বিজ্ঞাপন

নীল শাড়ি

April 20, 2023 | 4:21 pm

মুম রহমান

১.
লিলিদের টিনের চালে ঠাণ্ডা ভেজা শরীর নিয়ে শীতের সন্ধ্যা চুপ করে বসে। তখন শীত নাই কিন্তু লিলির বুকে, কেননা সে তৈরি হয়, এই শীতের সন্ধ্যা থেকেই। তৈরি হয় আসন্ন উত্তাপের জন্যে। অতএব যতোটা সুগন্ধি ছড়ালে শরীরে ঘ্রাণের আবেশ ছড়ায় অথচ শরীর থেকে তা অচেনা মনে হয় না, ততোটা সূক্ষ্ণ মাপে সে সুগন্ধি মাখায় বগলে-বুকে। একই কৌশলে দেওয়া না দেওয়ার মাঝামাঝি সে কাজল দেয়। আর যদিও ফর্সা সে তবু একটু পাউডারের ছোঁয়া না দিলে শরীরটা কেমন প্রসাধনহীন হয়ে থাকে। আর মেয়েদের লিপিস্টিক তো পুরুষকে কাছে টানার চুম্বক।

বিজ্ঞাপন

ক্ষণস্থায়ী সন্ধ্যা উড়াল দেয়। ক্রমে রাত্রি চেপে বসে। মফস্বল শহরে শীতের রাত, কাজেই ন’টাকে গভীর রাত মনে হয়। দূরে ঝিঁ ঝিঁ, তক্ষক কিংবা রাতপোকাদের কোরাস শোনা যায়।

তখন শীত বাড়ে। তবু মজিদ আসে না। লিলি ধীরে ধীরে চিন্তিত হয়ে ওঠে। খুট করে টিনের চালে কী যেন শব্দ হয়। হয়তো ইঁদুর কিংবা বাদুর। তবু অজানা ভয় করে।

একা নারী, এখনও যুবতী, অচেনা ভয়ের ঝোপ-ঝাড় বেড়ে ওঠে নিজেরই চারপাশে। কখন কী ঘটে তার নিশ্চয়তা নেই এই প্রহরে। একশ পাওয়ারের বাল্বটাও কুপির মতো টিমটিমে আলো দেয়। মফস্বলের বিদ্যুৎ বড় কৃপণ অথবা অন্ধকার এখানে সর্বগ্রাসী।

বিজ্ঞাপন

বুঝি আজ মজিদ আসবে না।

একা একা থাকা লিলির জন্যে নতুন কিছু নয়। তবু ভয় করে আজ। এই মুহূর্তে মজিদ এলে ছ্যাচড়া ভয়গুলো কেমন লেজ তুলে পালাতো এ কথা ভেবে সে একলাই হাসে রঙ-ঘষা ঠোঁট বেঁকিয়ে। সীমা পার হয় অপেক্ষারও। বাড়ির একমাত্র ঘড়িতে সাড়ে দশটাও বাজে একসময়। একা একা দুটো ভাত-মাছ চিবিয়ে নেয় সে কোনোমতে।

মজিদ আসে না।

বিজ্ঞাপন

শীত আরও গাঢ় হয়ে আসে।

বিকেল থেকেই কুয়াশা আর শিশিরের সঙ্গমে বাতাস আরও ভারী হয়। লিলির এই শীতখানি ভাল লাগে, কারণ তার বুকের ভেতরে কে যেন ফিসফিস করে জানান দেয়, মজিদ আসবেই আজ। সে বিছানার চাদর বদলায়, বালিশে ফুল-ছাপা কাভার লাগায়। মজিদের পছন্দের বাইম মাছ বের করে ফ্রিজ থেকে। এখন সে রান্নার আয়োজনে বসে। ক্রমশ নিঃসঙ্গ বাড়িটার চারপাশে ঝাল-মসলার ঝাঁজ ছড়াতে থাকে। এবং অতঃপর মজিদের প্রিয় নীল শাড়িটাই পরে। বুকটা ঢেকে দেয় নীলের উপর হলুদ প্রিন্টের ফুলেল ব্লাউজ দিয়ে। এমনকি প্যাকেট ছিঁড়ে নতুন অন্তর্বাসও পরে। আজ সব আয়োজনই তার মজিদকে ঘিরে। তাই বুড়ি কাজের বেটিকে ছুটি দিয়েছে দুপুর গড়াতেই।

একটা সুবিধা হলো, বুড়ির ভেতরে কোন সন্দেহ নাই। সন্দেহ করতে বুদ্ধি লাগে। বুড়ির আছে প্রবল ক্ষিদা, আর সেই সাথে অন্ধ মেয়েটার জন্যে তীব্র ভালবাসা; সেই ভালবাসাও ক্ষুধাকেন্দ্রিক। তাই আকস্মিক ছুটির সাথে একগাদা বাড়তি খাবার পেয়ে জীর্ণ হাড়গুলোকে নাচিয়ে সে দ্রুত বাড়ি চলে যায়।

কিন্তু রাত এগারটায় বিছানায় গিয়ে ছটফট করে লিলি। মজিদ আসে না।

বিজ্ঞাপন

তার শরীর ও মন উভয়েরই যেন আজ প্রতারিত। এমন রাত কি নিয়মিত আসে! কেন মজিদ এল না। জ্বালা করে তার চোখ।

সে যে একলা ঘরে এ কথা কি কারও মনে আসে না।

এবার গেটের কাছে মৃদু শব্দ হয়। লিলির শরীর কাঁপে, ভয়ে নয়, শীতেও নয়, রাগে। কেন মজিদ আসে না! অবশ্য মজিদ আসবে এমন কোন কথা তো ছিল না। মজিদকে খবরও দেওয়া হয় নাই। তবু লিলির শরীর মন সত্যিই যদি মজিদের অপেক্ষায় থাকে তাতে কি তাকে খুব দোষ দেওয়া যায়!

শব্দটা আরও পরিষ্কার হয় এবার। কিন্তু মজিদ তো এভাবে কড়া নাড়ে না। এবার লিলি ভয় পায়। কে এল মাঝরাতে? কড়া নাড়া বাড়ে। হু, এবার কিছুটা পরিচিত মনে হয় শব্দটা। আধো ভয় আর দ্বিধা নিয়ে লিলি প্রশ্ন করে, কে?

– খুলো।

হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছে সে, এ তো শহীদের গলা। তবে শহীদের তো আজ আসার কথা নয়! কী সর্বনাশ, মজিদ যদি আজ আসত আর শহীদের মুখোমুখি হতো, একেই বলে শাপে বর।

– কী অইলো, দরজা খুলো।

গেট খুলেই সে শহীদের অসহিষ্ণু মুখ দেখতে পায়। আজ কি পূর্ণিমা! আকাশ জুড়ে পোয়াতি মেঘ, আর তারই ফাঁক দিয়ে ভরাট চাঁদ উঁকি মারে থেকে থেকেই! চাঁদের গোলাগাল মুখ দেখে তো পূর্ণিমাই মালুম হয়! লিলি যখন এক ঝলকে আকাশ, চাঁদ আর মেঘের জগতটায় ঘুরে আসে, তখন শহীদ অপলক তাকিয়ে থাকে তার দিকে! শহীদের এই এক খাই-খাই চোখ, তাকিয়েই সবটা গিলে ফেলবে মনে হয়! হয়তো গিলেই ফেলবে আজ।

– অমনে চায়া থাকো কেন?

– ক্যা! দেখলে কমবো না-কি!

– আমার ডর করে, কেমুন অজগর সাপের লাহান তোমার চাউনি।

– ও মা, তুমি আবার অজগর সাপের চোখ দেখছো কবে!

– ধুরু যা, কথার কথা! আসো, ভেতরে আসো।

শহীদের আজ আসার কথা নয়। তবু সন্ধ্যা থেকেই প্রাণটা যাই-যাই করছিল। তার এই উতলা ভাব দেখে হেলপার জহির পর্যন্ত দাঁত-কেলিয়ে হাসে আর বলে, ওস্তাদের খালি ঘরের দিক মন গো, ভাবী খালি ডাকে। শহীদ যতোই বলে, খাবি থাপ্পড়, জহির ততোই খ্যাঁক-খ্যাঁক করে হাসে। কথা সত্য, এমন রহস্য-মোড়া শীতের রাতে বন্ধু-বান্ধবরা ফূর্তি করে, মাল খায়, টাল হয়, বাজারের মেয়ে-মানুষ নিয়ে হুটোপুটি করে। শহীদের এ সবে মন বসে না। তার সবসময়ই মনে হয়, লিলি ওই সব মেয়ে-মানুষ আর দেশি মদের চেয়ে বেশি নেশা ধরিয়ে দিতে জানে। সত্যিই, নিজের ঘরে এমন কড়া নেশা থাকলে কেইবা বাইরে পড়ে থাকতে চায়!

ঘরে ঢুকেই শহীদ প্রশ্ন করে, বুড়ি কই?

– হুসনির মারে তো সইন্ধ্যা বেলাই ছুডি দিছি।

– কও কি, তুমি একলা ঘরে!

লিলি নিরবে মাথা নাড়ে, ভাবে, ভাগ্যিস একা! কী বিপদই না হতো যদি মজিদ আসত আজ!

– তুমি ফিরা আসলা যে!

– ভালা লাগতেছিল না, চইলা আসলাম।

– তুমি না আস্তা-পাগল! এই রহম করলে কাজ-কাম করতে পারবা!

– আরে, কাম করতেই তো আসছি!

– ধুরু যা, কী যে করো, ছাড়ো, হাতমুখ ধোও, খাইতে দেই।

শহীদ খেয়েই এসেছিল। তবু দ্বিতীয়বার ঢেঁকুর তুলে খেলো। লিলির সাজগোজ আর খাবারের আয়োজন দেখে তার মনে ফূর্তি লাগে। তবে কি লিলিও তৈরি ছিল!

– এতো পদ রানছো যে?

– কেন জানি, মনে অইতে ছিল, তুমি চইলা আসবা।

– এরেই কয় মনের টান, বুঝলা! তুমারে কিন্তু সেই রকম লাগতাছে! এই শাড়িটা তো আগে দেখি নাই?

– পান খাইবা?

– হ।

২.
তীব্র নীল শাড়িটা মজিদ তাকে দিয়েছে। দীর্ঘদিন লুকিয়ে রেখেছিল লিলি। বিয়ের পর এক ফাঁকে বাপের বাড়ির আলমারী থেকে বের করে নিয়ে আসে।

তখন কতো বয়স তার? সবে পনেরো কি ষোলো। স্কুলের পাট শেষ হয়েছে, ঘরে বসা, বসে বসে নিজের শরীর আর মনটাকে মেলানোর অঙ্ক করে লিলি। সময় কাটে না কিছুতেই।

এমনি এক দিনে হঠাৎ একদিন এলপাথাড়ি বৃষ্টি এল। তখন সে বুলাদের বাড়ি থেকে ফিরছিল। পথ-ঘাট ভাসিয়ে বৃষ্টি এসেছে। মজিদের ঘরের পিছনে গিয়ে ঠাঁই নেয় সে। চুল, জামা, জুতা সব ভিজে একাকার। চুলের গোড়ায়, নাভিতে, স্তনের বৃন্তে বৃষ্টি ঢুকে গেছে অগোচরেই। ভেতরটা কেঁপে কেঁপে ওঠে। তখুনি মজিদ তাকে দেখে। কে জানে কি হয়! ছেলেবেলা থেকেই ওরা একসাথে মানুষ, হয়তো তা জানা ছিল বৃষ্টির মনে মনে।

– তাই তো কই ঘরের পিছে কেডা? ভেতরে আহোস নাই ক্যান! আয় হায় এক্কেবারে ভিজা গেছোস দেহি!

মজিদ রুমাল বের করে দেয়।

– ইশ, শীতের কাঁপতাছোস! আয়, শিগগিরি ভেতরে আয়।

বলে মজিদ তাকে টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে আসে। তারপর সিনেমার মতো সব কিছু ঘটে যায়। আবেশে লিলির চোখ ভিজে আসে। আহা, শরীরে এতো আনন্দ ছিল! অচেনা শরীরটার তালা-চাবির খোঁজ পেয়ে যায় লিলি।

বৃষ্টি থামলে ঘরে ফেরে লিলি। আর এক সন্ধ্যার বৃষ্টি তাকে শিখিয়ে দেয় অনেক কিছুই।

৩.
সে ঘটনার পরেও মজিদ আসে তার কাছে। তবু কি আশ্চর্য, কেউ কখনও তারা ভালবাসার কথা বলেনি। এমনকি লিলির মনে এ নিয়ে কোন পাপবোধও নেই। আর মজিদ তো পাপ পূণ্য নিয়ে কখনোই ভাবে না। তারপর একদিন মজিদ ঢাকা চলে যায়, আর ঢাকা যাওয়ার আগের দিন আদরের পরে মজিদ তাকে এই নীল শাড়িটা দেয়। না, কোন প্রেম নয়, ভালবাসা নয়, তবু শরীরেরও কিছু টান থাকে, স্মৃতি থাকে। সেই টানেই সে রাতে গোপনে শাড়িটা ছুঁয়ে মজিদের জন্যে প্রথম কেঁদেছিল লিলি।

শহীদের সাথে হঠাৎই বিয়েটা হয়ে যায় লিলির। বিয়েতে বাধা দেওয়ার কোন কারণ তার ছিল না। গরীব ঘরের মেয়ে, পাত্র চালের ব্যাপারি, হাজার হাজার টাকা কামায়, মানা করার কারণই নেই। তাছাড়া মজিদের সাথে যাই ঘটুক, কখনও বিয়ের কথা তারা কেউই ভাবেনি। শহীদের সাথে বিয়ে নিয়ে লিলি বেশ আনন্দেই আছে। শহীদের বয়সটা একটু বেশি হলেও, হাবেভাবে চ্যাংড়া, রঙ্গিলা। মানুষটা একটু বোকা কিসিমেরও আছে, লিলি চাইলে তাকে আঙুলে নাচাতে পারে। সুন্দরী লিলিকে পেয়ে সে এমনিতেই দিশেহারা। ভালই লাগে বিবাহিত জীবনটা।

কাজের সুবাদেই মাঝে মাঝে আস্তানা পাল্টাতে হয় শহীদের। এক মফস্বল থেকে আরেক মফস্বলে ঘুরে বেড়ায় বউকে নিয়ে। বিয়ে হয়ে গেছে দুবছরেরও বেশি তবু তাদের জীবন থেকে রঙ কমে না। শুধু মাঝে মাঝে গভীর রাতে মজিদের স্পর্শের স্মৃতি জেগে ওঠে। তখন শহীদকে আরও জোড়ে আঁকড়ে ধরে লিলি।

তাদের বিয়ের সময় মজিদ ছিল ঢাকায়। লিলি কোন ঠিকানা জানতো না, গ্রামের কেউই জানতো না। মজিদ তখন জীবিকার ধান্দায় ঘুরে বেড়ায় আর দুদিন পর পরই এক মেস ছেড়ে আরেক মেসে গিয়ে ওঠে। অবশ্য প্রশ্ন থেকেই যাই, যদি ঠিকানা জানা থাকত লিলি কি ছুটে যেতে মজিদের কাছে? মনে হয় না।

কিন্তু মজিদ হয়তো ছুটে আসত। নানা চতুরতা করে সে ঠিকই একদিন লিলিদের ঠিকানা যোগাড় করে ফেলে এবং এক মধ্য দুপুরে সোজা হাজির হয় লিলির দরজায়, ভাগ্যিস, শহীদ তখন শহরের বাইরে আর বুড়িটা বেঘোর ঘুমে।

– তুমি!

– কতোদিন পলায়া থাকবা?

– পলাইছিলা তো তুমি?

– লিলি, আমি তুমারে ভালবাসি।

– কুনদিন তো কও নাই।

– এতো কিছুর পরও এইটা মুখে কইতে অইবো?

– এহন তো আমি অন্যের স্ত্রী।

– আমার কাছে তো তুমি আগের লিলিই আছো।

এরপর আর কথা এগোয় না বেশিদূর। লিলিকে একটানে বুকে টেনে নেয় মজিদ। আবার সেই শরীরের স্মৃতি। এবার বোঝা যায় শরীরেরও ভালবাসা থাকে। নইলে লিলি তো বিবাহিত, তবু অবলীলায় নিজেকে সঁপে দেয়। অবশ্য নতুন করে মজিদকে দেবারই বা কি আছে। কৈশোরের স্বাদগন্ধের টানে আবার তারা মিলে যায়।

আর এখন মজিদ তাকে ভালবাসার কথা বলে। বিয়ে করেনি মজিদ, আজও সে একা। শুধু যে শৃঙ্গারের আনন্দ বাড়াতে বলা তা নয়, বরং মজিদের ভালবাসার কথায় আজ নিখাদ আবেগ ঝরে পড়ে। লিলির মায়া লাগে। আহা, বেচারা মজিদের মন বা শরীর কোন কিছুর আব্দার শোনারও কেউ নাই। নিজেকে যতোটা গুছিয়ে পারা যায় উপস্থাপন করে সে। লিলি মনে মনে বলে, যতোটা পার তুমি নিয়ে নাও আমার এই তস্তুরি থেকে। সব কাজ শেষে, শিশুর মতো লিলির বুকে মুখ গুঁজে পড়ে থাকে সে। তারপর চলে যায় অসহায়ের মতো। মজিদের কেবলই মনে হয়, তারই সম্পদ আজ অন্যের ঘর থেকে চুরি করে নিতে হয় তাকেই।

৪.
– হুসুনির মারে বিদায় করলা ক্যা?

পান মুখে দিয়ে আয়েশ করে খাটে বসে প্রশ্ন করে শহীদ। এবারের চালের চালানটায় ভাল লাভ হবে, মনে মনে সে বেশ খুশি। বাজারে বাজারে গিয়ে চালে দেখে কেনা, সেই চাল আবার আড়তে আড়তে নিয়ে যাওয়া, সারাদিন ভালই পরিশ্রম যায় তার। তবু এর মধ্যে বউটার জন্যে বড় চিন্তা হয় তার। বেচারি একা একা থাকে, এ নিয়ে তারমধ্যে একটা গ্লানি কাজ করে। তাই যখনই এক রাত দুরাতের জন্যে বাইরে যায় তখন হুসুনির মাকে রেখে যায়। বুড়ির বয়স হয়েছে, চোখে কম দেখে, কানে কম শোনে, বুদ্ধি কম, পেটে প্রবল ক্ষুধা, তবু মানুষ বলে কথা।

লিলি সতর্ক হয়। কিছু টের পায়নি তো শহীদ!

– কইলাম না, মনে অইলো তুমি আসবা, তুমার জইন্যে সাইজা বাইড়া বইসা রইছি এইটা ভাল লাগতাছে না।

– না সেইটা বলি নাই।

– তাছাড়া হুসুনির শরীরটাও নাকি ভালা না। বেচারি অন্ধ মাইয়া, তাই দিলাম পাঠায়া।

– ভালা করছো, তবে সাবধানের মার নাই।

– তাতো বটেই, তুমি আওয়াজ না দিলে কি আমি দরজা খুলতাম!?

– সত্যই তুমারে আজ এক্সট্রা ফাইন লাগতাছে।

– যাও, মিছা কথা ভাল লাগে না।

– না, না, একদম হাছা কথা, এই তুমার বুক ছুঁইয়া কইতাছি।

লিলি সব জানে। এখন কী কী ঘটবে লিলি সেই সবই জানে। তবু তার ভাল লাগে। কারও জন্যে তো কিছু থেমে থাকে না। মজিদ যা পারে শহীদের পক্ষে তো তা অসম্ভব কিছু না। দুজন দুরকম, তবু গন্তব্য তো এক।

তার বিছানার চাদর কুঁচকে যায়। মজিদের দেওয়া নীল শাড়িটা পড়ে থাকে পায়ের কাছে। খাটের নিচে পড়ে থাকে নতুন ব্রা আর ফুল-তোলা ব্লাউজ। পাউডারের গন্ধ, সেন্টের গন্ধ, লিপিস্টিকের স্বাদ, কাজল সব একাকার হয়ে যায়। শহীদ পাগলের মতো শরীর হাতড়ায়। এমন কিছু খোঁজে যার জন্যে ছুঁটে এসেছে মধ্যরাতে।

লিলিও খোঁজে। শরীর অথবা মন। আনন্দ অথবা ভালবাসা। পায় কি না কে জানে, তবু নেশা জাগে। শরীরে ঝিম, জ্বরের মতো তাপ আর ঘোর, জিভে এক অদ্ভুত স্বাদ। চলে অন্বেষণ।

হঠাৎ লিলির মনে হয় এখন যদি মজিদ আসে?

আসলে আসুক, সে তাকে চিনবে না।

এইসব ভাবনা রেখে আপাতত সে শহীদকে আরও জোরে আঁকড়ে ধরে। শরীরের সঙ্গে শরীরের আজব কারবার চলতেই থাকে। আর মজিদের দেওয়া নীল শাড়িটা তাদের পায়ের নীচে হুটোপুটি খায়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন