বিজ্ঞাপন

আবাসিকে গ্যাস সংকট, সহজে মিলছে না সমাধান

April 6, 2023 | 9:31 am

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীতে বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। একেতো রমজান মাস তার ওপর গ্রীষ্মকাল। যার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।

বিজ্ঞাপন

দিন শুরুর আগেই কোনো কোনো এলাকার বাসা বাড়িতে উধাও হয়ে যায় চুলার গ্যাস। মধ্যরাতে কিছু কিছু বাসায় যখন একটু একটু করে গ্যাস আসে, তখন বাসিন্দাদের ঘুমাতে যাওয়ার সময়।

কোনো কোনো এলাকায় দিনের বেলা থাকলেও পানি ফুটাতেই ঘণ্টাখানেক সময় লেগে যায়। সন্ধ্যায়ও তেমন একটা থাকে না। রাত ১১টার পরে আসে গ্যাস। গ্যাসের এই সংকট পুরো রাজধানী জুড়েই। কোথাও বেশি, কোথাও কম।

রাজধানীর মান্ডা, মুগদা, রামপুরা, বনশ্রী, মিরপুর, শুক্রাবাদ এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অন্য সময়ে গ্যাস সংকট থাকলেও রমজানে চরম আকার ধারণ করেছে। কখন আসে আবার কখন যায় বলা কঠিন।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, রাজধানীর মানিকনগর, গোপীবাগ, হাটখোলা, কমলাপুর অংশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নয় ঘণ্টাই গ্যাস থাকে না বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। গ্যাসের এই সংকট পুরো রাজধানী জুড়েই। কোথাও বেশি, কোথাও কম।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বলছে, শিল্প ও বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে গিয়ে আবাসিকে গ্যাসে ঘাটতি বেড়েছে। এই ঘাটতি এখনি পূরণ করা সম্ভব নয়।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, দেশে এখন বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে ওঠানামা করে। তাপমাত্রা বাড়লে চাহিদা বাড়ে। বিদ্যুৎ বিভাগের ধারণা এপ্রিলের শেষে কিংবা মে মাসে এই চাহিদা ১৬ থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এই পরিমাণ চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটা বড় অংশই গ্যাসের ওপরে নির্ভর করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি এই গ্যাস সার, শিল্প-কারখানা এবং বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রায় দেড় হাজার টেক্সটাইল শিল্প কারখানা রয়েছে। যার পুরোটাই গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। আসছে ঈদ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শিল্প কারখানাগুলোর এখন পিক আওয়ার। আর তাই উৎপাদন ঠিক রাখতে শিল্পকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই দুই খাতে গ্যাস সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে দিতে গিয়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে আবাসিক খাতে। যা রাজধানীর কিছু এলাকাবাসীর জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে।

রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য তিতাসের পাইপলাইনের গ্যাসই ভরসা। কিন্তু সে ভরসা এখন প্রায় ২৮ লাখ গ্রাহকের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর মুগদা, মান্ডা, মানিকনগর, রূপনগর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, রায়ের বাগ, লালমাটিয়া, মৌচাক, শনির আখড়া, হাটখোলা এলাকায় গ্যাসের ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে।

মান্ডা এলাকার ছাতা মসজিদ গলির বাসিন্দা আলমগীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের এলাকার বেশ কিছু গলিতে সারাদিন গ্যাস থাকে না। গ্যাস সন্ধ্যার পর থেকে ধীরে ধীরে আসতে থাকে। তবে চাপ খুব কম। রাত ১২টার পর থেকে চাপ বাড়তে থাকে। রাত দুইটার দিকে পুরোপুরি গ্যাস পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, এখানকার বাড়িওয়ালাদের প্রায় সবারই তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার আছে। চাকরিজীবী ভাড়াটিয়াদের অনেকে সামর্থ্য অনুযায়ী সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। কিন্তু যাদের আয় খুব কম তারা এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করতে পারেন না। তাদের জন্য গ্যাস না থাকাটা ভয়াবহ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এখানে দিনে কারও বাড়িতে পাইপ লাইনের গ্যাসে চুলা জ্বলে না।

টেইলার গলির বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন, রোজায় ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কারণ গ্যাসের ওপরে নির্ভর করেই আমাদের খাওয়া চলে। গ্যাস না থাকায় খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

গোপীবাগ এলাকার জজ গলির বাসিন্দা মালা সাহা বলেন, দুপুর ১২টার দিকে গ্যাস চলে যায়, বিকেলে আসে কিছু সময়ের জন্য, আবার সন্ধ্যায় চলে যায়। এরপর রাত ১১টার দিকে আসে।

হাটখোলা এলাকার বাসিন্দা বজলুর রশিদ বলেন, ইফতারের সময় গ্যাস থাকে না। দুপুরেই রান্না সেরে রাখতে হয়। আগে মাঝে মাঝে গ্যাসের চাপ কম থাকত, এখন একেবারেই থাকে না। গ্যাস কখন আসে, কখন যায় তার কোনো ঠিক নেই।

পেট্রোবাংলা সূত্র অনুযায়ী, জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ এখন দুই হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মধ্য ওঠা-নামা করে। লক্ষ্য পূরণের জন্য আরও অন্তত ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি প্রয়োজন।

যদিও এ বিষয়ে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাসের কোনো কর্মকর্তাই এ নিয়ে তথ্য দিতে রাজি নন। তবে পেট্রোবাংলা বলছে, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ আগের চেয়ে বাড়লেও সব জায়গায় সমানভাবে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। যে কারণে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার সারাবাংলাকে বলেন, এখন রমজান মাস। আমরা সবার আগে বিদ্যুতে গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ রোজার সময় ইফতার ও সেহরিতে মানুষ যেন অন্ধকারে না থাকে, কষ্ট যেন না পায়। তার ওপর এখন গ্রীষ্ম মৌসুম, আবার আসছে ঈদ সব মিলিয়ে শিল্প কারখানাগুলোতে এখন উৎপাদনের সময়। এসময় বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। আবার বাসা বাড়িতে মানুষ যেন গ্যাসে কষ্ট না পান সে প্রচেষ্টাও আমাদের রয়েছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ  এক হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চেয়েছিল। আমরা এক হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট পিক টাইমে দিয়েছি। যখন বিদ্যুৎ বিভাগকে এক হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিচ্ছি, তখন স্বাভাবিক কারণে আবাসিকে গ্যাসে একটু চাপ কম  আসে।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও শিল্পে গ্যাস দিতে গিয়ে বাসা-বাড়িতে কোথাও কিছুটা কমতি দেখা দিতে পারে। আপাতত কিছু করার নেই।

রোজার শুরুতে গ্যাস সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছিল- এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, গ্যাস সরবরাহে দুই থেকে তিন দিন একটু সমস্যা হয়েছে । কারণ, এলএনজির জাহাজ ভিড়তে দেরি হয়েছে। একটা জাহাজ ভিড়তে একদিন দেরি হলে সরবরাহে তিন দিনের প্রভাব পড়ে যায়।

তিনি বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুম মোকাবিলায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)-এর সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা। এখন নিয়মিত এলএনজি আসছে। আশা করি, আগামী জুন মাস পর্যন্ত প্রতিদিন গ্রিডে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাবে।

সারাবাংলা/জেআর/এনইউ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন