আমার প্রত্যাশা নেই, আশা করি সাকিব-তামিমরা সম্মানটা পাবে: মাশরাফি

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট

নবম বিপিএলের আগে অনেকদিন যাবত ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। এদিকে বয়স ৪০শে পরেছে। সেই মাশরাফিই কিনা বিপিএলে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন। অধিনায়কত্বের জাদু তো দেখাচ্ছেনই, বল হাতেও দুর্বার ২০২০ সালে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা মাশরাফি। যাতে আবারও পুরনো আলোচনাটা নতুন করে উঠেছে।

মাশরাফিকে মাঠ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিদায় নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার আলোচনা পুরনো। সাবেক সফল অধিনায়ককে মাঠ থেকে বিদায় দেওয়ার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে সেটা হয়নি। বিপিএলে দুর্দান্ত পারফর্ম করা মাশরাফিকে জাতীয় দলে ডেকে তাকে মাঠ থেকে বিদায় দেওয়ার আয়োজন নিয়ে কদিন ধরেই কথা উঠছে। নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক এই প্রসঙ্গে ‘খারাপ হয় না’ বলেছিলেন। মাশরাফি নিজে কি ভাবছেন?

মাশরাফি বলেছেন, এমন প্রত্যাশা করছেন না। তবে সিনিয়র ক্রিকেটারদের মাঠ থেকে বিদায় নিতে দেওয়ার সংস্কৃতিটা থাকা দরকার। মাশরাফি বলেছেন, সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা যেন এই সুযোগটা পান।

নবম বিপিএল এখন সিলেটে। ঢাকার দুই পর্ব এবং চট্টগ্রাম পর্ব শেষে শুক্রবার থেকে সিলেটে শুরু হবে বিপিএল। প্রথম ম্যাচেই রংপুর রাইডার্সের মুখোমুখি হবে মাশরাফির স্বাগতিক সিলেট। আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি এলে উঠল মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার বিষয়টি।

মাশরাফি বলেন, ‘সত্যি বলতে হওয়া উচিত (মাঠ থেকে বিদায়ের সুযোগ)। আমি মনে করি প্রতিটা খেলোয়াড়…বিশেষ করে সাকিব…এখন যারা আছে। আমি নিজেরটা বলতে পারব না কারণ অনেকদিন আগেই ছেড়ে এসেছি (ক্রিকেট)। আমার কোনো প্রত্যাশা নেই। আমি নিজেও বিশ্বাস করি না নিজেদের ক্ষেত্রে।’

‘আপনাদের এখানে এসে বলে গেছি, যখন ক্রিকেট শুরু করি, তখন জাতীয় দলে খেলবো সেই আশা করিনি। বাসা থেকে বলা হয়েছিল পড়ালেখা করো, আমি ক্রিকেট বেছে নিয়েছি। তখন এত অর্থ, গাড়ি-বাড়ি কিছুই ছিল না। ক্রিকেট দিয়েই কিন্তু জীবনের সবকিছু হয়েছে। একটা পর্যায়ে ক্রিকেট প্যাশন থেকে পেশা হয়েছে। প্যাশনটা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে একটা পর্যায়ে হয়তো অর্থ না দিলেও ক্রিকেট খেলতাম। এমন তেমন কোনো অর্থ আমি ক্রিকেট থেকে পাই না। তো এটা শুধু পেশার ব্যাপার না এখন, এটা প্যাশনের ব্যাপার। আমি যখন ক্লাস সিক্স-সেভেন-এইটে পড়ি, তখন থেকেই এই স্পোর্টসটাকে পছন্দ করি যখন ক্রিকেটের ওই ইমেজ ছিল না, তখন থেকেই ভালোবেসেছি। আমি ক্রিকেট খেলেছি ভালোবেসে, এখনও ভালোবাসি এজন্য খেলি।’

‘কোনো প্রত্যাশা নিয়ে আসিনি, যেতেও চাইনি। তিন বছর আগেও এই প্রত্যাশা নিয়ে এখান থেকে যাইনি যে আমাকে ক্রিকেট বোর্ড থেকে বা কোনো জায়গা থেকে কী দেবে। আগেও বললাম আমার হ্যাপিনেস আমার কাছে, হ্যাপিনেস কারো কাছে বিক্রিও করতে আসিনি, কিনতেও আসিনি। আমার যেটা মন চেয়েছে, যেটা মনে করে ঘরে গিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারবো, সেটাই করেছি ক্রিকেটের ক্ষেত্রে। এজন্য আমি কারো কাছে কিছু আশা করি না। সত্যি বললাম, হাজারবার বললে হাজারবারই বলবো আমি কিছুই আশা করি না।’

তবে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার এই সংস্কৃতিটা থাকা উচিত বলেছেন মাশরাফি, ‘অবশ্যই ওই সংস্কৃতিতে যাওয়া উচিত, ওই সংস্কৃতি সেট আপ করা দরকার। যারা আছে এখন, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ, তামিম, কেউ স্বীকার করুক বা না করুক; তারা বাংলাদেশের কিংবদন্তি। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। তাদের ক্ষেত্রে যেন ওই সুযোগ বাংলাদেশের মানুষ পায়…তারা যেন ওই সম্মানটা নিয়ে মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারে।’

‘দীর্ঘদিন, দীর্ঘসময় তারা শ্রম দিয়েছে। অনেক কিছু ত্যাগ করেই সময় দিয়েছে তারা ক্রিকেটে। মানুষ তো হিসাব করে কত টাকা পেল। কিন্তু তারা যে শ্রম দিয়েছে, দিনের পর দিন ত্যাগ করেছে, এটা কেউ জানে না। ওই সম্মানটা যেন তারা পায়। যারা মধ্য বয়সে আছে, তরুণ আছে, তারা যেন বিশ্বাসটা আসে, আমাদের দেশ থেকে এতটুকু সম্মান নিয়ে যেতে পারবো।’

মাশরাফি বলেন, ‘আমার ক্ষেত্রে কোনো প্রত্যাশা নেই। এ নিয়ে কোনো রাগ, ক্ষোভ, কিছুই না। আমার কোনো ক্ষোভ নাই। কেবল বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা আছে।’

সারাবাংলা/এসএইচএস