এই মাসে কোনো রাজাকারের বাচ্চা, রাজাকারদের হুমকি আমরা বরদাশত করব না। দেশ চলবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এই দেশে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আগামী নির্বাচনেও আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজয় নিশ্চিত করে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এটাই আমাদের সকলের অঙ্গীকার।’

বিএনপির উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আর প্রতিবাদ নয়, এবারি প্রতিহত করতে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন জ্বালাবে সেই হাত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। যারা আমাদের নেতাকর্মীদের আঘাত হানবে, যে লাঠি দিয়ে আঘাত করবে, সেই লাঠি দিয়েই তাদের কুপোকাত করে প্রমাণ করতে হবে, এই বাংলাদেশ আমাদের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ বীর বাঙালির বাংলাদেশ। এখানে পাকিস্তানি প্রেতাত্মা খুনিদের কোনো ঠাঁই নাই।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সানজিদা খানম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন