বিজ্ঞাপন

‘দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশের নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়েই সমস্যা’

March 21, 2023 | 6:56 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেছেন, দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়েই এটি বিদ্যমান। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা অর্জনে দুর্নীতি সবচেয়ে বড় বাধা। তবে দুর্নীতি উন্মোচন করা ও দায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করায় যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এর জাতীয় সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় সময় সোমবার (২০ মার্চ) প্রকাশিত মানবাধিকার বিষয়ক এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রদূত এ সব কথা বলেন। প্রতিবেদনে ‘দুর্নীতিকে এখনো বাংলাদেশের বড় সমস্যা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান পিটার হাস।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দিতে পারে যে, অন্য বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে দুর্নীতি কম, তাহলে বাংলাদেশ আরও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের সব জায়গায় কমবেশি দুর্নীতি আছে৷ দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমার দেশেও কিছু কুখ্যাত কেলেঙ্কারি ঘটেছে।’

তবে দুর্নীতি উন্মোচন করা ও দায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করায় যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানান পিটার হাস।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক নেতারা আমাকে জানিয়েছেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এমন দেশে বিনিয়োগ করে যেখানে দুর্নীতি কম, আমলাতান্ত্রিক বাধা কম, আইনের শাসন ভালো, এবং ব্যবসার জন্য ভালো অবকাঠামো রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

দুর্নীতি উন্মোচন করতে কার্যকর সুশীল সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন পিটার হাস।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দুর্নীতি রোধে সহায়তা করবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও বেশি এফডিআই (প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ) অর্জন করবে।’

বাংলাদেশে দুর্নীতি কমাতে সরকারের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন অনলাইন করার পরামর্শও দিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে দুর্নীতি দমনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও উন্নত করতে হবে। ডিজিটালাইজেশন বাড়ানো ও নগদ-ভিত্তিক লেনদেনের পরিবর্তে অনলাইন লেনদেন দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ইউএসএইড বাংলাদেশের যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের সঙ্গে মিলে অনলাইনে নতুন কোম্পানি নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷ ফলে নতুন কোম্পানি নিবন্ধন আরও স্বচ্ছ, দ্রুত ও সাশ্রয়ী হবে।’

প্রসঙ্গত, বেসরকারি খাত এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) গত দুবছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজের (সিআইপিই) সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশ: দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেসরকারী খাতকে একত্রিত করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনের দাবিকে সমর্থন করা’ শিরোনামে একটি প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে।

এ গবেষণা প্রকল্পের অধীনে সিজিএস এরই মধ্যে সারাদেশে দুটি জরিপ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের ওপর একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন, আটটি আঞ্চলিক আলোচনা সভা, একটি সিএএসি সম্মেলন এবং দুটি নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট সম্পন্ন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিজিএস এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে গবেষণা তথ্য তুলে ধরেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালেহ জহুর।

গবেষণা ফলাফল প্রতিবেদনে জানানো হয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাত দেশের জিডিপির ৩১ শতাংশ অবদান রাখে। এতে প্রায় ২.৫ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু দুর্নীতির কারণে এই খাত সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

গবেষণার তথ্য বলছে, এসএমই উদ্যোক্তাদের ১০ জনের মধ্যে ৯ জন মনে করেন এই সেক্টরে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার রয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৬২.৪ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন সিস্টেমের মধ্যে দুর্নীতি আছে। ৭১.৩ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন দুর্নীতির মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। ৬১ শতাংশ ব্যবসায়ী দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের নিয়মের বাইরে ব্যবসা চালিয়ে নিতে চায়।

গবেষণায় বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া উদ্যোক্তারা ঘুষ দেওয়া ও সুবিধা লাভের জন্য রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগানোর কথা বেশি উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ৭৭.৯ শতাংশ ব্যবসায়ীকে ঘুষ দিতে হয়। ৬০.১ শতাংশ রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগায়। চাঁদাবাজির শিকার হন ৪৬.৩ শতাংশ ব্যবসায়ী। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ৪৩.৯ শতাংশ ব্যবসায়ী স্বজনপ্রীতি ও ৪৩.১ শতাংশ অনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার আশ্রয় নেন। এ ছাড়া আঞ্চলিক আলোচনা সভায় নমুনা উত্তরদাতাদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তা দুর্নীতির সম্মুখীন হয়েছেন।

গবেষণা টিমের প্রধান ড. আলী রিয়াজ বলেন, ‘দুর্নীতি মোকাবিলায় বিভিন্ন খাত চিহ্নিত করে মোকাবিলা করতে হবে। এর জন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।’

অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, ‘দুর্নীতির কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। যিনি দুর্নীতি দমন করবেন, তিনি যখন নিজেই অভিযুক্ত হন তখন আর কথা বলতে পারেন না। ফলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার মানুষ কমে যায়। তা ছাড়া বিশেষ সুবিধার জন্য অনেক মানুষ দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন।’

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সিজিএসের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।

এছাড়াও সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এসএমই উদ্যোক্তা, কূটনীতিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা অংশ নেন।

সারাবাংলা/এসবি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন