ঢাকা: রাজধানীর গুলিস্তানে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণের দ্বিতীয় দিন সকালে ফের উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়েছে। বুধবার (৮ মার্চ) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে উদ্ধারকাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। এর আগে গতকাল রাত পৌনে এগোরটার দিকে উদ্ধারকাজ স্থগিত করা হয়েছিল।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ওই ভবনে বিস্ফোরণে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। এর মধ্যে ১১ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ভবনটিতে এখনও কেউ আটকা পড়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রাতে ওই ভবনে ফায়ার সার্ভিস ঢুকেনি। নিখোঁজদের স্বজনরা সকাল থেকেই সিদ্দিকবাজারে অপেক্ষায় রয়েছেন।
সকালে ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেছে। জনতার ভিড়ে উদ্ধারকাজে বেগ পেতে হচ্ছে কর্মীদের। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মানুষকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
বুধবার সকাল সিদ্দিকবাজারে র্যাবের বোম ডিসপোজাল ইউনিট কাজ করছে। এর আগে গতকালই তাৎক্ষনিক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভবনের আশেপাশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান স্যানিটারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বিস্ফোরণ ঘটা ভবনটির নিচ তলায় টাইলসের গোডাউন ছিল। বিস্ফোরণে আশেপাশের বেশ কয়েকটি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিস্ফোরণ বেজমেন্টে
সাত তলা ভবন ক্যাফে কুইনের বেজমেন্ট থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ভবনের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এ তথ্য জানান সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল টিমের লিডার মেজর মো. কায়সার বারী।
সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির বোম ডিসপোজাল টিমের লিডার মেজর কায়সার বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে বিস্ফোরণ হয়েছে বেজমেন্ট থেকে। তবে বিস্ফোরকের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। বিস্ফোরণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে- তাতে আমাদের মনে হয়েছে, এতে কোনো বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদের বোম ডিসপোজাল টিম নিয়ে বেজমেন্টে প্রবেশ করতে পারিনি। ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সংস্থা বলেছে, বিল্ডিংটা ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং পর্যবেক্ষণও বলছে, বিল্ডিংয়ের অনেকগুলো বিম নষ্ট হয়েছে। কলামগুলোর অবস্থাও ভালো না। সেজন্য বিল্ডিংটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ডিভাইস দিয়ে যতদূর এপ্রোচ করা সম্ভব হয়েছে তার মধ্যে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। আমাদের যন্ত্র দ্বারা প্রাথমিকভাবে কোনো এক্সপ্লোসিভের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
বিস্ফোরণের কারণ জানতে চাইলে মেজর কায়সার বলেন, এখানে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এ ধরনের বিস্ফোরণ ঘটাতে বিপুল পরিমাণ এক্সপ্লোসিভের প্রয়োজন হতো। সে পরিমাণ এক্সপ্লোসিভ ব্যবহার হলে আমরা গন্ধ পেতাম। আমাদের ডিভাইস ও বিভিন্ন সংস্থার ডগ স্কোয়াডও এক্সপ্লোসিভের কোনো উপস্থিতি পায়নি।
মেজর কায়সার বলেন, এই বিল্ডিংটাকে স্টেবল করার পর বেজমেন্টে যেতে পারলে আমরা আরও কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারব। সিটি কর্পোরেশন, বুয়েটসহ অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মতামত নিয়ে বিল্ডিংটা স্টেবল করতে হবে।