১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেল

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সহজ যাতায়াত আর কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার ক্ষেত্রে গণপরিবহন ব্যবস্থায় সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘মেট্রোরেল’। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও জনপ্রিয় গণপরিবহনগুলোর শীর্ষে মেট্রোরেল। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এবং বিদ্যুৎচালিত এই পরিবহন এবার বাংলাদেশের গণপরিবহনে যুক্ত হচ্ছে। যা চলবে ১০০ কিলোমিটার গতিতে। ২০ মিনিটেই পারি দিতে পারবে ১০ কিলোমিটার পথ। ফলে শুধু যানজটের ভোগান্তি থেকেই মুক্তি মিলবে না, কম সময়ে পৌঁছানো যাবে গন্তব্যেও।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি মাসের যেকোনো সময় যাত্রী পরিবহনের জন্য যাত্রা শুরু করবে মেট্রোরেল। সে আয়োজনেরই প্রস্তুতি চলছে এখন।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগে ২০১২ সালে সায় দেয় সরকার। মোট ৬ ধাপে মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। যা বাস্তবায়ন করতে গঠন করা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। উড়াল ও পাতাল মিলিয়ে মোট ৬ ধাপে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫ এ দুই রুট রয়েছে নর্দান ও সাউদার্ন, এমআরটি লাইন-২, এমআরটি লাইন-৪।

২০১২ সালে একনেক অনুমোদন দেওয়ার পর গবেষণা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে মেট্রোরেল নির্মাণে জাপানের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে সরকার। পরের বছর প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা তৈরির কাজ শুরু করে। উত্তরা এলাকার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল ডিপো নির্মাণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আর দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চালুর কথা রয়েছে। আর তারপরে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চালু করা হবে।

ডিএমটিসিএলে’র মাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের কাজের অগ্রগতি ৯৭ শতাংশের বেশি। পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের সুবিধা মত সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন করবেন এমন তথ্য আগেই দিয়েছেন ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘উদ্বোধনের পর পরই পুরোদমে চালানো হবে না মেট্রো। শুরুতে শুধু সকাল ও বিকালে চলবে। এরপর ধীরে ধীরে চলার সময় বাড়বে।’

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেলের স্টেশন হবে নয়টি। এর ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা। আর সর্বনিম্ন ভাড়া দিতে হবে ২০ টাকা। মেট্রোরেলে নির্মাষ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মর্কতারা জানিয়েছেন, সর্বশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি ছয় বগির মেট্রোর ডিজাইন স্পিড ১১০ কিলোমিটার থাকলেও এর অপারেশন স্পিড ১০০ কিলোমিটার। যাত্রি নিয়ে এই গতিতেই ছুটে চলবে। প্রথম দিকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো পৌঁছাতে সময় নেবে ২০ মিনিট। পূর্ণমাত্রায় চালু হলে এই সময় কমে আসবে ১৬ থেকে ১৭ মিনিটে। আর শুরুর দিকে প্রতি দশ মিনিট পর পর ট্রেন আসবে-যাবে এরপর ধীরে ধীরে সময় কমিয়ে আনা হবে ৪ থেকে ৫ মিনিটে। আর প্রতিবারে যাত্রী পরিবহন করতে পারে ২ হাজার ৩০০ জন করে।

জানা গেছে, উদ্বোধনকে সামনে রেখে প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে ডিএমটিসিএল। ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ‘এ মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সুবিধাজনক একটি দিনে উদ্বোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।’

প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা প্রায় ৯০ ভাগ প্রস্তুতি শেষ করে ফেলেছি।’

উল্লেখ্য, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকারের গঠিত প্রতিষ্ঠান ডিএমটিসিএল। আর এতে অর্থায়ন করছে জাপানের সরকারি প্রতিষ্ঠান জাইকা। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিলো ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত যুক্ত হওয়ায় এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়।

মেট্রোরেল সংক্রান্ত আরও সংবাদ:
মেট্রোরেলের ভাড়া কিলোমিটারে ৫ টাকা 
চট্টগ্রামেও চলবে মেট্রোরেল, হচ্ছে ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান
মেট্রোরেলের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাবে বিআরটিসি’র বাস
মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহন এ মাসেই, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
মেট্রোরেলের টিকিট সংগ্রহ এবং যাতায়াত যেভাবে
মেট্রোরেলে যাতায়াতের নিয়ম জানা যাবে এমইআইসি থেকে 
মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা 
সড়ক থেকে সরছে মেট্রোর নির্মাণসামগ্রী, স্বস্তিতে নগরবাসী
রাত বারোটা পর্যন্ত ১০ মিনিট পর পর চলবে মেট্রোরেল
মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও পথে অগ্রগতি ৯৭.৬০ শতাংশ
যাত্রীদের মেট্রোরেলে চলাচলের ধারণা দিতে ‘মেট্রোগার্ল’ উদ্যোগ 
২০৩০ সালের মধ্যে প্রস্তুত হচ্ছে আরও তিন মেট্রোলাইন

সারাবাংলা/জেআর/এমও