বিজ্ঞাপন

‘সব বাংলা ভাষার মানুষকে আত্মীয়তায় আবদ্ধ করেছে মাতৃভাষা দিবস’

February 22, 2023 | 3:10 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সব বাংলা ভাষার মানুষকে আত্মীয়তায় আবদ্ধ করেছে বলে মনে করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। তিনি বলেন, ‘এক সময় আমরা শহিদ দিবস পালন করতাম। আজ আমরা শহিদ দিবসের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ায় পৃথিবীর যেখানেই বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ আছে তাদের সবাইকে আত্মীয়তায় আবদ্ধ করতে পেরেছে বলে মনে করি।’

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতি আয়োজিত ‘জাতীয় সাহিত্য উৎসব ২০২৩’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য এসব কথা বলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘মাতৃভাষার যে কতটা কদর, তা আমরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বুঝতে পেরেছি। ওই সময় ১ লাখ শরণার্থী কোলকাতায় গিয়েছিল। আমিও গিয়েছি। পুরো আগরতলা তখন বাংলাদেশের মানুষে লোকারণ্য। তখন আমি ছাত্র। ভাবছিলাম কোথায় থাকব, কী খাব? দেশে কবে ফিরব? নাকি ফিরতে পারব না? ওই সময়ে এক বেলা খাবার খেয়ে আরেক বেলার চিন্তায় পরে যেতাম। কোলকাতা সম্পর্কে ধারণা ছিল আগে থেকেই। কিন্তু আগরতলা সম্পর্কে অতটা ধারণা ছিল না। যখন দেখলাম তারাও বাঙালি, আমাদের মতো বাংলায় কথা বলেন, তাদের সঙ্গে মিশে গেলাম। তারা আমাদের খাবার দিয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা আমাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছে। বাংলা ভাষাভাষীদের সকলে যে এক আত্মার সম্পর্ক তা তখন টের পেয়েছি।’

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের নাগরিকেরা পাশে না দাঁড়ালে হয়তো আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাধীনতা পেতাম না। ভারতের নাগরিকেরা আমাদের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। সেজন্য আমরা তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। আজকে দুই বাংলার সাহিত্যের ভাষা বাংলা, সংস্কৃতিতেও কোনো ভেদাভেদ নেই। কোলকাতা, আগরতলা গেলে মনে হয় যেন ঢাকাতেই আছি। খাবারও এক রকম। যে সবজি, ভাত আমরা খাই, তা সেখানকার মানুষও খান। বাংলা ভাষা আমাদের দুই দেশকে আন্তরিকতার স্থানে নিয়ে গেছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বায়ান্নতে ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি ঋণের শেষ নেই। বঙ্গবন্ধু জেলে বসে ওই আন্দোলনের সমর্থন দিয়েছিলেন। পাকিস্তান ভাগ হলেও তারা বাংলাকে স্বীকৃতি দিল না। বঙ্গবন্ধু তখন ভাবলেন, পাকিস্তান থেকে এই ভাষা উদ্ধার করতে হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে আগরতলা গিয়েছিলাম। ভারত সরকার আমাদের থাকতে দিয়েছে, খেতে দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে। তারপর দেশে ফিরে যুদ্ধ করেছি। দেশ স্বাধীন করেছি।’

ভারতীয় সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক ও ড. হাছান মাহমুদ, ছবি: সারাবাংলা

ভারতীয় সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক ও ড. হাছান মাহমুদ, ছবি: সারাবাংলা

ভারত থেকে আসা সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিদের উদ্দেশে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া এতো দ্রুত আমরা স্বাধীনতা পেতাম না। আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। দুই বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি একই আবেগ সৃষ্টি করে।’

অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত করলেও আমাদের ভাষাকে বিভক্ত করতে পারেনি। আমাদের হৃদয়, কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে বিভক্ত করতে পারেনি। আমাদের ভাষা দিবসে ভারতের নাগরিকদের শ্রদ্ধা দেখে অভিভূত হই। কোলকাতাও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছে। অনেকে এদিনে বাংলাদেশে এসেছেন। বাঙালিরা অনেক জাতি গোষ্ঠীর তুলনায় অপেক্ষাকৃত গরিব হলেও আমরা মেধাবি। ইউরোপের বাইরে যিনি নোবেল পান তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমরা মেধার স্বাক্ষর যুগে যুগে রেখেছি। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর যখন বলা হলো উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র বাংলাভাষা। তখন জিন্নাহর সামনে দাড়িয়ে কেউ প্রতিবাদ করবে তা ভাবা যায়নি। কিন্তু ভাষার দাবিতে আমাদের বাঙালিরাই প্রাণ দিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু প্রতিবাদ করেছিলেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বে মাতৃভাষা বাংলা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। যারা ভাষার তথাকথিত ইসলামিক করার চেষ্টা করেছিল, কবি গুরুর গান পাকিস্তানে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল, যারা এখনো দ্বিধায় আমি বাংলাদেশি না বাঙালি? যারা আমাদের ভাষার ওপরে হিংস্র থাবা দিয়েছিল, সংস্কৃতি বদলাতে চেয়েছিল। তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিএনপি। তারা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে প্রশ্ন তোলে, ভাষা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, বিএনপির ছায়াতলে থেকে তারা। যারা ভাষার বিকৃতি ঘটায়, সংস্কৃতি বিভক্ত করতে চায় সেসব অপশক্তি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।’

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এমন আয়োজন দুই বাংলার মানুষের মধ্যে বন্ধন আরও দৃঢ় হবে। সাহিত্য চর্চা দুই বাংলার সংস্কৃতিতে আরও সমৃদ্ধ করবে।’

নারায়নগঞ্জ জেলা সমিতির আয়োজনে দুই দিনব্যাপী এই উৎসবে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত থেকে কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন। ভারত-বাংলাদেশ জাতীয় সাহিত্য উৎসব এখন থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান আয়োজকরা।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআর/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন