বিজ্ঞাপন

ডা. আব্দুল আলীম; লাল সবুজে লেগে আছে যার নাম

December 14, 2022 | 10:54 am

মাহাবুব মাসফিক

লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। সেই মিছিলে শামিল হয়েছিলেন অসংখ্য চিকিৎসক। ডা. আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আব্দুল আলীম চৌধুরী তাদের মধ্যে অন্যতম। অসামান্য অবদানে লাল সবুজের পতাকায়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে তার নাম।

বিজ্ঞাপন

আলীম চৌধুরী বাংলা ১৩৩৫ সালের ৩ বৈশাখ কিশোরগঞ্জ জেলার চট্টগ্রাম থানার খয়েরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জেলা স্কুল পরিদর্শক আব্দুল হেকিম চৌধুরী ও সৈয়দা ইয়াকুতুন্নেছার তৃতীয় সন্তান তিনি। মেধাবী ছাত্র আলীম ১৯৪৫ সালে কিশোরগঞ্জ হাইস্কুল থেকে মেট্রিক, ১৯৪৮ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন।

১৯৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে কর্মস্থল হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই যোগদান করেন। ১৯৬১ সালে তিনি রয়্যাল কলেজ অব ফিজিসিয়ানস এন্ড সার্জনস ইংল্যান্ড থেকে ডিপ্লোমা ইন অপথালমোলজি ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবনে তিনি ইংল্যান্ডের রয়্যাল আই এন্ড ইয়ার হসপিটাল, হুইপস ক্রস হসপিটাল, সেন্ট জেমস হসপিটাল, বি এস এম এম ইউ (তৎকালীন আইপিজিএমআর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ও কুমুদিনী হাসপাতালে কাজ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া তিনি একজন দক্ষ সংগঠক ছিলেন। তিনি পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক, অপথালমোলজিক্যাল সোসাইটি অব পাকিস্তানের সাধারণ সম্পাদক, পূর্ব পাকিস্তান অন্ধকল্যাণ সমিতির কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ছাত্রজীবন থেকেই আলীম চৌধুরী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালে শহীদ দিবসে পতাকা উত্তোলনের অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬২ সালে লন্ডন বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি।

পাকিস্তান সরকার যখন রাজনৈতিক দলগুলোর উপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছিল তখন তার চেম্বারে অনেক দল গোপন বৈঠক করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা তিনি গোপনে চাঁদা উঠিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পৌঁছে দিয়েছেন, তিনি বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন হাসপাতালে পৌঁছে দিতেন। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম কিছুদিন তার বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

আলীম চৌধুরী ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। ছবি তোলা ও লেখালেখির শখ ছিল তার। তিনি সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। তিনি দৈনিক ইত্তেহাদ ও মিল্লাতের সাব-এডিটর ছিলেন। যাত্রিক নামে একটা পত্রিকা সম্পাদনাও করেছেন। তার লেখা বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ ও কবিতা আছে, আছে আবৃত্তির ক্যাসেট। ব্যক্তিজীবনে আব্দুল আলীম ছিলেন খুব সাদামাটা অনাড়ম্বর ও নিরহংকারী।

অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি সদা তৎপর ছিলেন। অসংখ্য গরীব রোগীকে তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও পরিবারকে সময় দেওয়ার চেষ্টা থাকতো তার।

১৯৭১ সালের জুলাই মাস। গ্রাম থেকে নিঃস্ব হয়ে ঢাকায় আসা আব্দুল মান্নানকে প্রতিবেশীর অনুরোধে অনিচ্ছাসত্ত্বেও নিজ বাসায় আশ্রয় দেন আলীম চৌধুরী। এই আব্দুল মান্নানই পরবর্তীতে তার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলো। বিজয়ের ঠিক আগের দিন— অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে চারটায় বাসার বারান্দায় দাড়িয়ে আব্দুল আলীম দেখছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর উপর ভারতীয় বিমানে বোমা হামলার দৃশ্য। তার মন তখন বিজয়ের স্বপ্নে বিভোর। এমন সময় একটি গাড়ি এসে থামে তার বাসার সামনে। গাড়ি থেকে নেমে আসে সরকারের চাটুকার বাহিনীর কয়েকজন সদস্য। তারা আব্দুল আলীমকে লুঙ্গি আর শার্ট পরা অবস্থায়ই তুলে নিয়ে যায়। ১৯ ডিসেম্বর তার মরদেহ পাওয়া যায় রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে।

বর্বর পাকিস্তানি ও তাদের এদেশীয় দোসররা নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে আলীম চৌধুরীকে। তার সারা গায়ে ছিল নির্যাতনের চিহ্ন, বুকটা ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল গুলিতে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ ১৯৯১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরীর নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। জনদরদী, সমাজদরদী আলীম চৌধুরী বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে থাকবেন চিরকাল।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন