বিজ্ঞাপন

রেলওয়ের প্রকল্প সমীক্ষায় ‘গলদ’— সময়ে হচ্ছে না শেষ, বাড়ছে খরচ

March 19, 2023 | 11:05 am

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দোহাজারি-কক্সবাজার প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালে। ছয় বছর মেয়াদী এই প্রকল্প পরে সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত। প্রথমে ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও এখন তা বেড়ে গিয়ে ঠেকেছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকায়। যার ব্যয় বৃদ্ধির হার ৮৭৪ শতাংশ। এই প্রকল্পে আরও এক দফা ব্যয় বাড়ানোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। যা শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। পরে তা আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়, সঙ্গে বেড়ে যায় ব্যয়ও। ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার ব্যয় এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকায়। শুধু এই দুই প্রকল্পই নয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের চলমান অধিকাংশ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে খরচের বোঝা।

রেলওয়ের চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এসব প্রকল্পের একটিও নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হবে না। আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় ধরার কারণে প্রকল্প থেকে অর্থ কমানোর নজিরও রয়েছে রেলওয়েতে। অথচ প্রকল্প ব্যয় নানা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মত প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া, ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া এবং বিদেশি দাতাদের সরে যাওয়ার অন্যতম কারণ মাঠ পর্যায়ে সঠিক সমীক্ষা না হওয়া। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার পরামর্শ তাদের।

বিজ্ঞাপন

দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় বড় গণপরিবহন বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলকে উন্নয়নের সড়কে টেনে তুলতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে ২০১১ সালে গঠন করা হয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। এরপর ২০১২ সাল থেকে সরকারের উন্নয়ন বাজেটে যুক্ত হয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। নেওয়া হয় নানা প্রকল্প। রেলওয়ে সূত্র অনুযায়ী, গত ১০ বছরে প্রায় অর্ধশত প্রকল্প হাতে নিয়েছে রেলওয়ে। যার সিংহভাগই চলমান। তবে তা চলছে কচ্ছপ গতিতে।

প্রকল্পের ভারে ন্যুব্জ রেলওয়ে
বাংলাদেশ রেলওয়েতে এখন চলমান প্রকল্পের সংখ্যা ৩৪টি। এগুলোর অগ্রগতি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২৫টির সময়সীমা বিভিন্ন মেয়াদে সর্বোচ্চ ১১ বছর বাড়ানো হয়েছে। যার মধ্যে ১১টি প্রকল্পের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। একটি প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৮৭৪ শতাংশ।

জানা গেছে, প্রকল্পগুলোর মূল ব্যয় ১ লাখ ৮ হাজার ২০ কোটি টাকা ধরা হলেও সংশোধন করতে করতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ২৮ কোটি টাকায়। অর্থাৎ বতর্মানে যে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আর ব্যয় বেড়েছে তাতে আরও অতিরিক্ত ৩২ হাজার ৮ কোটি টাকা বেশি খরচ করতে হবে। যা পদ্মাসেতু নির্মাণের চেয়েও বেশি।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, পদ্মাসেতু প্রকল্পে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

জানা যায়, এসব প্রকল্পের সিংহভাগই অবকাঠামো নির্মাণ খাতে। এই খাতের মোট ২৯ প্রকল্পের ব্যয় ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা। যা মোট প্রকল্প মূল্যের ৯৩ শতাংশ।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে শেষ হওয়া ১৩ প্রকল্পের বাস্তবায়ন মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবগুলোতেই সময় বাড়ানো হয়েছে এবং চারটি প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিদেশ থেকে উপাদান সরবরাহে দেরি হওয়া, বারবার নকশা পরিবর্তন, কাজের ধরনে পরিবর্তন, পরামর্শক দাতা নিয়োগে জটিলতা, প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে ব্যয় বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

বাড়তে পারে নতুন প্রকল্পের ব্যয়ও
প্রকল্প পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রেলওয়ের ৩৪টি প্রকল্পের মধ্যে ৯টি প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয়নি। যে কারণে এগুলোর মেয়াদ কিংবা ব্যয় বৃদ্ধির বিষয় এখনও সামনে আসেনি। তবে সেগুলোর কাজ শুরু করায় দেরি হওয়াতে ওইসব প্রকল্পেরও মেয়াদ বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সঙ্গত কারণেই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে সম্ভাবনা থাকে ব্যয় বৃদ্ধিরও। প্রকল্পগুলোতে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে তার বেশিরভাগই বিদেশি ঋণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হলে ব্যয় বাড়ে আর বিদেশি ঋণের ওপরে প্রভাব পড়ে। যা দেখা গেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর বিআরটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে। জানা গেছে, ২০০৮-০৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির( এডিপি) আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১ লাখ ৭ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এদিকে প্রকল্প ব্যয় না বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে রেলওয়ের ৩৪ প্রকল্পে ব্যয় ত্রিশ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে রেলওয়ের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

রয়েছে অভিযোগের পাহাড়
হাজার হাজার কোটি টাকা খরচের প্রকল্প ঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে উদাসীনতা, বিদেশি ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে মাঠপর্যায়ে সঠিক সমীক্ষা না করার।

সমীক্ষার বিষয়টি সামনে আসে যখন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়। ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল রেল লাইন নির্মাণ’ প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রাথমিক পরিকল্পনায় জমি অধিগ্রহণের বিষয় না থাকায় বাস্তবায়নে গিয়ে চরম জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরে এই প্রকল্পের আওতায় দুই কিলোমিটার রেলপথ বাদ দিয়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু ব্যয় বেড়ে যায় একশো ভাগেরও বেশি। ওই প্রকল্পের সমীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও প্রকল্পের কাজ চলছে বেশ ধীরগতিতে।

রেলওয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিদেশি ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যয় নির্ধারণের। এমন অভিযোগ অনুসন্ধান করে রেলওয়ের দুই প্রকল্প জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের নির্ধারণ করা ব্যয় ১৪ হাজার ৬২১ কোটি টাকা থেকে ৪০ শতাংশ এবং আখাউড়া-সিলেট সেকশনের মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা প্রকল্পের ১৬ হাজার ১০৪ কোটি টাকা থেকে ২০ শতাংশ কর্তন করা হয়।

খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান করে এই দুই প্রকল্পের ব্যয় কমানোর পর চীন অর্থায়ন থেকে সরে গেছে। এখনও এই দুই প্রকল্পের জন্য আর কোনো অর্থদাতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, রেলওয়ের কিছু প্রকল্প অপরিকল্পিতভাবে নেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও তা কাঙ্ক্ষিত ফল দেবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাবনা-ঢালার চর রেললাইন প্রকল্পের কথা। ওই লাইন দিয়ে শুধুমাত্র দিনে ট্রেন চলে, তাও পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যায় না বলে জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলওয়ের অন্য মেগা প্রকল্পগুলো পূনঃমূল্যায়ন করা গেলে এমন হাজার কোটি অতিরিক্ত টাকা বের হতো। রেলওয়েতে নিয়ম রয়েছে প্রকল্প নেওয়ার সময় পূর্ববর্তী কোনো প্রকল্পকে রেফারেন্স হিসেবে দেখানো হয়। এখানেও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, কিছু কিছু প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সবচেয়ে ব্যয় বহুল প্রকল্পকেই রেফারেন্স হিসেবে দেখিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, কোনো প্রকল্পে কম ব্যয় ধরা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাস্তবায়ন শুরু করতে দেরি করেন এবং ব্যয় বাড়ানোর উপায় খুঁজতে থাকেন। আর এই মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও পরামর্শকের শক্ত সিন্ডিকেট রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অতীতের অনেক ঊর্দ্ধতন প্রকল্প কর্মকর্তা অবসরে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক নয়তো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে মোটা অংকের বেতনে চাকরি নিয়ে থাকেন। এখনও অনেকে কাজ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ সিস্টেম প্রকল্পে যেমন দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি করছে, তেমনি বাড়ছে ব্যয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সিস্টেমের বিরুদ্ধে কেউ পদক্ষেপ নিলে তাকে নানাভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। তাই খোদ মন্ত্রীও এই নিয়মের বিপরীতমুখী হোন না।

বিশেজ্ঞরা যা বলছেন
কথা পরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হকের সঙ্গে। প্রকল্প নেওয়ার আগে সমীক্ষা বা প্রাক সম্ভাবতা যাচাইকে ওই প্রকল্পে মূল দলিল উল্লেখ করে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সমীক্ষাকে গোটা পৃথিবী উন্নয়নের দলিল ও দর্শন হিসেবে মনে করে। বাংলাদেশ এর পুরোই উল্টা। যেখানে একটা প্রকল্পের ফিজিবিলিটি করতে এক থেকে দেড় বছর লেগে যায়, সেখানে আমাদের দেশের কর্মকর্তারা এক রাতের মধ্যেও করে ফেলেছেন। এটা এমন একটা সংস্কৃতি তৈরি করেছে যে ফিজিবিলিটি মানেই একটা প্রকল্প নিয়ে আসা। যারা এমন সমীক্ষা করেন তারা জানেন, এটা কেউ খুঁজবেও না। শুধু প্রেজেন্টেশনে কিছু মুখরোচক কথা বলতে হবে। পরে কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় মসজিদ আছে, মাদরাসা আছে, নদী খাল বিলও সামনে আসে। এমন ঘটনা প্রায় প্রত্যেক প্রকল্পের ক্ষেত্রে ঘটে। যে কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে, বাড়ে ব্যয়, অর্থ অপচয় হয় জনগণের। এজন্য কাউকে তো জবাবদিহিতা করতে হয় না। ফলে একই কাজ বার বার ঘটে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অদক্ষতার বিষয় তো আছেই, আবার উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে এক শ্রেণির কর্মকর্তারা সুবিধা নিয়ে থাকেন, সে বিষয়টিও মিথ্যা নয়।’

তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের পরিবীক্ষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যদি থাকতো আর যদি এটা সুদৃঢ় হতো তাহলে এসব নিয়ন্ত্রণ করা যেত। এখানে একটা ঘাটতি তো রয়েছেই। এখন যেটা হয়েছে পুরো খাতই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে এবং এটি এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। মন্ত্রী থেকে শুরু করে ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সবার যদি ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি যদি না থাকে আর সকলে যদি যোগসাজেশ করে এবং সুবিধা পায় কোনো না কোনো ভাবে তাহলে এটা বন্ধ করা কঠিন, এখানে কাজ করতে হবে। কাজে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’

এখন যা আছে
এতো এতো প্রকল্পের মধ্যেও লোকসানে রয়েছে রেল। ইঞ্জিন-কোচের স্বল্পতা তো রয়েছেই, আছে লোকবলের অভাব। ফলে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে ট্রেন। যেগুলো চলাচল করছে সেগুলোও সক্ষমতার চেয়ে কম কোচ নিয়ে চলছে। কাগজেকলমে রেল দেখাচ্ছে সারাদেশে ৩৬৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। কিন্তু বাস্তবে চলছে ২৭৬টি। অর্থাৎ ৯২টি ট্রেনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২০ বছর। আর কোচের ৩৫ বছর। রেলের হিসাবেই ৬৭ শতাংশ ইঞ্জিন এবং ৪৭ শতাংশ কোচের আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে।

বর্তমানে পুরনো কিছু রেললাইন রয়েছে, যে সিগন্যালিং ব্যবস্থা রয়েছে তারও আয়ুষ্কাল শেষ। এখনো জরাজীর্ণ কোচ দিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হয়। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে রেলে যে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে, রেলের আয়-ব্যয়ের হিসাবের সময় তা বিবেচনায় নেওয়া হয়না। শুধু দৈনিন্দন পরিচালনায় যে ব্যয় হয়, সেটা বাদ দিয়ে মুনাফা হিসাব করা হয়। এতেই দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতার পর কখনোই লাভের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। বর্তমানে বছরে লোকসানের পরিমান দাঁড়িয়েছে গড়ে ২ হাজার কোটি টাকা।

রেলওয়ের হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে সংস্থাটি লোকসান দিয়েছে ১ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ২ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। আর ২০১৮-১৯ সালে লোকসান ছিলো ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। যদিও একথা মানতে নারাজ রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সারাবাংলাকে জানান, প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আবার কখনও দেখা যায়, যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পাঁচটা ব্রিজের স্থানে আরও দুইটা ব্রিজ বেশি নির্মাণ করতে হচ্ছে, তখন তো ব্যয় বাড়বেই।

তাহলে প্রকল্পের আগে সমীক্ষা কেন করা হয়, এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও দেশের বাইরের বিশেষজ্ঞ এনে সমীক্ষা করাতে হয়। দেশে এখনও এমন জায়গা গড়ে ওঠেনি।’

সমীক্ষার ক্ষেত্রে উদাহরণ টানেন সড়ক বিভাগেরও। বলেন, ‘বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি অন্য মন্ত্রণালয়েরও এমন সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় নকশা পরিবর্তন করতে হয়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়।’

তিনি আরও জানান, স্বাধীনতার পর থেকে সড়কপথকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে রেলকে সেভাবে দেওয়া হয়নি। সড়ক পথ বেড়েছে আর রেলপথ কমেছে। রেলের ইঞ্জিন, কোচ জরাজীর্ণ বললেন রেলপথমন্ত্রীও। তবে সেসব ধীরে ধীরে পরিবতর্ন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে রাশিয়া -ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে চাপ পড়েছে তার ধাক্কা বাংলাদেশেও লেগেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রকল্প ব্যয় কমাতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে করে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকল্পগুলোতে যে ব্যয়ের বোঝা বাড়ছে তাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন রেলপথমন্ত্রী।

রেলওয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহনকে আরও জনপ্রিয় করে সেবার পরিধি বাড়িয়ে এর সুষম উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব শাখার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সারাবাংলা/জেআর/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন