বিজ্ঞাপন

ইয়াজদানি ফিরছেন না, নতুন পিডি চান মেয়র রেজাউল

February 28, 2023 | 10:08 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মারধর ও কার্যালয় ভাংচুরের পর ঢাকায় চলে যাওয়া প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানিকে একমাসেও চট্টগ্রামে ফেরাতে পারেনি সিটি করপোরেশন। এ অবস্থায় নতুন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করেছেন বলে সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় জানিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরীর আন্দরকিল্লায় নগর ভবনের কে বি আব্দুস ছাত্তার মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৫তম সাধারণ সভায় মেয়র একথা জানান।

সভায় উপস্থিত কয়েকজন কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্প পরিচালক না থাকায় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা করে কয়েকজন কাউন্সিলর বক্তব্য দেন। এ সময় মেয়র প্রকল্প পরিচালকের ওপর হামলাসহ সার্বিক প্রেক্ষাপট ব্যাখা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ করেছেন বলে তথ্য দেন। প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানি যদি চূড়ান্তভাবে চট্টগ্রামে ফিরতে অসম্মতি প্রকাশ করেন তার বদলে অন্য কাউকে নিয়োগের অনুরোধ করা হয়েছে বলে মেয়র জানান।

এছাড়া সভায় মেয়র জানান, একটি উন্নয়ন প্রকল্পের একই পর্যায়ে একজন ঠিকাদারকে একাধিক কাজ দেওয়া হবে না। কাজের শৃঙ্খলা রক্ষায় একজন ঠিকাদার শুধুমাত্র একটি পর্যায় কিংবা সেই পর্যায়ের একটি অংশে কাজ করতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

সভায় প্রকল্প পরিচালকের ওপর হামলার ঘটনায় সর্বসম্মতভাবে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে। এর আগে মেয়র বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থে একজন ঠিকাদারকে একই টেন্ডার নোটিশে একাধিক কাজ দেওয়া হবে না। আর যেসব ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত ঠিকাদারদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

চসিকের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে মেয়র সভায় বলেন, ‘কারো গাফিলতির জন্য জনদুর্ভোগ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সভায় উপস্থিত ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সভা থেকে সর্বসম্মতভাবে প্রকল্প পরিচালকের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা নিন্দা প্রস্তাব পাস করেছি। ঠিকাদারদের কাজে শৃঙ্খলা আনার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, একজন ঠিকাদার একই ফেইসে একাধিক কাজ করতে পারবেন না।’

বিজ্ঞাপন

‘গত একমাস ধরে প্রকল্প পরিচালক অফিস করছেন না। মেয়র মহোদয় সভায় জানিয়েছেন, উনাকে অফিসে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে উনি যদি নিতান্তই যোগ দিতে অসম্মত হন, তাহলে কাজ চলমান রাখার জন্য উনার পরিবর্তে অন্য কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করা হয়েছে বলে মেয়র মহোদয় সভাকে অবহিত করেছেন’- বলেন কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী।

গত ২৯ জানুয়ারি বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী ভবনের চতুর্থ তলায় নিজ কার্যালয়ে হামলার শিকার হন প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানি। তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। অবকাঠামো উন্নয়নে চসিকের ২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প সরকার অনুমোদন দেওয়ার পর ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট ইয়াজদানিকে এর পরিচালক (পিডি) করে চসিকে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রকল্পের ২২০ কোটি টাকার ৩৭টি উন্নয়ন কাজ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ভাগ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে প্রকল্প পরিচালকের কক্ষে ঢুকে ভাংচুরের পাশাপাশি তাকে বেধড়ক পেটান একদল ঠিকাদার। এ ঘটনায় সেদিনই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামাল উদ্দিনের দায়ের করা মামলায় নগরীর খুলশী থানা পুলিশ পাঁচ ঠিকাদারকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন- সঞ্জয় ভৌমিক কংকন, সুভাষ দে, মো. ফিরোজ, মাহমুদুল্লাহ ও সাহাব উদ্দিন। মামলাটি তদন্ত করছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ঘটনার পরদিনই চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। গত ২২ ফেব্রুয়ারি কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। ঠিকাদারি কাজ না পেয়ে প্রকল্প পরিচালকের ওপর হামলায় ১১ ঠিকাদারের সম্পৃক্ততা পায় তদন্ত কমিটি। পরে এই ১১ ঠিকাদারের ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করে সিটি করপোরেশন।

বিজ্ঞাপন

সেগুলো হলো- মুহাম্মদ সাহাব উদ্দিন (মেসার্স মাহমুদা বিল্ডার্স ও মেসার্স এস জে ট্রেডার্স), সঞ্জয় ভৌমিক (মেসার্স বাংলাদেশ ট্রেডার্স), মোহাম্মদ ফেরদৌস (মেসার্স মাসুদ এন্টারপ্রাইজ), সুভাষ মজুমদার (মেসার্স জয় ট্রেডার্স), মো. হাবিব উল্লাহ খান (মেসার্স খান কর্পোরেশন), মো. নাজিম উদ্দিন (মেসার্স নাজিম এন্ড ব্রাদার্স), মো. নাজমুল হোসেন ফিরোজ (মেসার্স রাকিব এন্টারপ্রাইজ), মো. ইউসুফ (মেসার্স ইফতেখার অ্যান্ড ব্রাদার্স), আশীষ কুমার দে ও হ্যাপী দে (মেসার্স জ্যোতি এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স দীপা এন্টারপ্রাইজ) এবং মো. আলমগীর (মেসার্স তানজিল এন্টারপ্রাইজ)।

এদিকে, হামলার পরই চট্টগ্রাম ছেড়ে যান প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানি। তিনি বর্তমানে ঢাকায় তার মূল কর্মস্থল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে (এলজিইডি) অফিস করছেন। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে বুধ ও বৃহস্পতিবার তিনি চসিকে অফিস করতেন। হামলার পর থেকে গত একমাসে তিনি আর চসিকে আসেননি।

জানতে চাইলে মো. গেলাম ইয়াজদানি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার মূল কর্মস্থল তো এলজিইডি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আমাকে সংযুক্ত করে পাঠানো হয়েছিল। হামলার বিষয় আমি আমার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। কর্তৃপক্ষ আমাকে চট্টগ্রাম যাওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। আমি এলজিইডিতে নিয়মিত অফিস করছি। আমি চট্টগ্রামে যাবো কি যাব না সেটা আমার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে না।’

চসিক মেয়র প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তনের অনুরোধ করেছেন, এ তথ্য অবহিত হয়ে তিনি বলেন, ‘এটা উনারা চাইতেই পারেন। আমার কিছু বলার নেই।’

সিডিএ’র কারণে জনদুর্ভোগ: মেয়র

এদিকে, সাধারণ সভায় চসিকের একাধিক কাউন্সিলর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের জন্য খালে বাঁধ নির্মাণ করায় বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া গৃহকর নিয়ে একটি ‘কুচক্রিমহল’ গুজব ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কারণে জনদুর্ভোগের বিষয়ে কাউন্সিলরদের অভিযোগের সঙ্গে একমত জানিয়ে বলেন, ‘রিটেইনিং ওয়ালের কারণে নালা-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের অনেকগুলো এলাকার মানুষ খুব কষ্ট পাচ্ছে। আমি সিডিএ চেয়ারম্যানকে বার বার বলেছি যাতে এ প্রকল্পের জন্য বর্ষায় মানুষ কষ্ট না পায়। তবে সিডিএ থেকে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখছি না।’

গৃহকরের বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘গৃহকর নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে আপিলের মাধ্যমে কর নেওয়া হচ্ছে। জনগণ গৃহকর দিয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরছে।’

এদিকে রাতের আঁধারে কোনো সংস্থা রাস্তা কাটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘ওয়াসা চলমান স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য রাস্তা কাটবে। শুধু ওয়াসা নয়, যেকোনো সংস্থা রাস্তা কাটার আগে অবশ্যই চসিক থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। চসিকের পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। কাউন্সিলরদের সঙ্গে সমন্বয় করে রাস্তা কাটতে হবে। আমরা রাস্তা বানাবো আর রাতের আঁধারে নতুন রাস্তা কেটে ফেলবে- এমন কোনো অভিযোগ পেলে কঠোর পদক্ষেপ নেব।’

এদিকে, চসিকের নিজস্ব তহবিলের টাকা দিয়ে আন্দরকিল্লায় নতুন নগর ভবন নির্মাণ করা হবে বলে সভায় জানান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘চসিকের স্থায়ী কার্যালয় না থাকায় নাগরিক সেবা প্রদানে সমস্যা হচ্ছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চসিকের নিজস্ব ফান্ডে স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ করব।’

জানতে চাইলে কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকবছর ধরে চেষ্টার পরও নগর ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে তোলা যায়নি। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সরকার বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিচ্ছে না। এ জন্য মেয়র মহোদয় নিজস্ব তহবিল থেকেই টাকা দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বলে তিনি সভায় জানিয়েছেন।’

সভায় চসিকের প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর এবং বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরাও উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন