ঢাকা: প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
বিষয়টি নিশ্চিত করে খন্দকার মাহবুব হোসেনের জুনিয়র আইনজীবী মাসুদ রানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাত পৌনে ১১টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা খন্দকার মাহবুব হোসেন স্যারকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেছেন।’
খন্দকার মাহবুব হোসেন ১৯৩৮ সালের ২০ মার্চ বরগুনার বামনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা খন্দকার আবুল হাসান ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ। উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় খন্দকার মাহবুব হোসেন ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ অ্যাসোসিয়েশনের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে আইন পাস করে তিনি আইন পেশায় যুক্ত হন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নেপথ্যে থেকে সহায়তা করেন মুক্তিযোদ্ধাদের। ১৯৭১ সালের মার্চের মাঝামাঝিতে হাইকোর্টে আইনজীবীদের একটি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হলো বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন দেওয়ার। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানসহ আইনজীবীদের নিয়ে জেলা কোর্টে একটি সমাবেশের আয়োজন করেন। ওই সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বক্তব্য দেন তিনি। যুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধারা তার বাসাকে অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহার করতেন।
১৯৬৭ সালে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আদালতের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে তিনি নিয়োগ লাভ করেন তিনি।
১৯৮৮ সালের ১৭ জুলাই তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে চার বার (২০১০-২০১১, ২০১১-২০১২, ২০১৪-২০১৫ ও ২০১৫-২০১৬ সাল) নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইবার (২০০৭-২০০৮ ও ২০১২-২০১৫ সাল) দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে খন্দকার মাহবুব অধ্যাপিকা ফারহাত হোসেনকে বিয়ে করেন। দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের বাবা তিনি।
প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের মৃত্যুতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গভীর শোক প্রকাশ করছেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন।
রোববার (১ জানুয়ারি) বিভিন্ন সময়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ছাপড় মসজিদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন চক্ষু হাসপাতাল, মিরপুর (বিএনএসবি), বিএনপি অফিসের সামনে, চৌধুরীপাড়া মাটির মসজিদ ও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।