বিজ্ঞাপন

করোনার টিকা আছে, মানুষ নেই

December 20, 2022 | 7:24 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনার সংক্রমণ রোধে ভ্যাকসিনের চতুর্থ ডোজ শুরুর প্রথমদিনে চট্টগ্রামে মানুষের তেমন সাড়া মেলেনি। পর্যাপ্ত টিকা থাকলেও বিভিন্ন কেন্দ্রে টিকা গ্রহীতাদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচারণার অভাব এবং করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় মানুষের টিকার প্রতি আগ্রহ কমেছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নিজে করোনার টিকার চতুর্থ ডোজ নিয়ে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

সিটি করপোরেশন ও সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম নগরীর ১১টি কেন্দ্রে করোনার টিকার চতুর্থ ডোজ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলো হলো- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, চসিক জেনারেল হাসপাতাল, মোহরা ছাফা মোতালেব হাসপাতাল, বন্দরটিলা হাসপাতাল, দামপাড়া পুলিশ লাইন হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী হাসপাতাল এবং উত্তর কাট্টলী মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার মাতৃসদন ও হাসপাতাল।

তবে প্রথমদিনে মঙ্গলবার শুধু চসিকের জেনারেল হাসপাতাল, চমেক হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে টিকা দেয়া হয়েছে। বাকি কেন্দ্রগুলোতে বুধবার থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন চসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু সালেহ।

বিজ্ঞাপন

এদিকে চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলার প্রতিটিতে একটি কেন্দ্রে মঙ্গলবার থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘যারা চার মাস আগে করোনার তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন, তারা চতুর্থ ডোজ নিতে পারবেন। আমরা ফাইজারের টিকা দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছি।’

বিজ্ঞাপন

সকালে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ডোজের সময় যে চিত্র ছিল তার চেয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। আগে জেনারেল হাসপাতালের ভেতরে বুথের সামনে থেকে লাইন শুরু হয়ে বাইরে মূল ফটক পেরিয়ে চলে যেত কয়েক’শ গজ। এবার দেখা গেছে, বুথে টিকা নিয়ে অপেক্ষায় আছেন কর্মীরা। মাঝে মাঝে দু’য়েকজন আসছেন আর টিকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

হাসপাতালের নিচের কক্ষে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য করা হয়েছে আলাদা দু’টি বুথ। দোতলায় ভিআইপিদের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা, সেখানে দু’জন নার্স টিকা নিয়ে ঠাঁই বসেছিলেন। তিনটি বুথে সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন মাত্র ১৮৩ জন, যার মধ্যে ৯৮ জন পুরুষ ও ৮৫ জন মহিলা।

৬২ বছর বয়সী মো. ইউনুস টিকার চতুর্থ ডোজ নিতে জেনারেল হাসপাতালে এসে ফাঁকা পরিস্থিতি দেখে নিজেই অবাক বনে যান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আবার টিকা দেয়া হবে এটা জানতাম না। টেলিভিশনে দেখে টিকা দিতে এসেছি। এখানে এসে দেখি, লোকজন নেই। আসামাত্র টিকা নিতে পেরেছি। আগে তিন-চার ঘন্টা অপেক্ষার পর টিকা দিতে পেরেছিলাম।’

বিজ্ঞাপন

সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি অথবা জটিল রোগে ভুগছেন তাদের প্রথমে করোনার চতুর্থ ডোজ দেওয়া হচ্ছে। আগে যেভাবে গণটিকা দেওয়া হয়েছিল, সেভাবে দেওয়া হচ্ছে না। এজন্য অন্য সময়ের চেয়ে মানুষের উপস্থিতি একটু কম ছিল।’

টিকা নিতে মানুষের অনাগ্রহ কেন- এমন প্রশ্নে ডেপুটি সিভিল সার্জন ওয়াজেদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংক্রমণ আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। মানুষের মধ্যেও মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পরই আর টিকা নেননি। যেহেতু মহামারি এখন নেই বললেই চলে, সেজন্য সাধারণ মানুষের মধ্যেও আগ্রহ আর সেভাবে নেই। আমরা প্রচার-প্রচারণা যথেষ্ঠ করেছি। পর্যাপ্ত পরিমান টিকাও আমাদের কাছে মজুদ আছে।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মানুষের মনে করোনা নিয়ে আগে যে ভয় ছিল, সেটা এখন আর নেই। তাই টিকাকে সাধারণ মানুষ তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। তবে সামনে যে আরো একটা মহামারি আসবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। সচেতন থাকার কোনো বিকল্প নেই।’

চসিকের স্বাস্থ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংক্রমন আগের অবস্থায় না থাকায় অনেকেই টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। আমরা বলে-কয়েও লোকজনকে কেন্দ্রে নিতে পারছি না।’

সারাবাংলা/আইসি/এনইউ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন