বিজ্ঞাপন

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোটগল্প

February 12, 2023 | 1:13 pm

আহমেদ ইশতিয়াক

বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র ভাষারীতির জন্য প্রথম সারির লেখকদের তালিকার শুরু দিকেই থাকবেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। নেপথ্যে তার নিপুণ সাহিত্যকর্ম। যদিও আয়ুর মতো তার লেখার সংখ্যাও হাতে গোনা। দুটি উপন্যাস, আটাশটি গল্প, কয়েকটি প্রবন্ধ মিলে একটি প্রবন্ধ সংকলন- এই নিয়েই তার সাহিত্যের পরিধি। কিন্তু সংখ্যার আধিক্যে নয়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তার ভাষারীতির জন্য। বিশেষ করে সূক্ষ্ম রসবোধ, গভীর অন্তঃদৃষ্টি তার রচনাকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা।

বিজ্ঞাপন

প্রথমদিকে তিনি শখের বসে কবিতা লিখতেন। ধীরে ধীরে কথাসাহিত্যে চলে এলেন। প্রথম গল্পগ্রন্থেই আলোচনায়। হাসান আজিজুল হক ইলিয়াসের “অন্য ঘরে অন্য স্বর” পড়ে বললেন, “এটি তীরের মতো ঋজু, ধানী লঙ্কার মতো বদমেজাজি, পরনারীর মতো আকর্ষণীয়। সমাজ বাস্তবতায় যেমন আমরা দেখতে পাই মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমাজ, গ্রামীণ জীবন, শহুরে কোলাহল, চিরন্তন জীবনে বহুমুখী শব্দের ব্যবহার, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের দৃশ্যপটসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে তার লেখায়। প্রথমে কবিতাকে সম্বল করেলেও পরে পুরোপুরি কথাসাহিত্যে মনযোগ দেন ইলিয়াস। ইলিয়াসের কম লেখার কারণ হয়তো তার সাহিত্যমান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু পুরোপুরি বিশুদ্ধ এক সাহিত্যধারার সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন তিনি। এজন্যই হয়তো তিনি ভীষণ নিরক্ষনধর্মী। যেমন কবিতার রূপ দেখা মেলে তার গদ্যেও। ‘মিলির হাতে স্টেনগান’ গল্পে তার কবিতা, ‘এলএমজির জন্য শোক’ এর অন্যতম উদাহরণ।

আমার এলএমজি, এলএমজি, এলএমজি আজ কোথায় গিয়েছ তুমি? কতোদূর, বলো কোন লোকে নিরুদ্দেশ যাত্রা করো? শীতল শরীরে রক্তশিখা জ্বেলে দাও অন্ধকারে, ব্রাশ করো কোন সেক্টরে? তোমার ট্রিগারে কার কিশোর তর্জনী টানে গান, পূর্বজন্ম, মৃত্যু, সাধ? সুপ্তশিশ্ন ব্যারেলের কাম এমবুশ করে কার রক্তে? তুমি কার অধিকারে? এলএমজি, তুমি ছিলে হাত জোড়া, বুক জুড়ে, বুক ভরে ছিলে।

মনে রাখা প্রয়োজন ইলিয়াসের জন্ম কিন্তু তেতাল্লিশে। তেতাল্লিশের মন্মন্তরে জন্ম নেওয়া পরবর্তী বাস্তবজীবন ইলিয়াসের খুব কাছ থেকে দেখা। ইলিয়াস নিজেই বলেছেন তিনি শিখেছেন, খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাই হয়তো ইলিয়াসের লেখায় সংগ্রাম, ক্ষুধা, দারিদ্র, নিপীড়ন উঠে এসেছে। তিনি নিজেকে দাবি করেছেন চব্বিশ ঘণ্টার লেখক বলে। যখনই মাথায় আসল, লিখে যেতেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে তার সৃষ্টিকর্মের তালিকা এত সংক্ষিপ্ত কেন! আগেই বলেছি, তিনি বাস্তববাদী, নিরীক্ষণধর্মী। এমন খুঁতখুঁতে লেখক চাইবেন সবসময় নিজের সেরাটি প্রকাশ করতে। এতেই লেখা সংখ্যা কমে গেলেও আছে নিজস্বতার ছোঁয়া আর তার সেই মৌলিকতার জন্যই আমরা মনে রেখেছি ইলিয়াসকে।

বিজ্ঞাপন

ইলিয়াসের গল্প দেখুন। যদি দোজখের ওম পড়েন। কামালুদ্দিনের দীর্ঘশ্বাসটি আপনার মুখ দিয়েই বেরোবে। কামালউদ্দিন পক্ষঘাতগ্রতে দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। অন্যদিকে দেখুন তার একের পর এক সন্তান মারা গেছে। স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেছে, কিন্তু প্রতিদিন তিনি স্ত্রীকে দেখতে পারছেন। কামালউদ্দিনের ধারণা তার স্ত্রী সন্তানদেরকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে। কি জন্য নিচ্ছে তা মনের অজান্তেই তার মনে বসত গেড়ে বসেছে। সুনির্দিষ্ট কোন পাপের জন্য। কি তার কৃতকর্ম! ইলিয়াস এখানে দেখিয়েছেন তার মুন্সিয়ানা।

কিংবা দেখুন দুধেভাতে উৎপাত। মিলির হাতে স্টেনগান এবং দুধভাতে উৎপাত গল্প দুটো কিন্তু দুধেভাতে উৎপাত গল্পগ্রন্থের। একে তো গ্রামের অন্যদিকে নদী তীরবর্তী জনপদ। কিন্তু প্রথমেই চোখে ভাসে, পাট কাটা শেষ, এবং দেখুন রামেশ্বর ঘাটের কথা নিপুণভাবে উল্লেখ করছেন ইলিয়াস। জয়নাবের হঠাৎ সাধ হলো দুধভাত খাওয়ার। এ নিয়ে যন্ত্রণার নানা উৎপাত। ইলিয়াস লিখছেন, কিন্তু আধ মন চালের দাম শোধ না করা পর্যন্ত গরু পাওয়া যাবেনা- হারুন মৃধার এই শর্তটিও কি জয়নাব তার বমির সঙ্গে উগড়ে ফেললো? একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন। পাঠক ভাববে কল্পনা করবে এবং হয়তো পরের লাইনে চলেও যাবে। কিন্তু তার আগেই ইলিয়াস প্রশ্ন তুলে ধরেছেন। একদিকে কাতর মানুষের বমি, দুধভাত চেয়ে বারেবারে হাহাকার। ইলিয়াস দেখাচ্ছেন কতখানি ভেদ সামর্থ্য আর অসামর্থ্যে। শব্দের মাধ্যমে সৃষ্ট দৃশ্যগুলো যেন মর্মে আঘাত দেয়। সৃষ্টির বেলায় কোন ছাড় দিচ্ছেন না ইলিয়াস। সম্পূর্ণরূপে ভাঙছেন, আবার গড়ছেন। পরক্ষণে আবার যেমন ভাঙছেন, তেমনি গড়ছেনও। এটিই ইলিয়াসের সত্ত্বার বৈশিষ্ট্য।

এবার আসি ইলিয়াসের প্রথম গ্রন্থিত গল্পগ্রন্থের প্রথম গল্পে। ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’। এই গল্পের মতো আর কোন গল্পে ইলিয়াস এত পরিষ্কারভাবে গল্পের ভাব বোঝাননি। অন্য গল্পগুলোতে পাঠককে পড়ে বুঝে নিতে হয়েছে। এতখানি বর্ণনামূলক ইলিয়াস ছিলেন না। অনেকে বলেন এই গল্পটি ইলিয়াসের ধাঁচের সঙ্গে যায়না। এত যত্নের সাথে ইলিয়াস বর্ণনা করছেন রঞ্জু নামের এক মানসিক প্রতিবন্ধীর কথা। এখানে ভাবনাচিন্তা, ভবিষ্যৎ একে একে ইলিয়াস গড়ে দিচ্ছেন। একজন মানুষের ব্যাপ্তি, অবস্থান, নিরীক্ষণ, বেড়ে ওঠার সময়, চারপাশের পরিবেশ থেকে শুরু করে সব খুঁটিনাটি তুলে ধরেছেন। বিস্তারিতভাবে বলেছেন ছেলেটির বাবার রাজনীতি, নিজস্ব সংকট, মনজাগরনের ইতিবৃত্ত। এখানে কয়েক ধরনের অবস্থান তৈরি করেছেন ইলিয়াস। যেমন প্রচুর ইংরেজি শব্দের ব্যবহার, যা ইলিয়াসের অন্য গল্পে দেখা যায় না। আবার ভিন্ন ধরণের শব্দশৈলীর মিশেলে এক অনন্য শৈল্পিক আবহ অনন্য মাত্রা দিয়েছে গল্পটিকে। অনেকে বলে থাকেন ইলিয়াসের ‘দখল’ গল্পের আবহ অনেকটা একই ধাঁচের মনে হয়। নিরুদ্দেশ যাত্রায় প্রচুর কথোপকথন। গল্পটি হয়তো তার প্রথম প্রকাশিত গল্প বলেই। এটি আলাদা, পরবর্তী গল্পগুলোর সঙ্গে ইলিয়াসের সৃষ্টির পার্থক্য বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু তাই বলে এই গল্পটি কেন এমন! আসলে গল্পের ভাব, ভঙ্গিমা এমন বলেই ইলিয়াস তেমন করেই ছাঁচে ফেলেছেন। রঞ্জুর খোঁজ উঠে এসেছে বারবার। রঞ্জু নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। মৃত্যু এবং পরবাস্তবতার এক নিগুঢ় সত্যতা ইলিয়াস বর্ণনা করছেন। তবে ইলিয়াস যেখানে অন্যদের চেয়ে আলাদা- তার বর্ণনায় মৃত্যু বারবার দেখিয়ে দিচ্ছে একটি জীবনের পতন কতো দ্রুত হয়।

বিজ্ঞাপন

ইলিয়াসের লিখিত গল্প ধরা হলে প্রথম গল্প ‘খালেক ও তাহার মাতা’ বিয়োগাত্মক কাহিনী। এটি কোথাও ছাপা হয়নি। তিনি নিজে বলেছেন, কলকাতার নানা কাগজে, ছোটদের পাতায় তিনি লেখা পাঠাতেন, তবে যা ছাপা হয়েছে তা অতি নগণ্য। আবদুল মান্নান সৈয়দের লেখা থেকে জানা যায়, দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ইলিয়াসের ‘চোর’ নামক একটি গল্প ছাপা হয়েছিলো। তার ষোল বছর বয়সে সওগাত পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হলো ‘বংশধর। ১৩৬৬ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে। এটিই মূলত ইলিয়াসের উত্থান। যদিও তা কোন গ্রন্থে স্থান পায়নি। গল্পটা বলে নিই। এখানে দুজন খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী দম্পত্তির কথা উঠে এসেছে। প্রথম বাক্য দেখুন পারভিন নামের একজন মহিলা ডাক্তার খানিক পরে অস্ত্রোপচার করবেন বলে প্রস্তুত হচ্ছেন। মেরির অবস্থা জানার জন্য যাচ্ছেন তিনি। মেরির স্বামীর নাম জর্জ উইলিয়াম পেরিথ। পেরিথ বংশের বলে মেরির গর্বের অন্ত ছিলোনা। ভালোই যাচ্ছিল তাদের দিন। কিন্তু একদিন ঝড়ের মতো আগমন ঘটে কিছু বিষয়। একদিন মেরির বাবার পুরনো ট্র্যাঙ্ক খুলে একটি ডায়েরি পায় জর্জ। এবং তা বদল হয় রেডরেন্ড জ্যাক পেরিথের ডায়েরির সঙ্গে। সেই ডায়েরি পড়ে মেরি জানতে পাড়ে, সে পেরিথ বংশের কেউ না এবং এক হিন্দুর সন্তান। আত্মপরিচয়ের এই বাস্তবতা মেনে নিতে পারে না মেরি, এবং সে ভাবে সে জর্জের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তৎক্ষণাৎ মাথা ঘুরে পড়ে আহত হয়ে হাসপাতালে। কয়েকদিন পর মেরির মৃত্যু হয়, কিন্তু মৃত্যুর আগে মেরি পারভিনের কাছে বলে যায় পুরো ঘটনা। একদিন পারভিন যান জর্জের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, আসলে ডায়েরিটা রেডরেন্ড জ্যাক পেরিথের। মেরি আসলে পেরিথ পরিবারের। এখানে ইলিয়াস দেখিয়েছেন তার মুন্সিয়ানা। কি করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে যন্ত্রণার প্রকাশ করতে হয়।

ইলিয়াসের ‘উৎসব’ গল্পটি পড়ুন। আবার সেই বাস্তবতা, বৈষম্য, সময় নির্ধারক বস্তুর প্রভাব। ইলিয়াসের কাজ কতখানি তৎপর ইলিয়াস না বোঝালেও কাজের মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে। চরিত্রের প্রয়োজনে ইলিয়াস খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন তো আবার খোলসকেই সরিয়ে রাখছেন। উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের প্রভাব আমরা সহজেই দেখতে পাই সমাজে।মানুষের জীবনের ধাঁচ ভিন্ন হয়, একধরনের জীবন দর্শনেও পার্থক্য আসে। যেখানে দাওয়াতের প্রসঙ্গে তিনি তুলে ধরেছেন আনোয়ার আলী এবং ধনী বন্ধু কাইয়ুমকে নিয়ে। উৎসব গল্পে দেখুন সঙ্গীতের একধরনের প্রভাব আছে। রবীন্দ্র সঙ্গীত আর গণসঙ্গীত, জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতন্ত্রের কথোপকথন। এরা তুখোড় আড্ডাবাজ এবং একধরনের তারুণ্যমুখী। ইলিয়াসের প্রতিশোধ গল্পে দেখতে পাবেন সংস্কৃতির মধ্যবিত্তের ভিন্ন চেহারা। আসলে যখন স্বার্থের পালা চলে আসে তখন এরা সবকিছুই করতে পারে।

‘ফেরারী’ গল্পে চলে আসি। এক চিরচেনা পুরনো ঢাকার চিত্র। চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাসের শুরুটা অনেকটা এমন। বিশেষ করে লাশের ভাবনাটা সরিয়ে রাখুন তবেই দেখতে পাবেন। মানুষের জীবনের চরিত্রের বিন্যাস কি করে আসছে দেখুন। প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হচ্ছে। স্পষ্ট হচ্ছে চরিত্রের লুকায়িত ভাবনা। ইলিয়াস দারুণভাবে নিরীক্ষণ করতে পারতেন। দৈনন্দিন জীবনে আমরা কতকিছুই না করি। এখানেও ঠিক তেমনটাই উঠে এসেছে। সময়ের পালাবদলে যা পরিবর্তিত হয়। বহুমাত্রিক ভাবনা এখানে প্রকাশিত হয়। ইলিয়াস একটানা বলে যাচ্ছেন। বাক্যটা খেয়াল করুন।

নবাপুরের কামুক গন্ধ, পানের দোকানের অন্তরঙ্গ ভিড়, ঠাটারি বাজারের মোড়ে কোন বন্ধ দোকানের রকে বসে মুখের ভেতরকার পানের পিক নিচের ঠোঁট দিয়ে উঁচু করে আটকে রেখে বলকানো বাক্যের আড্ডা দিচ্ছে কয়েকজন বয়স্ক লোক; আমজাদিয়ায় কয়েক রাউন্ড চা মেরে দক্ষিণের কোনো রেস্টুরেন্টের দিকে চলে যাচ্ছে কালো ঋজু ও দীর্ঘদেহী শান্ত পুরুষ, তাকে ঘিরে কয়েকজন চঞ্চল যুবক; কোনও কোনো রাতে ‘নিগার’র সামনে সমস্ত রাস্তা জুড়ে ছড়ানো কাওয়ালির আসর; মাইকে আল্লা রসুলুল্লা ও খাজা মইনুদ্দিন চিশতীর প্রশস্তি; রাস্তার ধার ঘেঁষে লোহার তালা উনুনে সেঁকা হচ্ছে শিককাবাব, শিককাবারের গন্ধে সাড়া পড়েছে পেটের ভিতর-বাড়িতে, রথখোলার মোড়ে ভুট্টা ভাজা হচ্ছে; কান্দুপত্তির গলির মাথায় তিনজন ফাইটিং মাতাল;

বিজ্ঞাপন

দেখুন ইলিয়াস এক লাইনে কতো কি নিয়ে এসেছেন। আড্ডা ত্থেকে, কাওয়ালি, তারপর সঙ্গীতের ঋদ্ধ চোখ, খাবারের বর্ণনার সঙ্গে চলে গেলো ভিন্ন যাত্রায়। এত দ্রুতলয়ে ইলিয়াস দেখাচ্ছেন কত কিছু ঘটছে মুহূর্তের মধ্যে। দৃষ্টির বাইরে হোক আর দৃষ্টির সম্মুখে হোক।

‘খোঁয়ারি’ গল্পের ধরনটা ইলিয়াসের ‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’র মতোই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কাল উঠে এসেছে এই গল্পে। দুর্নীতির চিত্র, লুটপাটের অসীম চিত্র ইলিয়াস এঁকেছেন সত্যতার মাধ্যমে। যেমন গল্পের জাফর, মানিক ফারুকরা দলের অফিস করবে বলে ভাড়া দেওয়ার কথা বলে বিন্দুবাড়ি দখল করতে চায়। অথচ মুক্তিযুদ্ধ ছিল সম্পূর্ণরূপে অসাম্প্রদায়িকতার নিদর্শন। আবার দেখুন অমৃতলাল ও তার ছেলে সমরজিৎের কথা হিসেবের মধ্যেই থাকেনা। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় যেন আগের চিত্রেরই পুনঃপ্রকাশ। পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যারা অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে লড়াই করেছিলো ওরাই ধর্মের চাদরে হানা দেয়, সাম্প্রদায়িকতার নিষিদ্ধ বীজ গড়ে তোলে। আসলে মূল ব্যাপারটি উঠে আসে, সময়ের পরিবর্তিতে পরিবর্তন হয়েছে ঠিক কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক এক ধরনের আপোষ মনে চলে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী জীবনে ছিল একধরনের ছাপ, এবং পরবর্তী জীবনে ভিন্ন ধরনের। কিন্তু এই যে পরিবর্তন, তা অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেলেও অসাম্প্রদায়িক আবহটি কিন্তু দেখা যায়নি। হ্যাঁ বাহাত্তরের সংবিধানে রাষ্ট্রের মূল ভিত্তির মধ্যে একটি অসাম্প্রদায়িকতা। কিন্তু তা কতখানি বাস্তবায়ন হয়েছে?

‘তারাবিবির মরদ পোলা’ নিয়ে না বললে লেখাটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। বারবার ইলিয়াস আলোচনা কেন আসবে, তা ইলিয়াসের গল্প ফাঁদার কৌশলেই প্রতিয়মান। এই যে বাস্তবতার মিশেলে স্বাতন্ত্র্যতার নিজস্ব বয়ান, যেখানে ইলিয়াস দেখিয়েছেন প্রচলিত নিয়মের বাইরে ভিন্ন নিয়মের গল্প বলতে। গুটিকয়েক শব্দ ব্যবহার করেছেন, আবার পরবর্তী শব্দেই ব্যবহার করেছেন ফের শব্দের ঝঙ্কার। ‘ভেতর থেকে তারাবিবির একটানা সংলাপ কানের ফুটো দিয়ে মাথায় ঢুকে এলোমেলোভাবে আঁচড়াতে শুরু করলে গোলজার আলির সাজানো গোছানো রাত্রিবেলাটা একবারে তছনছ হয়ে গেলো।’ দেখুন তো কানে কেমন বাজছে। প্রথমভাগটি দেখুন, তারাবিবির একটানা সংলাপ আসছে, যার ফলে গোলজার আলীর রাতটা শেষ। প্রথম বাক্যেই অসাধারণত্ব। ইলিয়াস প্রথাবিরোধী কিনা সেই প্রশ্নে যাবোনা, পাঠক মাত্রই তা বুঝতে পারবেন, কিন্তু এই যে গল্প লেখার সাধারণ তথা জনপ্রিয় নিয়মের বাইরে এসে বলতে পারা। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ এই সাহসটি করেছেন, শহিদুল জহির করেছেন, বর্তমানে হরিশংকর জলদাস লিখছেন, আরও অনেকেই আছেন, কিন্তু এই তিনজনের কথা এইজন্যই বললাম আপনি তাদের গল্প পড়লেই বুঝে নিতে পারবেন কার সাহিত্য পাঠ করছেন। ইলিয়াসের ব্যাপারটিও তাই। গল্পে ইলিয়াস লিখেছেন দৈনন্দিন মজুরেদের চিত্র, পারিবারিক কলহ, মানবিক ও সামাজিক বৈষম্য, শেকড়ের অসীম টান, চলতি জীবনের দ্বন্দ্ব, মানুষের জৈবিক চাহিদার তৃপ্তি-অতৃপ্তি মোটে মিলে আমাদের জীবনযাত্রার এক অনবদ্য জীবনযাপন। গল্পের এক প্রচণ্ড রকম শক্তি আছে, যে শক্তিটি ইলিয়াস এই গল্পের মত তার গল্পে দেখিয়েছেন। বিশ্বাস করিয়েছেন আপনি যা পড়ছেন তা সম্পূর্ণ চিরন্তন। কোথাও কোন ফাঁক নেই। তারাবিবির যৌনতা দেখার এক ধরনের ভীষণ কৌতূহল। অতৃপ্ত বাসনায় আলী হোসেনের বউ, আলী হোসেন, রমজান আলী, বাড়ির ঝি সুরুজের মা সবই যেন উঠে আসছে ক্রমান্বয়ে। তারাবিবি রমজান আলীর একসময়ের শ্যালিকা এবং বর্তমানের দ্বিতীয় স্ত্রী। যার ফলে তারাবিবির এক ধরনের সম্পর্কের জটিলতা দেখা যায়। মনস্তাত্ত্বিক এক ধরনের ব্যাপ্তি কেন জন্মায় তা বয়সের ফলেই দৃশ্যনীয়। দেখুন সে ছেলে এবং ছেলের বউয়ের যৌনতার মাধ্যমে সন্দেহ ছড়াতে চায়। সেটি নিজের অতৃপ্তি থেকে। রমজান আলী তার স্ত্রীকে যখন বলে, ‘সুরুজের মায়ের সঙ্গে গোলজারের যৌন সম্পর্ক আছে’, তা মাথায় তুলতে চায়না তারাবিবি। এই গল্পের একটি ব্যাপার হল ভাষা। পুরনো ঢাকার একটি পরিবারের জীবনযাত্রা। গল্পের প্রয়োজনে ইলিয়াস বারবার দেখাচ্ছেন কি করে আসছে একটির পর একটি, একটি বিদায় নিচ্ছে আরেকটা নিকটে এসে স্থান গ্রহণ করছে।

এবার আসি ‘জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল’ নিয়ে। জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জালে ইলিয়াস কয়েকটি মুহূর্তের ঘটনা একে দিচ্ছেন। দেশের তিনটি ক্লান্তিকালীন সময়ের ঘ্রাণ ইলিয়াস বিস্তার করেছেন। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময় এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়। আচ্ছা, চিলেকোঠার সেপাই তো পড়েছি। সেখানের খিজির রিকশাওয়ালা, আর জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল গল্পের লালমিয়া দুটোর মধ্যে কি কোন মিল দেখছেন?

না অনেকটাই ভিন্ন। মিথ্যার প্রভেদটা তুলে ধরে দেখাচ্ছেন ভুল। স্বপ্নের টানে যে জড়িয়ে যায় বাস্তবতার জালে। লালমিয়ার স্বপ্নে শুরু হওয়া গল্প, মুসল্লির পায়ের পাতাটি পিছনে। কিন্তু কেউই বিশ্বাস করতে চায়না। কিন্তু লালমিয়া যেন বিশ্বাস করাবে এই পণ নিয়েই নেমেছে। স্বপ্নের মাঝে সে নামাজ পড়ার সময় সে দেখেছিলো বুড়ো মুসল্লির পায়ের পাতা এমন। আমরা ছোটবেলায় এমন শুনেছি, ভূতের পা নাকি পিছনের দিকে থাকে। লালমিয়া দেখে নাজির আলীর দোকান। সেই দোকানেই কাজ করে কিশোর বুলেট, সে ইমামুদ্দিনের ছেলে। ইমামুদ্দিন ছিলো মুক্তিবাহিনীর। তার বৌকে মিলিটারি তুলে নিয়ে গেছে, ফেরত দেয়নি আর। দাদীর কাছেই বুলেট বেড়ে উঠেছে। দেখুন পাকিস্তানীদের দালাল নাজির আলী। নাজির আলী ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর গোপন তথ্যবাহক। লালমিয়া ছিল নাজির আলীর ধোপার দোকানের কর্মচারী। পূর্বে এই বাড়িটা ছিলো হিন্দুবাড়ি। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হিন্দুরা ভারতে পাড়ি জমিয়েছে। স্বপ্ন তৈরি করে লাল মিয়া। লালমিয়ার এমন অবাস্তব কথা, নিমেষেই কথা গড়ে ফেলার ভাবনার মানে সমস্ত কিছুই লালমিয়ার নিজস্ব তৈয়ারি।

এখানে প্রতিটি চরিত্রই দেখুন স্বপ্ন বোনে। রাজাকার নাজির আলী মুক্তিযুদ্ধ শেষে পালায়। আবার দেখুন বুলেটের দাদী স্বপ্নের মধ্য দিয়েই ইমামুদ্দিনকে মুক্তিযোদ্ধা করে তোলে। ছোটবেলায় দাদীর মুখে বাবার বীরত্বের কথা শুনে বাবাকে নিয়ে গল্প বানায় বুলেট। নাজির আলী একসময় দোর্দণ্ড প্রতাপে ফিরে আসে। দেখুন প্রথমেই বলেছি স্বপ্নে পায়ের পাতা পিছনের দিকে। ইলিয়াস বোঝাতে চেয়েছেন ক্রমশই সামনে এগিয়ে আবার পিছনে চলে যাচ্ছি আমরা। যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী যে বাংলাদেশে অন্ধকারের সুত্রপাত হয়েছিলো, ইলিয়াস তাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইলিয়াস গল্পের মাঝেই বুঝিয়েছেন।

এই গল্পগ্রন্থের ‘রেইনকোট গল্প’ নিয়ে একটু বলি। মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল। গল্পটি একজন গৃহবধূ, ভীতু কলেজ শিক্ষক, এবং গৃহবধূর ভাই মুক্তিযোদ্ধার। প্রথম কয়েকটি লাইন খেয়াল করুন, ভোর রাত হতে বৃষ্টি, আহা! বৃষ্টির ঝমঝম বোল। এই বৃষ্টির মেয়াদ আল্লা দিলে পুরো তিনদিন। কারণ শনিতে সাত মঙ্গলে তিন আর সব দিন দিন। এটা জেনারেল ষ্টেটমেন্ট। স্পেসিপিক ক্লাসিফিকেশন ও আছে। উপরোক্ত কয়েকটি লাইনে কল্পনায় ভাসছে বৃষ্টিমুখর দিন। মাঝের কয়েকটা লাইন বাদ দিয়ে আবার যাই। বাদলায় বন্দুক বারুদ কি একটু জিরিয়ে নিবে না। এই ক’টা দিন নিশ্চিন্তে আরাম করো।

তা আর হলো কই? ম্যান প্রপোজেস। এমন চমৎকার বাদলার সকালে দরজায় প্রবল কড়া নাড়া শেষ হেমন্তের শীত শীত পর্দা ছিঁড়ে ফালা ফালা করে ফেলল। সব ভেস্তে দিল। মিলিটারি। মিলিটারি আজ তার ঘরে। আল্লা গো। আল্লাহুম্মা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালেমিন, পড়তে পড়তে সে দরজার দিকে এগোয়। এই কয়েকমাসে সে কতো সুরাই সে মুখস্ত করেছে। রাস্তায় বেরুলে পাঁচ কলেমা সবসময় রেডি রাখে ঠোঁটের ওপর। কোনদিন থেকে মিলিটারি ধরে। তবুও একটা না একটা ভুল হয়ে যায়। দোয়া মনে হলো ঠিকই কিন্তু টুপিটা মাথায় দিতে ভুলে যায়।

উপরের লাইনগুলোতে এক ভীষণ ভীতি। মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল। কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদা ভীষণ ভীতু। তার ঘরে স্ত্রীসহ এক শিশু কন্যাসন্তান। শহর ছেড়ে গ্রামে তার কলেজ। মুক্তিযুদ্ধ বলে কলেজে ছাত্র না আসলেও তাকে নিয়মিত যেতে হয়। কলেজে যাওয়ার পর তিনি শুনেন কাল রাতে কে যেন বোমা মেরে গেছে কলেজের পাশে। এক দিকে তার তীব্র ভয় আবার আশংকা তাকে সন্দেহ করেছে বুঝি প্রিন্সিপাল। কিংবা কিছুক্ষণ পরে ভাবুন। তীব্র বৃষ্টি বাইরে। নুরুল হুদার বউ আসমা বলছে আজ না যেতে। দেখুন তার বয়ান, ‘যেতেই হবে? অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজে তোমার হাঁপানির টানটা আবার। বৌয়ের এমন সোহাগের কথা শুনলে কি আর চলবে। বৌ প্রিন্সিপ্যালের ধমকের ভাগ নেবে? এর উপর কলেজে কর্নেল এসেছে। কপালে আজ কি আছে আল্লাই জানে। ফায়ারিং স্কোয়াডে যদি দাঁড় করিয়েই দেয় তো কর্নেল সাহেবের হাতে-পায়ে ধরে ঠিক কপালে গলি করানোর হুকুম জারি করা যায় না? প্রিন্সিপাল কি তার জন্য কর্নেলের কাছে এ তদবিরটুকু করবে না।’

নুরুল হুদার তীব্র ভয়ের উপরোক্ত বিষয়গুলো দেখুন। মৃত্যুভয় জাগ্রত হয়েছে নুরুল হুদার শরীরে। আবার শহীদ মিনারের ব্যাপারটিও এসেছে দেখেন। ‘এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি প্রিন্সিপ্যাল মিলিটারির বড় কর্তাদের কাছে সবিনয় নিবেদন করেছিল পাকিস্তান যদি বাঁচাতে হয় তো সব স্কুল কলেজ থেকে শহীদ মিনার হটাও। এসব আন অথরাইজড কনসট্রাকশন হলো হিন্দুদের শিবলিঙ্গের সামিল, এগুলো পাকিস্তানের শরীরের কাঁটা।

বাস্তবতার চূড়ান্ত রূপ দিয়েছেন ইলিয়াস। আবার পরের বাক্যে বৌ আসমা যখন বলছেন, ‘এই বৃষ্টিতে শুধু ছাতায় কুলাবে না গো। বৌয়ের আরেক দফা সোহাগ শোনা গেলো, তুমি বরং মিন্টুর রেইনকোটটা নিয়ে যাও। ইস! আবার মিন্টু।

মিন্টু আসমার ভাই এবং মুক্তিযোদ্ধা। এখানে দেখুন ইলিয়াস চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন নুরুল হুদার ভীতি এবং মিন্টুর চোখ। একজন ভীরু প্রকৃতির শিক্ষক এবং আরেকজন দেশপ্রেমে বলিয়ান এক মুক্তিযোদ্ধার গল্প। আগের কয়েকটি লাইনে আসি। বাঙলার প্রেরণার অন্যতম সারথি শহীদমিনারকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

আবার গল্পের শেষে দেখুন। নুরুল হুদা যখন পাকিস্তানীদের হাতে ধরা পড়েন, তারপর। তাকে চোখ বেঁধে নেয়া হয়েছে ক্যাম্পে। মিলিটারি বারবার একই প্রশ্ন করছে ওরা কোথায়, সে জবাব দিচ্ছে জানেনা। মিলিটারি অফিসার বললো এতো কথার দরকার নেই। কলেজে কয়েকটা আলমারি আনা হয়েছিল।

নুরুল হুদা গড়গড় করে বলে যায় কোন ডিপার্টমেন্টে কয়টি। মিলিটারি বলে মিসক্রিয়েটরা এসেছে কুলির বেশে। ওর নাম বলেছে। নুরুল হুদা আশ্চর্য হয়, তারা কি তাকে চেনে।

এই যে এমনভাবে ইলিয়াস গল্পটি সাজিয়েছেন ভাষাশৈলী যেমন আরও প্রাণবন্ত করছে। যখন মিলিটারি অফিসার বলে, ঠিকানা বললে তাকে স্বসম্মানে ছেড়ে দেওয়া হবে। ভাবার সময় দিয়ে মিলিটারি চলে গিয়ে কিছুক্ষণ পর আবার আসে। নুরুল হুদাকে ফের প্রশ্ন করলে সে বলে সে জানে। অন্য একটি ঘরে নিয়ে নুরুল হুদাকে ঝুলিয়ে চাবুকের বাড়ি মারতে শুরু করে। অথচ চাবুকের বাড়ি নুরুল হুদার কাছে উৎপাত মনে হয়। যেন মিন্টুর রেইনকোটের উপর বৃষ্টি পড়ছে। সে মনে ভাবে, মিন্টুর রেইনকোট কোথায় কে জানে। ইলিয়াস কতখানি বাস্তবতা তুলে আনছেন দেখুন। যেন দেখতে পাচ্ছি আমরা। শেষ বাক্যটি খেয়াল করুন। ‘তাদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ ও তাদের সঙ্গে তার আঁতাত রাখার উত্তেজনায় নুরুল হুদার ঝুলন্ত শরীর এতোটাই কাঁপে যে চাবুকের বাড়ির দিকে তার আর মনযোগ দেওয়া হয়ে উঠেনা।’ ইলিয়াস শেষ কটি বাক্য দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন ভীতু নুরুল হুদার সঙ্গে বর্তমান নুরুল হুদার কতোখানি পার্থক্য।

ইলিয়াসের নান্দনিকতা স্পর্শনীয়। ইটের পর ইটের গাঁথুনিতে যেমন গড়ে উঠে ইমারত। ইলিয়াস অনেকটা তেমন নয়, যেভাবে বলছেন ইলিয়াস তেমনভাবেই পরবর্তী বাক্যে ইলিয়াসের ভিন্নরকম রূপান্তর ঘটছে। ত্রিশ বছরের সাহিত্য জীবনে ইলিয়াস নিজেকে বারবার গড়েছেন, ভেঙ্গেছেন আবার নতুন করে তৈরি করেছেন। বহুমাত্রিকতা যার স্বাতন্ত্র্যবোধে তৈরি হয়েছে। ছোটগল্পের এক বিশেষ ধারায় বইয়ে দিয়েছেন শ্রাবণের অঝোর বর্ষণ। ছোটগল্প ধারায় লেখার মুন্সিয়ানাই চিরকাল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে রাখবে সৃষ্টির কিরণে দৃশ্যমান নক্ষত্ররূপে।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন