বিজ্ঞাপন

প্রতিদিন আসছে সাড়ে ৭শ মেগাওয়াট আদানির বিদ্যুৎ

April 11, 2023 | 7:48 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই, যদিও আসে ঘণ্টা শেষ না হতেই আবার চলে যায়। তপ্ত গরমে পুরো গ্রীষ্ম মৌসুম জুড়েই অসহনীয় পরিস্থিতি। বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ রাখতে হতো ছোট খাটো শিল্প কারখানা, ব্যাহত হতো সেচ কাজ। গেল গ্রীষ্মেও এই চিত্র ছিল দেশের উত্তরের দুই বিভাগ রাজশাহী ও রংপুরের। কৃষি সমৃদ্ধ এই দুই বিভাগের ১৬ জেলায় এক সময় সবচেয়ে বড় সমস্যা বিদ্যুৎ সংকট থাকলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিতরণের সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে ভারতের আদানি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে আসা বিদ্যুৎ। যে কারণে কমেছে লোডশেডিং, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাচ্ছে সেচ কাজেও।

বিজ্ঞাপন

বিতরণ সংস্থাগুলো বলছে, এই পিক আওয়ারেও এখন আগের বছরগুলোর মত সংকটের মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে চাহিদা বাড়লে বোঝা যাবে সংকট ফিরে আসবে কি না?

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-পিজিসিবি সূত্রানুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগ রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের ১৬ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ৩০ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে ১৭টি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৯টি গ্যাস ও ৪টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। যদিও এর বেশিরভাগই বেসরকারি। এই ১৬ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড। নেসকো সূত্রে জানা গেছে, এই দুই বিভাগে চলতি মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ২ হাজার ৫শ মেগাওয়াট। এরমধ্যে রাজশাহীতে ১ হাজার ৬ মেগাওয়াট আর রংপুরে ৮শ ৫৯ মেগাওয়াটের মতো। এদিকে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশিরভাগ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু এতে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহে যে ঘাটতি দেখা দেওয়ার কথা, তা পূরণ হচ্ছে আমদানি করা বিদ্যুৎ দিয়ে।

সূত্রে জানা যায়, দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা এলাকায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দেশটির আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড লিমিটেডের (এপিজেএল) সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-বিপিডিবি।

বিজ্ঞাপন

২০১৭ সালে করা দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে দুই ইউনিটে মোট ১ হাজার ৬শ মেগাওয়াট থেকে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট নেট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা। তারই আওতায় গত ২০ মার্চ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট উৎপাদন শুরু করে। এরপর গত ২৬ মার্চ থেকে টেস্টিং ও কমিশনিং সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হয়। আর গত ২৭ মার্চ থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বিপিডিবি।

বাণিজ্যিক উৎপাদন চালু না হলেও পরীক্ষামূলক উৎপাদন দিয়ে বিপিডিবি আদানির কেন্দ্র থেকে এখন প্রতিদিন সাড়ে ৬শ থেকে সাড়ে ৭শ মেগাওয়াট পাচ্ছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে এটি আদানি পাওয়ার প্ল্যান্টের সর্বোচ্চ উৎপাদন। ভারত থেকে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ডেডিকেটেড সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে আদানি গ্রুপ।

এরপর রাজশাহীর সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর হয়ে এ লাইন পৌঁছেছে বগুড়ায়। সেখানে নির্মিত সাবস্টেশনের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রীডে। জানা গেছে বর্তমানে সাড়ে ৬শ থেকে সাড়ে ৭শ মেগাওয়াট যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে তার পুরোটাই উত্তরাঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় বেশকিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেও সরবরাহ করা হচ্ছে। যে কারণে এবার উত্তরাঞ্চলে ভোগান্তি কমেছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে নেসকোর রংপুর বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. জাকির হোসেন সারাবাংলাকে জানান, এখন পিকআওয়ার চলছে। এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংকট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে এমন ঘটনা ঘটেনি। বিশেষ করে রংপুরে গত কাল (১০ এপ্রিল) সাড়ে ৮শ মেগাওয়াট চাহিদা ছিল বিপরীতে সরবরাহ প্রায় কাছাকাছি ছিল। চাহিদা আরও বাড়তে পারে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে। যদি অতিরিক্ত চাহিদা দেখা দেয়, তাহলে বলা যাবে সংকট হবে কীনা বা কতটা হতে পারে।

এদিকে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা এ বছর ১৬০০ মেগাওয়াট। জানা গেছে এ বিভাগেও অসহনীয় অবস্থা ভোগ করতে হয়নি এবার।

এ প্রসঙ্গে নেসকোর রাজশাহী বিতরন অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ জানান, এখন পিকআওয়ার চললেও গেল বছরের মতো পরিস্থিতি এখনও হয়নি।

এদিকে আদানি থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, আদানি ভারতের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় তার প্রথম ইউনিট ৮০০ মেগাওয়াট চালু করেছে এবং এখন ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে।

বিজ্ঞাপন

ওই বিবৃতিতে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সিইও এসবি খেয়ালিয়া বলেন, ‘গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্টটি ভারত-বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের একটি কৌশলগত সম্পদ।’

বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘এটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ সহজ করবে এবং শিল্প ও ইকোসিস্টেমকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।’

এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেল এর মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্রিডে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।’

এখন চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের পাশাপাশি আমরা আমাদের নিজস্ব উৎপাদন থেকে বর্তমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করছি।’

উল্লেখ্য, গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্টে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির দুইটি ইউনিট রয়েছে, যা আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি সমৃদ্ধ। এতে কয়লা ও পানির নিগর্মন ও ব্যবহারের জন্য সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে এই পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে সাড়ে ৬শ থেকে সাড়ে ৭শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে বাংলাদেশ। জুনে ৮শ মেগাওয়াট পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।

সারাবাংলা/জেআর/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন