বিজ্ঞাপন

মায়ের কাছে যেতে হবে শুনে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো লিনা

February 3, 2023 | 8:58 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশে অবস্থানরত জাপানি বংশোদ্ভূত দুই শিশুর মধ্যে ছোট শিশু নাকানো লায়লা লিনাকে একদিন বাবার কাছে এবং আরেকদিন মায়ের কাছে থাকার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালত লায়লাকে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকার এই আদেশ দেন।

আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার জেলা ও দায়রা আদালত এই মামলার আপীল বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন বাদী পক্ষের আইনজীবীরা।

এদিন রাজধানীর গুলশান থানার এসআই মামুন মিয়া তাদের আদালতে হাজির করেন। সকাল থেকে তার সাথে ছিলেন বাবা ইমরান শরীফ। আর বড় মেয়ে নাকানো জেসমিন মালিকাকে নিয়ে আদালতে হাজির হয়েছেন মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।

বিজ্ঞাপন

প্রথমে তারা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালতে অপেক্ষা করেন। এরপর যান ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমানের আদালতে। পরে দুপুরে আবার সিএমএম আদালতে আসেন।

দুপুর পৌনে দুইটার দিকে শুনানি শুরু হয়। চলে সোয়া তিনটা পর্যন্ত। শুনানি চলার আগে ও শুনানি চলাকালে সময় মা ও বোন লিনার অনেক বার কথা বলার চেষ্টা, মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছে। তবে একবারের জন্যও তাদের দিকে তাকায়নি লিনা। হয়তো মোবাইলে গেমস খেলেছে না হয় বাবার বুকে মাথা লুটিয়েছে। মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার কথা শুনলে কেঁদেছেও।

বিজ্ঞাপন

এদিন আদালতে মায়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট শিশির মনির শুনানি করেন। আর বাবার পক্ষে আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী শুনানি করেন।

শুনানিতে মায়ের আইনজীবী শিশির মনির দাবি করেন, পারিবারিক আদালত বাবার মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। সেই খারিজের রায় অনুযায়ী উভয় সন্তান মায়ের কাছে থাকবে। রায়ের পর বাবা ছোট মেয়ে নাকানো লায়লা লিনাকে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন। তাই জাপানী মা গুলশান থানায় জিডি করেন। সেই জিডির ভিত্তিতে র‌্যাব এই শিশুকে উদ্ধার করে। মা রায় পেয়েছে। তাই এই শিশু এখন মায়ের কাছেই থাকার অধিকারী। বাবা কোনো অধিকার রাখেন না তার কাছে রাখার।

বাবার আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী বলেন, বাবা সন্তানকে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে যান নাই। মিথ্যা তথ্য দিয়ে জিডি করেছেন। পারিবারিক আদালত বাবার মামলা খারিজ করে রায় দিয়েছেন। রায় যথাযথ হয়নি। তাই আমরা জেলা জজ আদালতে আপিল করেছি। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি আপিল শুনানি হবে।

তিনি আরও বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর লায়লা লিনা ও জেসমিন মালিকাকে নিয়ে মা এরিকো নাকানো জাপান চলে যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন আটকে দেয়। তখন বাবা খবর পেয়ে এয়ারপোর্ট যান। সেখানে ছোট মেয়ে লায়লা লিনা বাবার কাছে ছুটে আসে এবং কাঁদতে কাঁদতে বলে সে জাপান যেতে চায় না, বাবার কাছে থাকতে চায়। তখন থেকেই সে বাবার কাছে আছে। সে মায়ের কাছে যেতে চাই না। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছি। তাই আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই সন্তান বাবার কাছে থাকার আইনগত অধিকার রয়েছে। আপনি (বিচারক) শিশুর বক্তব্য শুনুন সে বাবার কাছে থাকতে চায় কি না। যদি না চায় তাহলে দিয়ে দিন। আর লিনা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে। আপনারা তার বক্তব্য শুনুন।

বিজ্ঞাপন

এরপর বিচারক খাসকামড়ায় শিশু লায়লা লিনার বক্তব্য শ্রবণ করেন। এরপর আদেশ দেয়ার সময় বলেন, আমি শিশু সন্তানের বক্তব্য শুনলাম, সে বাবার কাছে থাকতে চায়। না হয় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যেতে চাই। আমি আর কি করতে পারি।

তখন মায়ের আইনজীবী বলেন, উচ্চ আদালত সন্তানদের বাবা-মা উভয়কেই একদিন একদিন করে দেখা করার অনুমতি দিয়েছিলেন। আপনি সেভাবে আদেশ দিতে পারেন। তখন বাবার আইনজীবী বলেন, যেখানে এই সন্তান মায়ের কাছে যেতে চান না সেখানে এমন আদেশ দেয়া বেআইনি হবে। আর এভাবে আদেশ দেয়ার এখতিয়ার পারিবারিক আদালত ছাড়া এ আদালতের নেই। এরপর বিচারক বলেন, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিশুটি একদিন বাবা এবং একদিন মায়ের কাছে থাকবে।

আদালতের আদেশের পর বাবাকে জড়িয়ে ধরে শিশু লিনাকে কান্না করতে দেখা যায়। এর আগে এদিন বেলা পৌনে ১২টার দিকে শিশু লায়না রিনা সাংবাদিকদের বলেন, আমি বাবার কাছে থাকতে চাই, মায়ের কাছে যাব না।

সারাবাংলা/এআই/এনইউ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন