বিজ্ঞাপন

ছোট স্টলে ক্রেতা জোটে না

February 20, 2023 | 10:53 pm

আসাদ জামান

অমর একুশে বইমেলার ২০তম দিন সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কালী মন্দির গেট দিয়ে বইমেলায় প্রবেশের পর হাঁটতে হাঁটতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের পূর্ব পাশের দ্বিতীয় সারির দ্বিতীয় স্টল ‘পড়ুয়া’য় গিয়ে হাজির। ভিড়হীন মেলায় এ পাশের স্টলগুলোতে লোকজন নেই বললেই চলে।

বিজ্ঞাপন

বই বিক্রি বা দর্শনার্থী সামলানোর ঝামেলা না থাকায় ‘পড়ুয়া’র প্রকাশক কবীর আহমেদ দুই শুভাকাঙ্ক্ষীর সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। সামনে-পেছনে, ডানে-বামে অসংখ্য বই। বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশ করা নতুন বইয়ের মোলাটগুলো এখনও ভার্জিন। কারও হাতের ছোঁয়া বা স্পর্শ যে লাগেনি, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

বাংলা সাহিত্যের ‘নির্মোহ ইতিহাস’ রচয়িতা দীনেশচন্দ্র সেনের ‘প্রাচীন বাঙ্গালা সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান’, ‘বেহুলা’, ‘রামায়ণী কথা’সহ ক্ল্যাসিক এবং চিরকালীন বইয়ের পুনঃমুদ্রণের পাশাপাশি বেশি কিছু নতুন বইয়ও প্রকাশ করেছে ‘পড়ুয়া’। বইয়ের পাণ্ডুলিপি বাছাই এবং প্রকাশের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের পাশাপাশি রুচিবোধেরও পরিচয় দিয়েছে অপেক্ষাকৃত ছোট প্রকাশনী ‘পড়ুয়া’।

‘ভেক না ধরলে ভিখ মেলে না’ বলে একটা কথা আছে না। যত ভালো বই-ই প্রকাশ করা হোক না কেন, পাঠক বা দর্শনার্থী টানতে হলে ১০/১৫ লাখ টাকা খরচ করে বইমেলায় প্যাভিলিয়ন সাজাতে হবে। ভাড়াবাবদ বাংলা একাডেমিকে দিতে হবে আরও প্রায় দুই লাখ টাকা। সেই সঙ্গে এক ঝাঁক চৌকস তরুণ-তরুণীকে বিক্রিয়কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। এরপরে হবে বেচা-কেনার হিসাব।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু সবার সামর্থ তো আর একরকম না। এবার বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪টি প্রতিষ্ঠান প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পেয়েছে। বাকি ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে স্টল বরাদ্দ। এই ৪৮৯টি প্রকাশনা সংস্থার মধ্যে বড় একটি অংশ আছে, যারা অপেক্ষাকৃত ছোট। এসব ছোট প্রকাশনীর স্টলে সচারাচার ক্রেতা বা পাঠকেরা যান না। অথবা যেতে ইতস্ততবোধ করেন। বই কিনুন বা না কিনুন নিজেকে জাতে উঠানোর জন্য নামকরা প্রকাশনীর ‘জমকালো’ প্যাভিলিয়নে গিয়ে ভিড় করেন সবাই।

‘পড়ুয়া’ প্রকাশনার সত্ত্বাধিকারী কবীর আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছোট স্টলে কেউ আসে না। বিশেষ করে এই (পূর্বপাশ) দিকের স্টলে কেউ আসতে চায় না। এদিকটা ফাঁকাই পড়ে থাকে।’

বিজ্ঞাপন

শুধু পূর্বপাশ নয়, বইমেলার সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট প্রকাশনীর স্টলগুলো সব সময় পাঠক ও ক্রেতাশূন্য থাকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম— সব জায়গায় নামকরা ও বড় প্রকাশনীগুলোর স্টল-প্যাভিলিয়নে যখন উপচে পড়া ভিড়, তখন ছোট স্টলগুলো যথারীতি লোকজনশূন্য!

বইমেলার বঙ্গবন্ধু চত্বরের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে অবস্থতি সুলেখা প্রকাশনীর ম্যানেজার শাহ নেওয়াজ ফাহাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্যাভিলিয়ন কালচার চালু হওয়ার পর স্টলের প্রতি পাঠক এবং সাধারণ মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। যত ভালো বই-ই প্রকাশ করা হোক, স্টলে কেউ আসতে চায় না। এ কারণে অনেক প্রকাশকের ইচ্ছা বা সামর্থ না থাকলেও ঋণ করে প্যাভিলিয়ন নেয়।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জলাধারের দক্ষিণ পাশের চমৎকার লোকেশনে আদী প্রকাশনীর স্টল। এখানকার ম্যানেজার এস কে সুজন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রচুর নতুন বই এনেছি। বইয়ের মান অন্য যে কোনো প্রকাশনীর চেয়ে ভালো। কিন্তু আমাদের সামনের সারির প্যাভিলিয়নে যে ভিড় আমরা দেখি, সেটা আমাদের স্টলে কখনো হয় না। এ থেকে বোঝা যায়, স্টলের ব্যাপারে পাঠকের আগ্রহ কম।’

অবশ্য এ ব্যাপারে ভিন্ন মত কোনো কোনো পাঠকের। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কয়েকজন পাঠক বলেন, মান সম্পন্ন বই যেখানেই থাকুক, পাঠক সেখানেই যাবে। বইয়ের মান নিশ্চিত করতে পারলে স্টল-প্যাভিলিয়ন কোনো ফ্যাক্টর না।

বিজ্ঞাপন

খিলগাঁও থেকে মেলায় আসা মঈনুল হক রাজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চাকচিক্য সবাই পছন্দ করে। সে কারণেই হয়তো প্যাভিলিয়ন বা বড় স্টলগুলোতে লোকজনের ভিড় বেশি থাকে। তবে ভালো বই থাকলে ছোট স্টলে গিয়েও পাঠক সেটা কিনবে।’

মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নূরুননবী শান্ত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বেলাল হোসেন এবং হোসেন আল মামুন। সভাপতিত্ব করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

প্রাবন্ধিক বলেন, ‘বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’শব্দের অর্থ এমন কিছু যা ‘স্পর্শ করা যায় না’, ধরা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায়। তবে সেই অনুভব সর্বদা ইন্দ্রিয়জ হয় না। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ইন্দ্রিয়াতীত অনুভবের অস্তিত্ব আছে। বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিভেদ-বৈষম্যের স্থান নেই। এর মধ্যে রয়েছে লোকশিক্ষা বিস্তারের শক্তিশালী উপাদান। বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সকল সময়ের জানা-অজানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে বাঙালি জাতির পরিচয় স্বাতন্ত্র্য বিশ্বময় মূর্ত করে তুলবে।

আলোচকবৃন্দ বলেন, আমাদের জাগতিক ও সামাজিক ভাবনায় বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অস্তিত্ব বিদ্যমান। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আজ আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিচয় ছড়িয়ে পড়েছে বহির্বিশ্বে, অর্জন করেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তবে বাংলাদেশের বিপুল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন। আর নির্দিষ্ট ঐতিহ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল শিল্পী, কলাকুশলি, বাদ্যযন্ত্র শিল্পী সকলের তালিকাও প্রস্তুত করতে হবে। বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে দেশের অর্থনীতিকে হতে হবে সংস্কৃতিবান্ধব।

সভাপতির বক্তব্যে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বিমূর্ত ও মূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পৃক্ত। এসব ঐতিহ্য আমাদের লোকসৃষ্টি। বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষার প্রথম প্রদক্ষেপ হলো সেগুলোকে যথাযথভাবে শনাক্তকরণ।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মোহাম্মদ সাদিক, জয়দীপ দে, স. ম. শামসুল আলম এবং আলী ছায়েদ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন আনিসুল হক, দীলতাজ রহমান, সাহেদ মন্তাজ, ফারহান ইশরাক, নাসরীন নঈম, জাহাঙ্গীর হোসাইন, রুহুল মাহবুব, বোরহান মাসুদ, নাদির খানম এবং লুনা রাহনুমা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহমুদা আখতার, দেওয়ান সাইদুল হাসান, নাজমুল আহসান, জি. এম. মোর্শেদ এবং তিতাস রোজারিও। পুথিপাঠ করেন জালাল খান ইউসুফী।

আগামীকাল ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ৮ই ফাল্গুন মঙ্গলবার, শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। রাত সাড়ে ১২ টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। সকাল ৮ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি জাহিদুল হক।

বিকাল ৪ টায় অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৩। স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৩ শীর্ষক একুশে বক্তৃতা প্রদান করবেন রামেন্দু মজুমদার। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। মেলা চলবে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

সারাবাংলা/এজেড/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন