বিজ্ঞাপন

লাইসেন্স ও তরঙ্গ ফি প্রদানে ৩ অপারেটর কর রেয়াত পাবে না

January 10, 2023 | 4:55 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: লাইসেন্স ও তরঙ্গ ফি প্রদানে ৩ অপারেটর কর রেয়াত পাবে না। দেশের তিনটি প্রধান মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংককে তাদের লাইসেন্স নবায়ন এবং তরঙ্গ কেনার জন্য প্রদানকৃত অর্থের সঙ্গে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া একই উদ্দেশ্যে প্রদেয় ভ্যাট (কর) থেকে অপারেটররা কোনো কর রেয়াত সুবিধা পাবে না।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) তিন মোবাইল ফোন অপারেটরদের করা একাধিক আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, বিটিআরসির পক্ষে আইনজীবী রেজা-ই রাকিব ও মোবাইল অপারেটরদের পক্ষে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান শুনানি করেন।

রায়ের পর গ্রামীণফোনের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, আমাদের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স পায়। সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ১৫ বছর মেয়াদে এই লাইসেন্স প্রদান করে। পরে ২০০১ সালে বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন অ্যাক্ট নামে একটি আইন পাস করে। সেই আইনের আওতায় বিটিআরসি প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

এরপর ২০১১ সালের মোবাইল কোম্পানিগুলোর লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলে অপারেটরগুলো আবার নবায়নের জন্য আবেদন করে। তখন নতুন করে প্রশ্ন উঠে এই লাইসেন্স ফির ওপরে ভ্যাট বসবে কিনা। ভ্যাট বসলে বিটিআরসির কাছে জমা দেওয়া টাকা থেকে ভ্যাট কাটা হবে; না বিটিআরসির কাছে জমা দেওয়া টাকার ওপরে ভ্যাট আরোপ করে সরকারের রাজস্ব খাতে জমা দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিটিআরসির কাছে জমা দেওয়া টাকার ওপরে ভ্যাট প্রদান করা হলে এর ওপর মোবাইল কোম্পানিগুলো রিভ্যাট (কর রেয়াত) পাবে কিনা?

এ ক্ষেত্রে গ্রামীণফোনের মামলায় হাইকোর্ট আদেশ দেন যে গ্রামীণফোন রিভ্যাট পাবে। রবির মামলায়ও আদালতের রায়ে বলা হয় তারা রিভ্যাট পাবে। তবে বাংলালিংকের মামলায় বলা হয় তারা রিভ্যাট পাবে না।

এসব বিষয়ে আজ আপিল বিভাগ বলেছে, বিটিআরসির কাছে জমা দেওয়া টাকার ওপরে ভ্যাট আরোপ করা হবে, তবে মোবাইল কোম্পানিগুলো কোনো রিভ্যাট (কর রেয়াত) পাবে না। একই সঙ্গে ২০১১ সালে লাইসেন্স নবায়নকালে তরঙ্গ কেনার ক্ষেত্রে ফি প্রদান করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামীণফোন যখন তরঙ্গ কেনি তখন প্রত্যেক মেগাওয়াটস বাবদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করা হয়। প্রতি মেগাওয়াটস বাবদ ১৫০ কোটি টাকা প্রদান করতে হয়। এরপর ২০১১ সালে বিটিআরসি লাইসেন্স ও তরঙ্গ বরাদ্দ নবায়ন করার ক্ষেত্রে একটি গাইডলাইন দেয়।’

সেখানে বলা হয়, বাজারে দুটো বড় প্রতিযোগী রয়েছে। যারা বাজারে প্রভাব বিস্তার করে। এই দুই কোম্পানির মধ্যে একটি গ্রামীণফোন আর অন্যটি হলো বাংলালিংক। তাদের বরাদ্দকৃত তরঙ্গের ওপর একটি ফি প্রদান করতে হবে। তা হচ্ছে- মার্কেট কম্পিটিশন ফেক্টর ফি। যেহেতু গ্রামীণফোন বাজারে প্রভাব বিস্তার করে, তাই গ্রামীণফোনের জন্য বরাদ্দকৃত তরঙ্গের ওপর প্রদেয় ফি এর ওপর ১.৪৮ হারে গুণ করে দিতে হবে। আর বাংলালিংকের মার্কেটে প্রভাব কম থাকায় তাদের ক্ষেত্রে ১.০৮ হারে গুণ করে ফি দিতে হবে। এই টাকাগুলো বিটিআরসিকে প্রদান করতে হবে। এটা কিন্তু তরঙ্গ বরাদ্দের জন্য আলাদা কোন ফি না। এটা হচ্ছে তরঙ্গ বরাদ্দের জন্য যে ফি সেই ফি নির্ধারণ করার একটি হিসাব।

আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান আরও বলেন, মার্কেট কম্পিটিশন ফেক্টরের (এমসিএফ) বিষয়ে মোবাইল অপারেটরদের কোনো আপত্তি নেই। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও তা আছে। কিন্তু ২০০৮ সালে বাংলালিংক এবং গ্রামীণফোন বিটিআরসির কাছ থেকে ১৮ বছর মেয়াদে কিছু তরঙ্গ ক্রয় করে। সে সময় তাদের বলা হয়, ২০০৮ সালে যতটুকু তরঙ্গ কিনেছে সেই তরঙ্গের জন্য নতুন করে আর কোনো ফি আরোপ করা হবে না। তবে ২০১১ সালে বিটিআরসি- ২০০৮ সালে যে তরঙ্গ বরাদ্দ দিয়েছিল সেটার ওপর ২০১১ সালের পরবর্তী প্রদেয় টাকার ওপর মার্কেট কম্পিটিশন ফেক্টর আরোপ করতে চেষ্টা করে।

এই বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হলে, হাইকোর্ট গ্রামীণফোনের পক্ষে রায় দেন। রায়ে বিটিআরসির সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে। তবে হাইকোর্ট বাংলালিংকের বিরুদ্ধে রায় দেন। রায়ে আদালত বলেন, ২০০৮ সালের বরাদ্দকৃত তরঙ্গের ওপরেও ২০১১ সালের পরের থেকে যে বাৎসরিক ফি সেটির ওপর এমসিএফ পড়বে।

বিজ্ঞাপন

এই ব্যাপারে বিটিআরসি গ্রামীণফোনের ওপর সংক্ষুব্ধ। গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে বিটিআরসির আপিল নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সেই আপিল কীভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে তা আমি জানি না। সুতরাং এমসিএফের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় না দেখে আমি মন্তব্য করতে পারবো না।

এই রায়ের ফলে মোবাইল কোম্পানিগুলো ভ্যাটের বিপরীতে কোন রিভ্যাট (কর রেয়াত) পাবে না।

রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, গ্রামীনফোন, রবি এবং বাংলালিংকের ওপর সরকার যে তরঙ্গ বরাদ্দ করে তার ওপর চার্জ করা হয়। এর সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত করা হয়। এই ভ্যাটযুক্ত করার কারণে তারা হাইকোর্টে এসে মামলা ফাইল করে দেয়। হাইকোর্ট তাদের রিট খারিজ করে দেয়। এর বিরুদ্ধে তারা আপিলে আবেদন করলেও আদালত শুনানি নিয়ে তাদের আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

এর ফলে এখন এ সব প্রতিষ্ঠান থেকে এনবিআর এবং বিটিআরসি টাকা আদায় করবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আমরা শুনানিতে বলেছি, ভ্যাটের ক্ষেত্রে ২০১১ সালের আইনটা সংশোধন করা হয়েছে। এই সংশোধনের ফলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা এই ভ্যাট দাবি করতে পারি।

আর বিটিআরসির পক্ষের আইনজীবী খোন্দকার রেজা-ই রাকিব বলেন, তিনটি মোবাইল অপারেটরের কাছে লাইসেন্স নবায়ন ফি এবং রেভিনিউ শেয়ারিং ফিসহ বিভিন্ন ফি বাবদ ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো পাবো। এর সঙ্গে আরও ৩০০ কোটি টাকার মতো পাবো। আজকের রায়ের পর রায়ের সার্টিফায়েট কপি পাওয়ার পর থেকে আমরা টাকা দাবি করব।

পাওনা টাকার মধ্যে গ্রামীনফোনের কাছে ১৫০০ কোটি টাকা, রবির কাছে ৫৫০ কোটি টাকা এবং বাংলালিংকের কাছে ৬৫০ কোটি টাকা পাবো। বলে দাবি করেন বিটিআরসির আইনজীবী খোন্দকার রেজা-ই রাকিব।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন