বিজ্ঞাপন

আ. লীগের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, প্রমাণ করেছি: প্রধানমন্ত্রী

February 8, 2023 | 11:05 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৬টি সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফল তুলে ধরে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা নির্বাচনে কারচুপি দেখেছি, ফলাফল উল্টে দেওয়ার বিষয়টিও দেখেছি। ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না। মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরাই লড়াই করেছি। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, এটি আমরা প্রমাণ করেছি। তাই নির্বাচন নিয়ে কারো কথা বলার সুযোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর স্পিকার প্রস্তাবটি ভোটে দেন। এ সময় সর্বসম্মতিতে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি। ওই ভাষণের ওপর ৮ জানুয়ারি সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, আগে নির্বাচন কী ছিল? আমরা জিয়ার আমলেও নির্বাচন দেখেছি, হ্যা-না ভোট অথবা রাষ্ট্রপতি ভোট, সবই দেখেছি। ইয়েস, নো। নোর বাক্স পাওয়া যায় না সবই ইয়েস। ৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আমাদের দেখা আছে, কীভাবে কারচুপি হয়। ৮৬ সালের নির্বাচন আমরা অংশগ্রহণ করেছিলাম, ৪৮ ঘণ্টা সেই নির্বাচনের ফলাফল বন্ধ রেখে জেনারেল এরশাদ সাহেব নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করা সেটি আমরা দেখেছি। ৯১ সালের নির্বাচনে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিএনপি সরকারে এসেছিল। এসে ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে দিল। তবে ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না, সেটি তখন প্রমাণ হয়। খালেদা জিয়াকে ৩০ মার্চ অর্থাৎ দেড় মাসের মাথায় পদত্যাগ করতে হয়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘২০০১ নির্বাচনে চক্রান্ত ছিল গ্যাস বিক্রি নিয়ে, বিএনপি ক্ষমতায় এসেই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও লুটপাট শুরু করে। দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করল যে জরুরি অবস্থা দেওয়া হলো। সেই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করে আমরা এখন উন্নয়নের গতিধারা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাত্র কয়দিন আগে ৬টি উপনির্বাচন হলো, একটি জাতীয় পার্টি, একটি বিএনপির এক জন সংসদ সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তারপর তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিজয়ীয় হয়েছেন, আজ সংসদে এসেছেন। একটি দিয়েছিলাম রাশেদ খান মেননকে সেখানে জাতীয় পার্টি জিতেছে, আরেকটা দিয়েছিলাম হাসানুল হক ইনুকে সেটি জিতে এসেছে। তাছাড়া বগুরায় এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে নৌকা মার্কা জয়লাভ করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রংপুর মেয়র নির্বাচন এই নির্বাচন নিয়ে তো কেউ অভিযোগ করতে পারেনি। সে নির্বাচনে কিন্তু জাতীয় পার্টি জয় লাভ করেছে, আওয়ামী লীগ হেরে গেছে। কাজেই নির্বাচন যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুষ্ঠু হয়, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়, সেটিই কিন্তু এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমি আশা করব, এরপরে নির্বাচন নিয়ে আর কেউ কোনো কথা উত্থাপন করার সুযোগ পাবে না। কারণ আমরা ক্ষমতায় থাকলেও মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আমরাই সংগ্রাম করেছি। কজেই সেই ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এটা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি।’

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ভাষণটাই বোধহয় তার শেষ ভাষণ। কারণ আমাদের সংবিধান অনুযায়ী কেউ পরপর দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি থাকতে পারেন না। রাষ্ট্রপতি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি শুরু করেন। আমি মনে করি তিনি অত্যন্ত প্রাণবন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর সময়ে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছেন এবং ভাষণ দিয়ে গেছেন। রাষ্ট্রপতি হিসাবে সফল ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ ও ১০১৮ সালের নির্বাচনে নানারকম ষড়যন্ত্র চক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি তিনি তার স্থানে অটল থেকেছেন। প্রতিটি নির্বাচন সুষ্ঠভাবে করেছেন। যার জন্যই দেশে স্থিতিশীলতা এসেছে। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পার হতে হয়েছে, কিন্তু রাষ্ট্রপতি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছেন।’ স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার হিসেবেও তিনি সংসদকে প্রাণবন্ত রেখেছিলেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন সরকার গঠন করি ৩৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল এই দেশে। আমরা কৃষিতে গবেষণার ওপর জোর দিয়ে খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জন করি। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ১৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ আছে। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার টাকার দিকে তাকাচ্ছে না। দেশে উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদেশ থেকে যে সমস্ত ভোগ্য পণ্য আমদানি করতে হয়। যত টাকাই লাগুক আমরা কিন্তু তা আমদানি করছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর সঙ্গে আমাদের জ্বালানি তেল, গ্যাস, চিনি, গম ভুট্টা এগুলো সবই আমাদের অমদানি করতে হয়। এরমধ্যেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছিল, তা কিছুটা এখন কমেছে। এটি একটা ভালো লক্ষণ বলে আমরা মনে করি।’

সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত কিছুর পরেও ৭ ভাগের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছি। প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা যথেষ্ট দক্ষ। প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ দেব বলেছিলাম, দিয়েছি। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কাউকে আমরা বাদ দিচ্ছি না। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে মানুষের উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশকে উন্নশীল দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে সরকার পদ্মা সেতু করেছে। এটি চ্যালেঞ্জ ছিল। এই একটি সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে। যারা আগে মনে করত বাংলাদেশ কোনোদিন ওঠে দাড়াতে পারবে না। পঁচাত্তরের পর যারা এসেছিল তাদের সে প্রচেষ্টাই ছিল। আজকে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে। আমরা যে পারি সেটি আমরা প্রমাণ করেছি।’

বিজ্ঞাপন

সবক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা চালু করা হচ্ছে বলেন জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘এখন দলিল পর্চা ঘরে বসে নিতে পারে। যেকোনো বিল ঘরে বসে দিতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’

পরিবেশ দূষণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা শহর অত্যন্ত ছোট। অধিকাংশ লোক.. ও প্রচুর গাড়ি চলাচল করে। যার জন্য বায়ু ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা যারা বলি ঢাকা খারাপ, বসবাসের উপযোগী না..তারা তো ঢাকাই বাস করে। ঢাকা থেকে তো বাইরে যায় না। ঢাকার বাইরে পরিবেশ অনেক পরিশুদ্ধ। তারপরও ঢাকায় থাকতে হবে। আমরা গালিও দেব, আবার থাকব, এটি কেমন কথা? এটি হয় না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু হৃদয় আছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় সহায়তার জন্য বাংলাদেশ থেকে মেডিকেল টিম, ওষূধ, শুকনা খাবার পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশ সাধ্যমত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’

উপনেতা মতিয়া চৌধুরী যা বললেন: ওই আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, অতিমারী কোভিড-১৯ শেষে আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি। ভয়াবহ ইউক্রেন যুদ্ধ, যা কেউই চিন্তা করেনি। একই সঙ্গে আমরা দেখতে পারছি সমগ্রবিশ্ব যুদ্ধের কারণে শুল্ক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে বৃহৎ শক্তিগুলো অর্থনৈতিক সংকট চলছে, দ্বন্দ্বও চলছে। কোভিট সংকট শেষে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এতে খাদ্য মূল্য বেড়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য বেড়েছে, যা আমরা ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেখতে পেয়েছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০২২ সাল ছিল আমাদের জন্য কঠিন সময়। এই সঙ্গে গৌরবের সময়, কেননা ২০২২ সালে আমরা নিজম্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছি। আজকে এই সেতু পার হয়ে মানুষ মেট্রোরেল দেখে তাদের আশা মিটাচ্ছে।’

সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ‘বিএনপি’কে ‘বাংলাদেশ না, পাকিস্তান পার্টি’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘তারা পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে, পেয়ারের পাকিস্তানে না হলে তারা সুন্দরভাবে জীবনযাপনের চিন্তা ভাবনা করতে পারে না। কিন্তু যে টাকাটা লন্ডনে যাচ্ছে, বেগম জিয়া যে টাকা ভোগ করছেন, সেটি কিন্তু এদেশের মানুষের ঘাম ঝরানো টাকা।’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে মতাদর্শ থাকবে কিছু বিরোধিতা থাকবে, কিন্তু এইভাবে মানুষ হত্যা? বিএনপি তা করে দেখিয়েছে। আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, বাস ট্রেনে, স্কুল কলেজে আগুন দিয়ে জাতীয় সম্পদের ক্ষতি করেছে।’

মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, ‘বিএনপি আমলে সারা দেশে নৈরাজ্য অরাজকতা বিরাজ করছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন সরকারের আসে তার আগের বিএনপির অর্থমন্ত্রী কিন্তু ভাতের বদলে আলু খাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর এই অসময়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন ভোটের মাধ্যমে।’ আজ কিসিঞ্জারের সেই তলাবিহীন দেশের কতটা উন্নতি ঘটেছে, তা দেখতে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই সোনার বাংলা গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। তিনি সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ সরকার ২০২২-২৩ অর্থ বাজেটে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরত্ব আরোপ করেছেন। অতিমারি প্রভাব কাটিয়ে উঠে পূর্ণাঙ্গ অর্থনীতিকে পুনুরুদ্ধার, নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতিকে সুরক্ষা প্রদান ও মাথাপিছু আয় বাড়ানের দিকে নজর দিয়েছেন। সরকার জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি করেছে।’

নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আজ বিশ্বে প্রসংশিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন