বিজ্ঞাপন

জোর করে মরদেহ নিয়ে যায় বন্ধুরা, মৃত্যু সনদের জন্য স্ত্রীর ধরনা

March 15, 2023 | 5:32 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় দোকান কর্মচারী সম্রাট হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এর পর তার বন্ধুরা মরদেহের কোনো নিবন্ধন না করিয়েই সেখান থেকে জোর করে নিয়ে গিয়ে দাফন করে। কিন্তু বর্তমানে বিপাকে পড়েছেন সম্রাটের স্ত্রী। স্বামীর মৃতদেহের নিবন্ধন না থাকায় সম্রাটের স্ত্রী মৃত্যু সনদের জন্য এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন যে, বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে মৃত্যুসনদ দেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে।

বিজ্ঞাপন

সম্রাটের স্ত্রী এলমা আক্তার রিয়া ১২ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরে স্বামীর মৃত্যু সনদের জন্য ঘোরাঘুরি করছেন। ইতোমধ্যে ঢাকা জেলা প্রশাসক ও ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বরাবর আবেদনও জমা দিয়েছেন সম্রাটের স্ত্রী এলমা। তবে বুধবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি স্বামীর মৃত্যু সনদ পাননি।

এলমা আক্তার সারাবাংলাকে জানান, সম্রাটের বাবা মৃত আশরাফ উদ্দিন গামা। বংশাল ২৫ নম্বর মালিটোলা নিজেদের বাড়ি তাদের। পাশেই ২৭ নম্বর বাড়িটি এলমাদের। দুই সন্তানের জনক ছিলেন সম্রাট। ছেলে সারাফ (৫) ও চার মাসের মেয়ে সারা। সিদ্দিকবাজারে আনিকা এজেন্সি নামে চাচাতো ভাই মোমিন উদ্দিন সুমনের দোকানটিতে আট বছর ধরে ২০ হাজার টাকা বেতনে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন সম্রাট।

এলমা বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে বাসা থেকে কাজে যান সম্রাট। বিকেলে আমাদের এক আত্মীয় আমাকে ফোন দিয়ে জানান, সিদ্দিকবাজারে এসি বিস্ফোরণ হয়েছে। অনেক মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে। খবর শুনে আমি দৌড়ে সম্রাটের দোকানে ছুটে যাই। তবে ধ্বংসযজ্ঞ দেখে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারেনি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘সিদ্দিকবাজারে স্বামীকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। যখন শুনলাম সবাইকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তখন সেখানে গিয়ে প্রতিটি রুমে রুমে খুঁজেছি। চার থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা খোঁজার পর জরুরি বিভাগের ৪ নম্বর রুমে সম্রাটকে দেখতে পাই। ওর অবস্থা তখন খুব খারাপ ছিল। ডাক্তাররা বলছিলেন, ইসিজি করে দেখতে হবে। এরপর ৩ নম্বর রুমে ইসিজি করানো হয়। কিন্তু আমাকে আর ওর সঙ্গে কেউ থাকতে দেয়নি। আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।’

তিনি আরও জানান, তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে সম্রাটের মরদেহটিও বাসায় নিয়ে যায় স্বজনরা। পরে ভোর রাতেই আজিমপুর কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। তবে ওই রাতে লাশ কীভাবে নিয়ে গেছেন বাসায়, সে বিষয়ে কিছুই জানেন না। শুনেছেন, সম্রাটের বন্ধুরাই তার লাশ হাসপাতাল থেকে জোর করে নিয়ে গিয়েছিল।

ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর কেন আপনি মৃত্যু সনদের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে এলমা বলেন, ‘আমাদের দুটি সন্তান। ওদের দাদা-দাদি কেউ নাই। বাড়িটিও সম্রাটের বাবা-চাচার নামে। বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণেই এখন দৌড়-ঝাঁপ করছি। কেউ আমার সঙ্গে নাই। সম্রাটের পরিবারেরও কেউ নেই যে আমাকে সাহায্য করবে। আমি এখন অসহায়। ঘটনার পর দিন থেকেই জেলা প্রশাসনের কার্যালয়, হাসপাতালে একাধিকবার ঘুরছি। কেউ কোনো সুরাহা দিচ্ছেন না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যু সনদ ছাড়া কোথাও কিছু করতে পারছি না। জেলা প্রশাসন থেকে যে অনুদান সেটিও পাচ্ছি না। আবার মুত্যু সনদ না থাকলে সম্পত্তি বা অন্য যেকোনো কিছু কাজ করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হবে। তাই মুত্যু সনদটি দরকার।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফোনে আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে তাদের হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি।’

জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘মৃত্যুসনদ চেয়ে সম্রাটের স্ত্রী একটি আবেদন করেছেন। আমরা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের মতামত চেয়েছি। ১৯ মার্চ অফিসে নিয়মিত হব। ওইদিন এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’

এদিকে, ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যাদের মৃত্যু সনদ পেয়েছি তাদের তালিকা করে সরকারি অনুদান দিয়েছি। মৃত সম্রাটের নাম সেই তালিকায় কেন নাই সেটি বলতে পারব না। নিশ্চয়ই এখানে ব্যত্যয় কিছু ঘটেছে। সেটি দেখা হবে। একটা আবেদন পেয়েছি সেটি নিয়ে কাজ চলছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের তালিকা ধরে মূলত আমরা কাজ করেছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘটনার দিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি নিবন্ধন ডেস্ক খোলা হয়েছিল। সেখানেও সম্রাটের নাম কেউ লেখায়নি। তাই তার নাম বাদ পড়েছে। এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মৃত্যুসনদ নিয়ে এলে তালিকায় সম্রাটের নাম নিবন্ধন করা হবে।’

উল্লেখ্য, একই দুর্ঘটনায় সম্রাটের চাচাতো ভাই মোমিন উদ্দিন সুমনও মারা গেছেন। আনিকা এজেন্সির মালিক মোমিনের লাশ ঘটনার পরদিন বিকেলে ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সম্রাটসহ মৃতের সংখ্যা ২৪ জন।

সারাবাংলা/এসএসআর/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন