বিজ্ঞাপন

বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণ: ক্ষমা চাইলেন নীলফামারীর বার সভাপতি

February 8, 2023 | 4:27 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: হাইকোর্টে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মমতাজুল হকসহ তিন আইনজীবী। আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আইন-আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং বিচারকের সঙ্গে অপেশাদারিত্ব ও আক্রমণাত্মক আচরণের অভিযোগ তাদের তলব করেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে লিখিতভাবে এ ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করা হয়। ক্ষমাপ্রার্থী অপর দু’জন হলেন- আইনজীবী মো. আজহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলম।

লিখিত ক্ষমা প্রার্থনার পর হাইকোর্ট ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। সেদিন নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে হাজির হতে হবে।

আদালতে তিন আইনজীবীর পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, বার কাউন্সিলের সদস্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) গোলাম সারোয়ারের এসব অভিযোগ প্রধান বিচারপতির নির্দেশে উপস্থাপনের পর ২৫ জানুয়ারি তাদের তলব করেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজুল হকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

অভিযোগের বিষয়ে জানা যায়, গত বছরের ২৮ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের এক মামলায় হাজতি আসামির জামিন নামঞ্জুর এবং অপর আসামিদের জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নামঞ্জুর করেন নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১–এর বিচারক মো. গোলাম সারোয়ার। এ আদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ওই মামলায় নিয়োজিত তিন আইনজীবীসহ তাদের অপর সহযোগী আইনজীবীরা ‘মারমুখী ও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এজলাসের টেবিল চাপড়িয়ে বিকট শব্দে’ বিচারকের প্রতি বিভিন্ন উক্তি করে হামলা করার প্রয়াস চালান উল্লেখ করে বিচারক মো. গোলাম সারোয়ার গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর একটি পত্র পাঠান। ওই পত্রে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর পাঠানো ওই পত্রে বলা হয়, ‘গত ২৮ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণকারী আসামি হাছিনা বেগমের আত্মসমর্পণপূর্বক জামিন শুনানি, আসামি আইনুল হকের জামিনের মেয়াদ বর্ধিতকরণ এবং হাজতি আসামি হাছিনার জামিন শুনানির জন্য ছিল। আমি পুলিশ রিপোর্ট, চিকিৎসা সনদ পর্যবেক্ষণ করে এবং আদালতে উপস্থিত ভিকটিম মোছা. মারুফাকে পরীক্ষা অন্তে হাজতি আসামির জামিন নামঞ্জুর করি। এবং অপরাপর আসামিদের জামিন আবেদন এবং মেয়াদ বর্ধিতকরণ আবেদন নামঞ্জুরপূর্বক জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করি। এই আদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই অত্র মামলার নিয়োজিত আইনজীবী মমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলমসহ তাদের অপরাপর সহযোগী আইনজীবীরা অত্যন্ত মারমুখী হয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এজলাসের টেবিল চাপড়িয়ে বিকট শব্দে আমার প্রতি বিরূপ উক্তি উচ্চারণপূর্বক হামলা করার প্রয়াস চালায়।’

‘তারা হুমকি দিয়ে বলে, জামিন দিয়ে নেমে যা, সরি বল, চাকরি করার দরকার নাই, বাড়ি গিয়ে বসে থাক, কোথা থেকে পড়াশোনা করেছো, আইন-কানুন জানো না, নীলফামারীর বার খুবই ভয়ঙ্কর। এর আগেও অনেক বিচারককে পিটিয়ে এখান থেকে তাড়িয়েছি, কোথা থেকে এসেছো, এসেই উল্টাপাল্টা আদেশ দাও।’

‘এই পরিস্থিতিতে অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তাদের সঙ্গে কোনোরূপ তর্কে না জড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এজলাসের কার্যক্রম মুলতবি রেখে আমার খাস কামরায় চলে যাই। খাস কামরায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। অপেক্ষাকালেও বার সভাপতি আইনজীবী মমতাজুল হক, সহ-সভাপতি আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম এবং আইনজীবী ফেরদৌস আলম আমাকে জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। ওই সময়ে উপস্থিত অপরাপর আইনজীবীদের নিয়ে যে আচরণ করেছেন তাতে বাংলাদেশ বিচার বিভাগের অধস্তন আদালতের সর্বোচ্চ পদে আসীন হিসাবে হতাশ, বাকরুদ্ধ, মর্মাহত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছি। ওই ঘটনার কারণে আমিসহ এই জেলার অপরাপর বিজ্ঞ বিচারকরা নিরাপত্তাহীনতাসহ লাঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাবোধ করছি। এমতাবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহোদয়ের সদয় মর্জি হয়।’

জেলা জজ গোলাম সারোয়ারের পাঠানো অভিযোগপত্রটি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন রেজিস্ট্রার জেনারেল। পরে গত ৩ জানুয়ারি বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠাতে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চের শুনানির জন্য কার্যতালিকায় উঠে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগের ঘটনায় খুলনা, পিরোজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জেলার আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকদের তলব করেন হাইকোর্ট।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন