বিজ্ঞাপন

শিক্ষককে ‘ভয় দেখিয়ে’ জমা দেয়া খাতা ফেরত নিয়ে পরীক্ষায় ৩ ছাত্র

February 8, 2023 | 9:47 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নিজেদের পছন্দের আসনে বসতে বাধা দেয়ায় পরীক্ষা শুরুর পৌনে একঘণ্টার মধ্যে খাতা জমা দেন তিন ছাত্র। পরে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা পরীক্ষার হলে গিয়ে দায়িত্বরত শিক্ষককে হুমকিধমকি দিয়ে তিনজনের খাতা ফেরত দিতে বাধ্য করেন। খাতা ফেরত নিয়ে ওই তিন ছাত্র আবার পরীক্ষায় বসেন।

বিজ্ঞাপন

এসময় তিনজন বিভাগীয় প্রধান এসে ওই শিক্ষককে খাতা ফেরত দিতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে চতুর্থ পর্বের সমাপনী পরীক্ষায় এ ঘটনা ঘটেছে।

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর প্রকাশ সিকদার তাকে হুমকি দিয়ে খাতা ফেরত দিতে বাধ্য করার বিষয়ে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন। পরে তিনি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে নগরীর খুলশী থানায় আবেদন করেন।

বিজ্ঞাপন

তিন ছাত্র হলেন- মুহিতুল আজিম, মিফজাহুল আশরাফ ও মোশাররফ হোসেন। পদ-পদবি না থাকলেও তারা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়।

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) শাহদাত হোসেন ওমর এবং সাদমান সাকিব পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকে এ ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগ করেন প্রকাশ সিকদার। ছাত্রলীগ নেতা ওমর ও সাদমান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের বলয়ের যুবলীগ নেতা মো. মহিউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

শিক্ষক প্রকাশ সিকদার সারাবাংলাকে জানান, পরীক্ষা উপলক্ষে পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি ছিল। ৩১১ নম্বর কক্ষে প্রকাশসহ দুই শিক্ষক হল পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরীক্ষা শুরুর প্রায় ১৫ মিনিট পর প্রকাশ সিকদার এবং পাশের হলে দায়িত্বরত শিক্ষক শওকত আকবর দরোজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন।

বিজ্ঞাপন

‘এসময় ওমর ও সাদমানসহ কয়েকজন কোনো অনুমতি না নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকে পড়েন। তারা পরীক্ষার্থীদের কাছে কারও কোনো সমস্যা আছে কি না জানতে চান। চারজন পরীক্ষার্থী দাঁড়িয়ে আসন পরিবর্তনের কথা বলেন। তখন ওমর তাদের পছন্দমতো আসনে বসিয়ে দিয়ে বলেন- প্রকাশ স্যার আগের চেয়ে ভালো হয়ে গেছেন। একথা বলে তারা বেরিয়ে যান।’

‘আমি ছাত্রদের আবার যার যার আসনে বসিয়ে দিই। কিছুক্ষণ পর তিনজন ছাত্র খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরীক্ষা শুরুর পর সর্বোচ্চ তারা ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট হলে ছিল। নিয়ম অনুযায়ী আমি তাদের প্রশ্নপত্র রেখে দিই।’

প্রকাশ জানান, পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়েই তারা ওমরকে ফোনে ডেকে নেয়। তখন ওমরসহ কয়েকজন কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ওই তিন ছাত্রকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র উপস্থিত হন। তারা তিন ছাত্রকে খাতা ও প্রশ্নপত্র ফেরত দিয়ে আবার পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবি জানান।

প্রকাশ সিকদার অস্বীকৃতি জানালে ওমর, সাদমান ও কাউছার নামে তিন ছাত্রলীগ নেতা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকিধমকি দিতে থাকেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি এবং উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নাম ধরেও অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলতে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

একপর্যায়ে তারা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহীদুল ইসলামকে সেখানে ডেকে আনেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সামনেই তারা পরীক্ষা শেষে প্রকাশ সিকদার ইনস্টিটিউট থেকে বের হলে ‘মারবে’ বলে হুমকি দেন। খবর পেয়ে তিনজন বিভাগীয় প্রধান ঘটনাস্থলে এসে তাকে খাতাগুলো ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন।

খাতা ফেরত পেয়ে তিন ছাত্র তাদের পছন্দমতো আসনে বসে পরীক্ষা দেন। কিছুক্ষণ পর আবারও ওমর, সাদমান এবং কাউছার হলের সামনে গিয়ে প্রকাশের নাম ধরে গালিগালাজ করেন।

‘আমি অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। এভাবে অসম্মান-অপদস্থ হয়ে কীভাবে দায়িত্ব পালন করবো ? তারা যে কোনোসময় আমার ওপর হামলা করতে পারে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। থানা থেকে বলা হয়েছে জিডি করতে। আমি জিডি করেছি।’- বলেন প্রকাশ সিকদার

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রসংসদের জিএস শাহদাত হোসেন ওমর সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনি (প্রকাশ সিকদার) বাম রাজনীতি করেন। ছাত্রলীগের নাম শুনতে পারেন না। ছাত্রদের সবসময় ছাত্রলীগ না করার জন্য বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। আজ (বুধবার) পরীক্ষার হলেও তিনি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলতে থাকলে তিনজন ছাত্র দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন।’

‘তখন তিনি খাতা কেড়ে নিয়ে তাদের হল থেকে বের করে দেন। আমরা জানতে পেরে সেখানে গেলে তিনি আমাদেরও গালাগাল করেন। তখন আমরা অধ্যক্ষ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে বলে তাদের আবার পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমরা খাতা ফেরত দিতে বাধ্য করিনি।’

শাহাদাত হোসেন ওমরের এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক প্রকাশ সিকদার সারাবাংলা’র কাছে দু’টি ভিডিও ক্লিপ পাঠান, যেখানে ছাত্রলীগ নেতাদের তার নাম ধরে অশোভন আচরণ করতে দেখা গেছে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহীদুল ইসলাম ছাত্র সংসদের জিএস ওমর পরীক্ষার হলে ঢুকে শিক্ষককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমানকে কয়েকবার ফোন করেও সাড়া মেলেনি।

জানতে চাইলে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষক কিছু অভিযোগ করেছেন। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) আকারে সেগুলো গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন