বিজ্ঞাপন

আগামীর পৃথিবীর বিশাল গবেষণাগার বাংলাদেশ

May 7, 2018 | 3:41 pm

ভারতীয় উপমহাদেশে দেশ কয়টি আছে বললে উত্তর দিতে দেরি হবে না কারোরই। কিন্তু যদি বলা হয় এই উপমহাদেশে জাতি কয়টি, কপালে ভাজ পরবে, গুনে হয়তো শেষ করা যাবেওনা দু’হাতের দশটি আঙ্গুলে। পাকিস্তানের পাঞ্জাবী-সিন্ধী কিংবা দক্ষিণ ভারতের তেলেগু-তামিল, ভারতের অন্য প্রান্তের উড়িয়া-গুজরাটি কিংবা ঘরের কাছের গুর্খা অথবা দুরের রাজপুত – এরা প্রত্যেকেই স্বকীয় স্বতন্ত্র জাতিস্বত্তা। এদের প্রত্যেকের আছে নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, সংস্কৃতি আর সাহিত্য। আর যদি প্রশ্ন করা হয়, এত বেশি বৈচিত্র্যেভরা এই উপমহাদেশে নিজস্ব রাষ্ট্র আছে কার, উত্তরটা খুবই সংক্ষিপ্ত। তা হলো বাঙ্গালীর দেশ বাংলাদেশ, বাঙ্গালীর স্বাধীন রাষ্ট্র। নিজস্ব স্বকীয়তায় নিজস্ব ভূখ-ের ভৌগলিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার অধিকারী হওয়ার যোগ্যতা এই উপমহাদেশের অনেকগুলো জাতিরই আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাঙ্গালী ছাড়া আর কারোরই স্বাধীন দেশ নেই।

বিজ্ঞাপন

সত্যি বলতে কি একই ভাষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যে পুষ্ট এমন দেশের উদাহরণ শুধু এই উপমহাদেশে কেন গোটা পৃথিবীতেই বিরল। বাংলাদেশ তাই বিশ্বের একটি অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্টপূর্ণ রাষ্ট্র। পাশাপাশি বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে “আগামীর পৃথিবীর” জন্য একটি বিশাল গবেষণাগারও বটে। সেদিন একজন বিশেষজ্ঞের মুখে শুনছিলাম, পৃথিবীর জনসংখ্যার ঘনত্ব যতখানি হলে তা পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হবে, আজকের বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব তার চেয়েও দশগুণ বেশি। অথচ রাষ্ট্রটিতো ধ্বংস হয়ইনি, বরং বছরের পর বছর ধরে সাত শতাংশের বেশি হারে এর প্রবৃদ্ধি বিশ্ববাসির বিস্ময়ের কারণ। অতএব বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের মানুষের প্রতিটি দিনের প্রতিটি ঘটনা, তাদের প্রতিটি সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা, পৃথিবীবাসীর কাছে জলজ্যান্ত গবেষণাগার থেকে পাওয়া টাটকা তথ্য-উপাত্তের মতই গুরুত্বপূর্ণ।

এমন বাংলাদেশের সাফল্যে আনন্দিত আর দুঃখে দুঃখিত হওয়ার লোকতো তাই থাকবেনই। কিন্তু এর উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখানোর লোকের সংখ্যাও নেয়াহেত কম হওয়ার কথা নয়। আর এর স্বাক্ষীতো আমাদের অতীত আর বর্তমান। এদেশে আসেনি কে? কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান থেকে ইংরেজ বণিক, আরবের শাসক আর গ্রিসের নরপতি- এর সবই দেখেছে এই ভূখ-ের অধিবাসীরা। সেই কবে হাজার বছর আগে বাঙ্গালী পাল রাজাদের শাসন আর তারপর ১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুজিবনগরে আওয়ামী লীগ সরকার। এর মাঝে এই ভূখ- যারাই শাসন করেছেন তারা প্রত্যেকে ছিলেন বিজাতীয়- বিদেশি। যাকে আমরা বাংলার শেষ স্বাধীন শাসকের স্বীকৃতি দেই, তিনিও বাঙ্গালী ছিলেন কি? বাংলা না ছিল তার মাতৃভাষা, না তিনি চিনতেন বাংলা বর্ণমালা। আর এই যে এত এত বিদেশি শাসক, তারা শাসনের পরোয়া করেছেন থোরাই! বাংলা আর বাঙ্গালীকে শাসনের নামে শোষণ করাই ছিল তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। অথচ এত শোষণের পরও এই ভূখ-টি বরাবরই পরবর্তী বিদেশি শাসকের জন্য আকর্ষণীয়ই রয়ে গেছে। শাসনে- শোষণে শেষ হয়নি বাংলা আর বাঙ্গালীর প্রানশক্তি আর উৎপাদনশীলতা।

আর তাই যখনই বাংলার শাসনভার বাঙ্গালীর হাতে সত্যিকারভাবে বর্তেছে, হাটেনি বরং দৌড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি আর উন্নয়নের সূচক। ১৯৭১ এ স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মাথায় স্বল্পোন্নত আর এবারে গনতান্ত্রিক শাসনের নয় বছরে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন এই কথারই স্বাক্ষ্য দেয়।
বাংলাদেশের এই যে প্রচ-তা তার মূলে হলো আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গভীরতা – আমাদের সম্প্রীতি আর সার্বজননিনতা। আমাদের শক্তি এই যে, আমাদের সংস্কৃতি বাঙ্গালীর হাজার বছরের ইতিহাসে সমৃদ্ধ আর নানা ধর্মের বাঙ্গালীর আচারে পুষ্ট। ঈদ তাই শুধু বাঙ্গালী মুসলমানের না, তা বাঙ্গালী হিন্দুরও উদযাপনের দিন। একই কারণে দুর্গা পূজার ম-পে থাকে উপচে পড়া বাঙ্গালী মুসলমানের ভীড়ও। আর চৈত্র সংক্রান্তি, নববর্ষ কিংবা নবান্ন – এগুলোতো কোন বিশেষ ধর্মেরই নয়, এগুলো শুধুই বাঙ্গালীর।

বিজ্ঞাপন

বাঙ্গালীর এই জয়যাত্রাকে থামিয়ে দেয়া আর পিছনে টেনে নেয়ায় অশুভ শক্তির যত-শত অলুক্ষুনে চেষ্টা তার সব কিছুর লক্ষ্য তাই বাঙ্গালীর সংস্কৃতি আর এই সংস্কৃতির ধারক-বাহক মুক্তমনের বাঙ্গালীরা। এই অশুভ শক্তি বর্ণচোরা। কখনো এরা অদৃশ্যমান আবার কখনো কখনো আবির্ভূত সমূর্তিতে। কখনো তারা তেড়ে আসে তো কখনো তারা আমাদের ভেতর থেকে কাটে। এরা কখনো বড় দুর্ঘটনা ঘটায় তো কখনো খুবই সামান্য কিছুর জন্ম দেয়। ওরা লাঠালাঠিই করুক আর পা-ই চাটুক – লক্ষ্য ওদের একটাই; আর তা হলো বাংলা আর বাঙ্গালীকে “দাবায়ে” রাখা। একাত্তরের গণহত্যা আর বুদ্ধিজীবি নিধন কিংবা পচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকা- আর ৩রা নভেম্বর ঢাকা জেলের লংকাকা- – সব এরাই ঘটিয়েছে। এরাই বোমা ছুড়েছে উদিচির আসরে আর রমনার বটমূলে। আবার যখন বাঙ্গালী ললনাদের বাহারী আবায়ায় সাজতে দেখি কিংবা ছুটতে দেখি পাকিস্তানী জিলওয়ার পেছনে, তখনো এই অশুভ শক্তির পদচিহ্ন খুঁজে পাই। ওদের ছায়া দেখি যখন আমার প্রিয় শিক্ষাঙ্গণ থেকে হারিয়ে যায় বৈশাখবরণ আর বাধা আসে জয় বাংলা উচ্চারণে। আমরা কখনো বুঝে আবার বেশির ভাগই না বুঝে বনে যাই ওদের দাবার ঘুটি।

আজ যখন বাঙ্গালী আর বাংলাদেশের নাম বিশ্ব মানবের মুখে মুুখে, বাংলাদেশ যখন বিশ্বের বিস্ময়- তখন ওদের তৎপরতা আরো বেশি চোখে পড়ার মত। আর তাই ওদের উপর পাল্টা আঘাতটাও হওয়া চাই যুৎসই, সেরকম। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ‘বাঙ্গালীর সম্প্রীতি’ ‘বাঙ্গালীর শক্তির’ উৎস। আজকের যে বাংলাদেশ দ্রুতলয়ে ২০৪১-এর স্বপ্নপূরণে ধাবমান, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক শক্তির নেতৃত্বে, সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে তাকে সেই অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছে দিতে হলে, আমাদের প্রত্যেককে অবশ্যই ‘সম্প্রীতির’ দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে, ‘সম্প্রীতির’ চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ গড়ায় এগিয়ে আসতে হবে। এই হোক আমাদের আজকের শপথ!

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল), চিকিৎসক, লেখক

বিজ্ঞাপন

[এই বিভাগের লেখার সকল মতই লেখকের নিজস্ব]

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন