May 4, 2018 | 1:23 pm
।।স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ আটক হওয়া আশরাফ ও হাসান দুই জন আপন ভাই। ইয়াবা বিক্রি করে তারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এর মধ্যে বড় ভাই আশরাফ আলী (৪৭) দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ‘ইয়াবা গডফাদার’ বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, আশরাফ নিজেই মিয়ানমারে গিয়ে ইয়াবা কিনে আনে। কোস্টগার্ডের চোখ এড়াতে সে বিশেষ কৌশলে পানির নিচ দিয়ে ইয়াবার চালান আনতো। সর্বশেষ ১৩ লাখ ইয়াবার চালানও আশরাফ ইয়াঙ্গুন থেকে নৌপথে চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ মে) গভীর রাতে নগরীর হালিশহর থানার শ্যামলী আবাসিক এলাকায় আশরাফ আলীর ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ১৩ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় তার ভাই মো. হাসানকেও (২২) আটক করা হয়। আশরাফ এলাকায় ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (পশ্চিম) মইনুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, ফ্ল্যাটে আশরাফের ঘর থেকে ৪ লাখ এবং গ্যারেজে রাখা প্রাইভেট কার থেকে বাকি ৯ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
মইনুল জানান, শয়নকক্ষে ইয়াবার যে কার্টনগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো ছিল পানিতে ভেজা। আশরাফ পুলিশকে জানায়, ইয়াবাভর্তি সেই কার্টনগুলো রশি দিয়ে বেঁধে ট্রলার থেকে পানির নিচে ফেলা হয়। পানির নিচ দিয়েই সেগুলো আনা হয়। কোস্টগার্ডের চোখ ফাঁকি দিতে এই কৌশল করা হতো।
সহকারী কমিশনার মইনুল আরও বলেন, ‘ইয়াবার ছোট ছোট প্যাকেটগুলো প্রথমে কার্টনে ভরা হয়েছে। তারপর ৭-৮ স্তরের বায়ুনিরোধক রেপিং দিয়ে মোড়ানো হয়। প্রতিটি কার্টনকে প্রায় ৪০টির মতো পলিথিনে মুড়িয়ে সেগুলো রশিতে বেঁধে ট্রলার থেকে ফেলা হয় পানিতে।’
নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে জানান, এক সপ্তাহ আগে আশরাফ নিজেই মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে যায়। সেখান থেকে ইয়াবা নিয়ে প্রথমে একটি ট্রলারে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপ আসে। সেন্টমার্টিন থেকে একটি স্পিডবোট নিজে চালিয়ে যায় সাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে। সেখানে স্পিডবোট নষ্ট হলে এক লাখ টাকায় একটি মাছ ধরার বড় নৌকা ভাড়া করে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারিতে এসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইয়াবাগুলো খালাস করে। সেখান থেকে প্রাইভেট কারে ইয়াবাগুলো নিয়ে যাওয়া হয় বাসায়।
কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রায় প্রতিমাসেই আশরাফ দেশের বাইরে যায়। কখনো সিঙ্গাপুরে, কখনো থাইল্যান্ড যাবার কথা বলে আসলে সে যায় মিয়ানমারে। সেখান থেকে সরাসরি ইয়াবা নিয়ে আসে সে। মিয়ানমারে যারা ইয়াবা তৈরি করে তারা বাকিতেও আশরাফকে ইয়াবা দেয়। বিক্রির পর সেই টাকা আবার হুন্ডির মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ইয়াবা কেনার টাকাও লেনদেন হয় হুন্ডির মাধ্যমে।’
গত পাঁচ বছর ধরে এই নিয়মেই আশরাফ ব্যবসা করে আসছে, এমনটাই জানালেন কামরুজ্জামান। আশরাফ ও হাসান বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে।
পুলিশ সূত্র জানায়, বান্দরবানে থাকতে ছোট ছোট ইয়াবার চালান আনতেন আশরাফ আলী। একবার ধরা পড়ে জেলে যাবার পর পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরীতে চলে আসে সে। এরপর শুরু করে লাখ লাখ ইয়াবার চালান আনা। অল্পদিনেই কোটি কোটি টাকার মালিক যায় সে।
পুলিশ কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আশরাফ ইয়াবা ব্যবসা করে গর্ববোধ করে। আটকের পর বলে, সে কাজ করে খায়। বিভিন্ন মসজিদে এসি, ফ্রিজ দিয়েছে। মাদ্রাসায় দান-খয়রাত করেছে।’
সারাবাংলা/আরডি/এমও/