বিজ্ঞাপন

যেভাবে ফেরারি ছিলেন ফাঁসির আসামি আদিল-মুকুল

January 31, 2023 | 4:15 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি নকিব হোসেন আদিল সরকার (৬৯) ও মোখলেছুর রহমান মুকুলকে (৬৭) গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-২)।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে, গতকাল সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর দক্ষিণখান ও ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ আলীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ২০১৫ সালে একটি মামলা হয়। এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি নকিব ও মোখলেছুরসহ সাতজনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৫ সালে মামলা দায়েরের পরপরই এই দুইজন আত্মগোপনে চলে যান। তারা পরিচয় পাল্টিয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল নম্বর দিয়ে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, রায় ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যেই দু’জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‍্যাব।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ আলী নদী পারাপারে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা জুন-জুলাইয়ের দিকে ত্রিশালের আহমেদাবাদে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পারাপারে সহযোগিতার কারণে ইউনুছ আলীকে রাজাকারদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং টর্চার সেলে নির্যাতনের পর ১৫ আগস্ট সকালে তাকে গুলি করে হত্যা করে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর শহীদ ইউনুস আলীর ছেলে ময়মনসিংহের বিচারিক আদালতে নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে আদালত বিচারিক কার্যক্রমের জন্য মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন।’

‘এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় উভয়ের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৭ সালে বর্ণিত অভিযোগের তদন্ত শেষে নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন’- বলেন র‌্যাবের এই কর্মকতা।

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে দু’জন রায়ের আগেই স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন। গত ২৩ জানুয়ারি নকিব ও মোখলেছুরসহ সাতজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারীর ধারাবাহিকতায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার নকিব ও মোখলেছুর মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় বাঙালিদের আটক, নির‍্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’

‘২০১৫ সালে মামলার তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকেই আসামিরা পলাতক ছিলেন। তারা গ্রেফতার এড়াতে নিজ এলাকা ত্যাগ করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন এবং একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করেন। তাদের ছেলে-মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত অর্থ প্রদান করতেন। আত্মগোপনে থাকাকালে তারা সাধারণত জনসমাগমের স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলতেন’- বলেন কমান্ডার মঈন।

সারাবাংলা/ইউজে/এনএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন