বিজ্ঞাপন

অটিজম সচেতনতা দিবসে কিছু কথা

April 2, 2023 | 1:56 pm

মারুফা হোসেন

আজ ২ এপ্রিল রবিবার, ১৬তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে— ‘রূপান্তরের অভিযাত্রায় সবার জন্য নিউরোবান্ধব অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গঠন’।

বিজ্ঞাপন

দিবসটি উপলক্ষ্যে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, হবে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—১ এপ্রিল থেকে ২ রাত নীল বাতি প্রজ্বালন। অটিজম সচেতনতা দিবস ২০২৩ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ১ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে দুই রাত বাংলাদেশ সচিবালয়সহ সব সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় নীল বাতি জ্বলবে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস বা মিশনেও নীল বাতি জ্বলবে। দেশের প্রতিটি জেলায় আলোচনাসভাও অনুষ্ঠিত হবে।

মোট কথায় প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিনটিকে উদযাপন করা হচ্ছে। এই আনুষ্ঠানিকতা সমাজে অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

অটিজম হচ্ছে মস্তিষ্কের বিন্যাসগত বা পরিব্যাপক বিকাশগত সমস্যা। এর লক্ষণ শিশুর জন্মের তিন বছরের ভেতরে প্রকাশ পায়।

বিজ্ঞাপন

একটি শিশুর অটিজম শনাক্ত হওয়ার পর তার বাবা-মায়ের পক্ষে সহজে মেনে নেওয়া খুব কষ্টের বিষয়। আবার অনেকে মেনে নিলেও লোক লজ্জার ভয়ে সন্তানকে লুকিয়ে রাখেন ঘরের ভেতর। যা ওই শিশুটির বিকাশে আরও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে শিশুটি আরও বেশি পিছিয়ে পড়ে। আমাদের সমাজে এসব ক্ষেত্রে প্রথমেই মাকে দায়ী করা হয়। সমাজের কাছে তিনি এবং তার সন্তান অনেক সময় হয়ে ওঠেন উপহাসের পাত্র।

তবে মাকে ধৈর্য হারালে চলবে না। মাকে অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে এবং তাকে ধীরে ধীরে জানতে হবে অটিজম এবং করণীয় সম্পর্কে। শিশুর অটিজম শনাক্ত হওয়ার পর দেরি না করে তাকে একটি সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা খুব জরুরি। একটি বিশেষ স্কুল এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

অটিজম, কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও বাস্তবতা

বিজ্ঞাপন

স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর বিশেষত শিক্ষক, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্ট, মনোবিজ্ঞানী এবং সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে মা-বাবার মতামত সাপেক্ষে শিশুটির জন্য একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী শিশুটির জন্য কর্মপরিকল্পনা গঠন করা হয়। স্কুল এবং বাসায় একই নিয়ম অনুযায়ী কাজ করলে শিশুর আশানুরূপ উন্নতি হয়। এটুকুই নয়, মা-বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া খুব জরুরি। সারাদিন এলোমেলোভাবে বিশেষ শিশুটিকে সময় না দিয়ে যদি গুণগত মানসম্পন্ন সময় দেওয়া হয়, তাহলে শিশুটি উপকৃত হবে।

অটিজম নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে _

১. অনেকে মনে করেন সন্তানকে কম সময় দেওয়া বা কম কথা বলার কারণেই হয়তো তাদের সন্তান অটিস্টিক হয়েছে। অটিজম-এর পেছনে অভিভাবকের ভূমিকা দায়ী নয়।

২. মনে করা হয়, প্রতিটি বিশেষ শিশু বা ব্যক্তির সমস্যা একই রকম। বাস্তবতা হলো, তাদের একজনের সঙ্গে অন্যজনের সমস্যা সাধারণত মেলে না।

বিজ্ঞাপন

৩. অনেকে মনে করেন, অটিস্টিক প্রতিটি শিশুই সুপ্ত প্রতিভার অধিকারী হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশেষ কোনো কাজে দক্ষতা দেখাতে পারে- কিন্তু এটা ব্যতিক্রম ঘটনা। দেখা যায়, অনেকের সাধারণ দৈনন্দিন কাজ করতেও অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়।

৪. অটিজম একটি সাময়িক সমস্যা, চিকিৎসা করলে বা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভালো হয়ে যাবে- এটা ভ্রান্ত ধারণা। অটিজম কোন সাময়িক সমস্যা নয়।

এসব বিষয় ছাড়া আরও অনেক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যা মোটেও গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ না। মনে রাখা প্রয়োজন, কোনো রকম যাদুকরী চিকিৎসায় অটিজম সারে না।

আমাদের মনে রাখতে হবে, এই শিশু আমাদের যে কারোই হতে পারে। তারা সমাজেরই একজন। আমাদের সবার সামান্য সহযোগিতা, সহানুভূতি, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি একজন অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুর সার্বিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সব শিশুদের উপেক্ষা না করে শিশুর সামান্য উন্নতিতে প্রশংসা করা উচিৎ। একটি ইতিবাচক কথা একজন মাকে করে দিতে পারে অনেক বেশি আশাবাদী।

লেখক: পরিচালক তরী ফাউন্ডেশন ও স্কুল ফর গিফটেড চিলড্রেন (এসজিসি)

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন