বিজ্ঞাপন

ভাঙা জংশন

April 22, 2023 | 5:22 pm

আল নাহিয়ান

১.
কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা মহানগর প্রভাতীর শেষ বগি। বগির পেছনে ঝুলছে কয়েকটা ছেঁড়া স্যান্ডেল, ন্যাকড়া, রঙচটা শার্ট ও টুকু। ট্রেনের প্রতি বগিতে প্রতিদিন অসংখ্য বস্তু ঝুলে ঝুলে যায়। কখনও তেলের ভাঙা ড্রাম। কখনও চালের খালি বস্তা। কখনও মানুষ। আবার এমন বস্তুও রয়েছে যা সিটে বসে বসে আরামে গন্তব্যে পৌঁছায়। এগুলো হলো কম্পিউটার, ডিনার সেট, পাখির খাঁচা। আসলে ট্রেন বড় অদ্ভুত জিনিস। এর ভেতরের মালামালগুলো ভ্রমন করে সিটে বসে। আর মানুষগুলো ঝুলে থাকে বগির গায়ে-মাথায়। অবশ্য সব মানুষ নয়। কিছু মানুষ।
একটা বগিতে প্রচন্ড হাউকাউ চলছে। ট্রেনে সকালবেলা এমনিতেই এসব চলে। হকাররাই বেশি করে। এটা তাদের বিজনেজ পলিসি। এসব হাউকাউ কখনও হয় হকারে-হকারে। কখনও হকারে-প্যাসেঞ্জারে। কখনও প্যাসেঞ্জারে-প্যাসেঞ্জারে। তবে শেষেরটা যখন ঘটে তখন অনেকক্ষণ ধরে চলে। একবার শুরু হলে পরের স্টেশন আসা পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে সেটা চলতে থাকে। গ্যাঞ্জামের আশেপাশে মানুষ ভীড় করে। অন্য বগি থেকেও অতিথি দর্শক চলে আসে। কি নিয়ে ঝগড়া বেঁধেছে সেটা জানার তীব্র কৌতুহল তাদের চোখে-মুখে। কেউ কেউ নিজের সাধ্যমতো সমাধানও বাতলে দেন। আবার কেউ সরাসরি মল্লযুদ্ধে বিশ্বাসী। কারো মধ্যে এমন একটা ভাব যেন তিনিই বিচারপতি হাবিবুর রহমান। ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করে নেন তিনি। সব ঘটনা শোনার পর যখন কোনো সমাধান দিতে যাবেন তখন ভীড়ের অন্য প্রান্ত থেকে আরেক ‘হাবিবুর রহমান’ এর উদয় ঘটে। তিনিও নতুন সমাধান দিতে তৎপর। তখন দুই ‘হাবিবুরে’র মধ্যে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের নকআউট রাউন্ড। স্নায়ুযুদ্ধ। এ যুদ্ধ সম্মান ধরে রাখার। নিজেদের ক্ষমতা ও দাপট জাহিরে ব্যস্ত তারা তখন। মোবাইলে বাটন ভেঙে ফেলেন কল করতে করতে। ‘অই সলিমুল্লা কই তুই, অমুক স্টেশনে আয়, এক হালারে সাইজ করতে অইবো।’ ‘অই কলিমুল্লা তুই রামদা’য়ে ধার দে, আইজকা পাঠা জবো দিমু একটা’। এসব সলিমুল্লা-কলিমুল্লাদেরকে বোধহয় চব্বিশ ঘন্টা এম্বুলেন্স সার্ভিসের মতো প্রস্তুত রাখা হয়। এমন একটা ভাব যেন তারা বেতন দিয়ে এসব সলিমুল্লা-কলিমুল্লাদেরকে পোষেন। যেন কল করামাত্রই এরা দু’টাকার নোটের মতো ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহিককে দিতে বাধ্য থাকিবে’। তখন মূল দুই ঝগড়াকারী চুপচাপ থাকেন। নীরবে নিজেদের পক্ষের ‘বিচারক’দেরকে নৈতিক সমর্থন দিয়ে যান।
যথারীতি পরের স্টেশন আসে। ‘বিচারক’দের সেই সলিমুল্লা-কলিমুল্লারা কেউ ট্রেনে ওঠে না। কিংবা নামেও না। বরং বিচারকদের কোনো একজন নিজেই নেমে যান। ‘দেখাইয়া দিমু’ ভাবটা তখনও তার চেহারাও প্রবল আকারে থাকে। আর যে বিচারক ট্রেনে থেকে যান তার চোখে মুখে তখন ষোল দু গুণে বত্রিশ আনার তেজ। আশেপাশের যাত্রীরা হতাশ হন। ‘কোপাকুপি’র যে দৃশ্য তারা মনে মনে সাজাচ্ছিলেন তাতে যেনো পানি ঢেলে দিলো কেউ। হতাশ হয়ে ফিরে যান চানাচুরওয়ালারাও। এই ভীড়-বাট্টায় সবচেয়ে মুনাফাধারী ব্যক্তিরা হলেন চানাচুরওয়ালা আর পকেটমার। গা গরম করে নেয়ার জন্য চানাচুরের বিকল্প নেই। একটা ঝগড়া মানেই সেখান থেকে একটা মিনিমাম প্রফিট চলে আসা। খেয়াল করলে দেখা যায় এসব ভীড়ে দাঁড়ানো অন্তত ষাট ভাগ দর্শকই কোনো না কোনোভাবে হকার বা পকেটমার। টুকু অবশ্য ভীড়ের মধ্যে গেলো না। বগির পেছনে বসে বসেই শুনছে সব। এসব হাউকাউ এখন তার কাছে বাদাম চিবোনোর মতো সহজ ব্যাপার। কানটা একটু খোলা রাখলেই পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়। এই যেমন, কানে যদি আসে-
-মাইপ্যা দেহেন এইডা কার মাথার উপর!
তাহলেই বোঝা যায় ঝগড়াটা ব্যাগ রাখার জায়গা নিয়ে। ট্রেনে মাথার উপর ব্যাগ রাখার স্থান। ভীড়ের ট্রেনে যার যার মাথার উপর তার তার জায়গা। আবার যদি কানে আসে-
-অই মিয়া আমার পোলায় সকালে পাউরুটি খাইসে। ডিমভাজি আর আলুভর্তা আইবো কই ত্থিকা?
বুঝে নিতে হয় ঝগড়াটা বমি করা নিয়ে। কারো গায়ে হয়তো বমি গিয়ে পড়েছে। অই ব্যক্তি যাকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি অভিযোগ অস্বীকার করছেন। চাইলে এমন হাজারটা উদাহরণ দেওয়া যাবে। কিন্তু টুকুর ওসব নিয়ে ভাবতে ভাল্লাগছে না। চট্টগ্রাম গিয়ে কাল ভোরের সুবর্ণ এক্সপ্রেসেই আবার উঠতে হবে। মাঝে বহদ্দারহাট, নিউমার্কেট, জিইসি মোড়, কাজীর দেউড়ি হয়ে কিছু মালামাল স্টেশনে আনতে হবে। তারপর ঢাকায় এনে স্টেশন থেকে খালাস করলেই বিল পকেটে। কাজ মূলত এটাই। সুবলদা এই কাজটা ধরিয়ে দিলো। এ কাজ থেকে যে টাকা আসবে তার অর্ধেকটা তার। এটাই নিয়ম। বড় কোনো কাজ এলে সেটার অর্ধেক কমিশন পায় ‘ঠিকারি’রা। তার উপর সরদার হলে তো কথাই নেই। সুবলদা কমলাপুর রেলস্টেশনের কুলি সরদার। তবে এর আগে স্টেশনে এতো কম বয়সী সরদার কেউ ছিলো না। কমপক্ষে চল্লিশ বছর না হলে তাকে সরদার ডাকতে ইচ্ছে হয় না। সুবলের বয়স ত্রিশের বেশি নয়। তাছাড়া সরদারদের যেমন বাজখাই দাপট থাকে, সুবলের তেমন নয়। দশটা সাধারণ কুলির মতোই তার চলাফেরা। অন্য কোনো সর্দার হলে টুকুকে কোন টাকাই দিতো না। পুরোটাই নিজের পকেটে রাখতো। বড়জোড় বিড়ির খরচ দিতো। কিন্তু সুবল দিচ্ছে পুরো অর্ধেক।

বিজ্ঞাপন

২.
৭ নম্বর পিলারের বেঞ্চিতে বসে বসে যারা ঝিমুচ্ছে তাদের ট্রেন চলে আসার কথা এখনি। জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস সাধারণত দেরী করে না। তাছাড়া সিলেটের মানুষের ধৈর্য্যশক্তি বেশি বলেই বোধহয় ঐ এলাকার ট্রেন খুব একটা দেরি করে না। যে এলাকার মানুষের ধৈর্য-টৈর্য একটু কম, ঐসব ট্রেন দেরি করে আসে। আর যে এলাকার মানুষের মেজাজ অতিরিক্ত গরম, ঐ এলাকায় ট্রেনই নেই। দক্ষিণাঞ্চলে কবে যে ট্রেন চলবে! হয়তো বংশানুক্রমে তাদের মেজাজ ঠান্ডা হবার পর। টুকু সাধারণত এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমায় না। সাতটা বিশের ট্রেনে মালামাল তুলে দিয়ে নাস্তা করে পরের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু আজ নাস্তা না করেই ঘুমিয়ে গেছে সে। উঠলো এই মাত্র। মানুষ কি আকাশ থেকে পড়ে কখনও? কেউ অবাক হলে নাকি আকাশ থেকে পড়ে। আবার কারো বাবা-মায়ের পরিচয় না থাকলে তাকেও আকাশ থেকে পড়ার কাহিনী শোনানো হয়। টুকু যে আকাশ থেকে পড়েনি সে ব্যাপারে সে গত বছর থেকে মোটামুটি নিশ্চিত। কেউ না কেউ অবশ্যই তার বাবা-মা ছিলো। তারা কারা? পনেরো বছর আগে খিলগাঁও বস্তির পাশে ট্রাক স্ট্যান্ডের ছাউনিতে ছুকিয়া নামে এক মহিলা তাকে ফেলে চলে গিয়েছিলো। ট্রাক ড্রাইভার ফারুক মিয়ার সন্তান টুকু। একবার ফারুক-ছুকিয়ার ঝগড়া হয়। ছুকিয়াকে ফেলে ফারুক আরেকটি বিয়ে করে। সেখানে একটি সন্তান হয়। সেই সন্তান এখন বিদেশে লেখাপড়া করে। ফারুক মিয়া এখন অনেক বড়লোক। নিজেরই প্রায় বিশটার মতো ট্রাক আছে। আর ছুকিয়ার খবর কেউ জানে না। রেলের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো সে। অথবা ফারুক মিয়া নিজের ট্রাক দিয়েই চাপা দিয়ে মেরে ফেলে ছুকিয়াকে। এসবই বানানো কাহিনী। একটিও সত্য নয়। স্টেশনের পাশে ভাঙ্গারির টোকাই সোলেমানের মা বিজলি খালার কাছ থেকে শোনা। ছোটবেলায় বিশ্বাস করলেও, বড় হয়ে সে বিশ্বাস ভেঙে গেছে। বুঝে গেছে সবই বিজলি খালার বানানো কথা। টুকুকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্যই এসব বলা।
ঘড়িতে বারোটা পঁয়তাল্লিশ বাজে। পাশে বসা দু’জন যে স্বামী-স্ত্রী সে ব্যাপারে টুকু নিশ্চিত। আরেকটি ব্যাপার নিশ্চিত হওয়া গেছে যে তারা হিন্দু। তাদের ট্রেন ছিলো রাতে। মিস করেছে বলে সারারাত এখানেই অপেক্ষা করেছে। বারোটার জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে টিকিট কেটেছে আবার। সারারাত কেঁদেছে মেয়েটা। তাদের সমস্যাটা একটু বিদঘুটে। এ ধরণের সমস্যা সে আগে শোনেনি কখনও। তাকে প্রতিদিন হাজার রকম ঘটনা তার দু’কানে প্রবেশ করে। কোনোটা কান হয়ে হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছায়। কোনোটা আরেক কান দিয়ে বেরিয়ে যায়। এই মুহুর্তে পাশে বসে থাকা দু’জনের কথাগুলো টুকুর হৃদয়ে ঢুকবে ঢুকবে করছে। কারণ এই সমস্যা সে আগে কখনও শোনেনি। মেয়েটা সারারাত কাঁদার পর এখন আর কাঁদছে না। ঝিমুচ্ছে দু’জনই। এদের নাকি ছেলে-মেয়ে নেই। বিয়ের ঠিক কতো বছর পেরিয়েছে সেটা এখনো জানা যায়নি। তবে ছেলে-মেয়ে হওয়ার চিকিৎসা করাতেই যে এরা ঢাকায় এসেছিলো সেটা জানা গেছে। ঢাকায় এসে নানান বিভ্রান্তিতে পড়েছিলো এরা। পল্টনের কাছে একটা ব্যাংক থেকে দশ হাজার টাকা তুলতে গিয়ে আড়াই ঘন্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিলো লোকটাকে। সিলেটে এমন হয় না। গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ায় লোকাল বাসে চড়ার সময় বাসের হেল্পার ছেলেটা মেয়েটির পিঠে হাত দিয়েছিলো। খুব অস্বস্তি লাগছিলো তার। সিলেটে এমন হয় না। দু’জনের একত্রে মন খারাপ হলে কিন ব্রিজের নিচে সুরমা পাড়ে গিয়ে বসে থাকা যায়। ঢাকায় কোনো সুরমা নদী নেই। নেই বসে বিশ্রাম নেবার কোনো নিরিবিলি জায়গা। এই ব্যাপারগুলোকে ছাপিয়ে সবচেয়ে যে বিষয়টি তাদের বুকে আঘাত করেছে সেটি হলো ঢাকার মানুষের সংকীর্ণতা। মফস্বলে একজনের জন্য আরেকজনের সময়ের কোন অভাব নেই। ঢাকার মানুষের নিজের জন্য নিজেরই সময় নেই। অন্যের তো দূরের কথা। চিকিৎসা করাতে করাতে টাকা ফুরিয়ে গিয়েছিলো গতকাল। এক আত্মীয়ের বাসায় থাকার জন্য ফোন করেছিলো। তারা মুখের ওপর না করে দিয়েছে। ঢাকায় পঞ্চাশ বেলা খাওয়ানো যায় কিন্তু রাতে রাখা যায় না। জায়গার বড় অভাব। অথচ ঢাকা থেকে মফস্বলে গেলে গেরস্ত লোকেরা ফ্লোরে শুয়ে হলেও অতিথিকে আদর-আস্তি করে বাড়িতে রাখে। গতকাল অনেকটা অভিমান নিয়েই রাতের ট্রেনে সিলেটে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সবচেয়ে বড় কথা মেয়েটার ছেলে-মেয়ে না হলে তার স্বামীকে আবারো বিয়ে দেওয়া হবে। সে ব্যাপারে রায় বাড়ির ছোট মেয়ের নাম উঠে এসেছে সবার আগে। ওই মেয়েটির সাথে বিয়ে হলে তার সাজানো স্বপ্নগুলো ভেঙে যাবে। অনিশ্চিৎ এই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই কাঁদছিলো হয়তো মেয়েটা। ছেলেটার মুখে সেই অনিশ্চয়তা না থাকলেও বিষাদ ছিলো ভরপুর। রাতে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি তাদের। ট্রেন চলে এসেছে। টুকু উঠে বসলো। ব্যাগ টানা-হ্যাঁচড়ায় মন টানছে না তার। নয়তো পাশে বসা দু’জনকেই প্রথমে জিজ্ঞেস করতো সে। দু’জন চলে যাচ্ছে উঠে। টুকু সেদিকে তাকিয়ে আছে। কেউ মা-বাবা হওয়ার জন্য পাগল, আর কেউ মা-বাবা হয়েও সন্তানকে ফেলে যায় রেলস্টেশনে। নিজের কথা ভাবছিলো টুকু। বহুদিন পর নিজেকে নিয়ে ভাবছে সে। একটুকুও ভালো লাগে না তার নিজেকে নিয়ে ভাবতে। যখনই নিজের দিকে খেয়াল যায় তখনই অন্য কাজে ডুবে যায় ইচ্ছে করে। কারণ যব কিছুর কূল কিনারা পেলেও এই বিষয়টার কোন কূল খুঁজে পায় না সে। কে, কি, কেন, কীভাবে, কখন, কোথায়- এই ছয় প্রশ্নের জবাব দেবার জন্য এমন কাউকে খুঁজে পেলো না সে আজ পর্যন্ত। বেঞ্চে ফেলে যাওয়া চুলের ক্লিপটা হাতে নিয়ে দৌড় দিলো সে। এক দৌড়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তাদের।
-আফা আপনের কিলিপ। ফেইলে গ্যাছেলেন।
-ও আইচ্ছা। দইন্যোবাদ। বালা তাখিও।
ট্রেনে উঠে গেলেন তারা। কোমর থেকে নেমে যাওয়া প্যান্টটা তুলতে তুলতে খলিল কাকার দোকানের দিকে চলে গেলো টুকু।

৩.
চায়ের কাপের শেষ দুই চুমুক দিতে অদ্ভূত শান্তি লাগে। কাজে ঝাঁপ দেবার ঠিক আগ মুহুর্তে অমন নির্ভার দুটো চুমুক অনেক কাজে দেয়। খলিল কাকার চা মানে আরও অনেক কিছু! সাত/আট বছর বয়স থেকে সে এই চায়ের ভক্ত। বিকেলে চা খেতে এলে আজমত ভাইয়ের দেখা মেলে। আজমত ভাই হলেন এই স্টেশনের একমাত্র সেনাপতি। হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা হারানোর পরদিনই তিনি সারাবাংলার ক্ষমতা গ্রহন করেন। হেডকোয়ার্টার হিসেবে খলিল কাকার চায়ের দোকানটিকে অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করছেন। তবে স্থায়ী কার্যালয়ের নির্মাণ কাজ চলছে। তাকে জিজ্ঞেস করে সাত বছরেও উত্তর মিললো না কোথায় চলছে সেই নির্মাণকাজ। উচ্চ-প্রশাসনিক কাজ কারবার। হয়তো খুবই গোপনীয়। আজ আজমত ভাইকে দেখা যাচ্ছে না। চায়ে চুমুক দেওয়ার খানিক পরেই দোকানের পেছন থেকে মূত্রত্যাগের আওয়াজ এলো। আজমত ভাই ছাড়া আর কেউ নয়। খলিল কাকার দোকানের পেছনে এই কাজ করার সাহস একমাত্র আজমত ভাই-ই রাখেন।
-ক্যাডারে?
-এরশাদ।
-আজমইত্যা তুই আইজকাও পানি খাইসশ! কয় টেহা আসিলো রে ব্যাগে?
-আইজকা শিনতাই করিনাই। পইড়া পাইসি। সত্তুর টেহা। অইডা দিয়া খাইসি।
-ঢেলি ঢেলি টেহা পইড়া পাস তুই। আমারে শিগাস?
-হ শিগাই। বাঙ্গালীরে না শিখাইতে না শিগাইতেই তো আইজকা এই অবস্তা!
প্যান্টের চেইন না লাগিয়েই দোকানের তক্তায় এসে বসলো আজমত ভাই। চেইন খোলা থাকলেও অসুবিধা হয় না তার। প্যান্টের ভেতরে লুঙ্গী, তার উপর হাফপ্যান্ট। তার উপরে চেইনবিহীন ফুলপ্যান্ট। এটাই নাকি একজন ‘রাষ্ট্রপ্রধান’ এর প্রকৃত পোষাক। খলিল কাকা উপদেশ দিচ্ছেন বোধহয়,
-ঢেলি ঢেলি পানি খাইলে গলায় ক্যান্সার অয়।
-দ্যাশের ন্যাতাগো পানি খাইতে অয়। নইলে উলটা ক্যান্সার অয়। কতায় আসে না- বিষে বিষক্ষয়। আমরা নিজেরাই বিষ। গলায় বিষ ঢাইলা বিষক্ষয় করি।
-তোর হেডুফিশ কি বানাইন্যা অইয়া গ্যাসে?
-না। কাম চলতাসে। তুমি এতো বেশি কতা কও ক্যারে খলিল ভাই।
-ল। চা ল।
টুকু মুখ টিপে হাসছিলো এতোক্ষণ। কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাবে এমন সময় আজমত নিজেই শুরু করলো
-টুইক্কা, তর লাইগা একখান জিনিস আনছি।
-কি জিনিস?
-গু। খাবি?
-তোমার গু তুমি খাও।
-দ্যাশে ন্যাতারা নিজেগো গু নিজেরা খায় না। মাইনষেরে খাওয়ায়। মশল্লা মাইখ্যা খাওয়ায়। মাইনষে ট্যার পায় না। তুই-ও ট্যার পাবি না।
-আইজকা কয় প্যাগ মারসো? হেচকি বেশি দিতাসো লাগে!
-কানের তলে দুইডা দিলে বুজবি। তর বয়সে বিয়া করলে তর সমান একটা নাতনি থাকতো আমার। হেইডারে খলিল ভাইর লগে বিয়া দিতাম। আর তুই আমারে জিগাস কয় প্যাগ খাইসি! ব্যাদ্দপ!
-গেলাম। টেরেন আইবো অহনি। আর শুনো, তোমার চায়ের টেহা আমি দিয়া গেসি। দেওন লাগবো না তোমার।
আজমত নামের ত্রিশোর্ধ্ব এই হেরোইনসেবীর সঙ্গে টুকুর সখ্য আজকের নয়। টুকুর ছোটবেলায় সে যখন কুলির কাজ শুরু করেনি। তখন ছিনতাইয়ের টাকায় টুকুর জন্য বনরুটি আর কলা কিনে আনতো সে। ছিনতাই করে বেশি টাকা পেলে সেদিন আনতো পরোটা আর ভাজি। আর মার খেয়ে রক্তাক্ত হয়ে ফিরলে কপালে পট্টি বেধে দিতো সে। এমন ভাবেই একটা শক্ত বন্ধন হয়ে গেছে আজমত ভাই আর টুকুর। বয়স বেড়েছে আজমত ভাইয়ের। নেশার প্রভাবে বয়সের ছাপ পরে গেছে তার চেহারায়। নিজলি খালা, খলিল কাকা, নিজামুদ্দি বাবুর্চি- এরা মিলে দুয়েক বেলা সাহায্য করলেই দিন পেরিয়ে যায় আজমতের। প্রতিদিন শত শত মানুষের সঙ্গে মেশে টুকু। একেকজনের পছন্দ একেক রকম। আচরণ একেক রকম। ইচ্ছে একেক রকম। সেদিক থেকে নিজেকে একটা জংশন মনে করে টুকু। শুধু নিজেকে নয়। এই স্টেশনের প্রতিটা কুলিই একেকটা জংশন। প্রতিটা জংশনে মিলিত হয়ে সেখান থেকে ছুটে চলে হাজার রকম মানুষরুপী ট্রেন।

৩.
নতুন একটা পিচ্চি এসেছে স্টেশনে। আলেক না সালেক কি যেন নাম। এসেই স্টেশনে হইচই লাগিয়ে দিয়েছে সে। সুবল দাকে গতকাল পেপসি কিনে খাইয়েছে। ফকরুদ্দিন ধুনকারকে নারিকেল তেল কিনে দিয়েছে নিজের টাকায়। এই ছেলে বেশিদিন স্টেশনে থাকলে তার সব আদর কেড়ে নেবে। টাকার ভাগেও কমতি পড়বে তার। তাছাড়া এতোদিন ধরে স্টেশনে টুকুর যে ‘ইজ্জত’ হয়েছে সেটা কেবল তার একারই থাকুক এটাই সে চায়। তাই নতুন কাউকে এই মুহুর্তে মেনে নিতে পারছে সে। দেখা করা প্রয়োজন ছেলেটার সাথে। দুপুরের ট্রেনের মালগুলো খালাস করে তারপর দেখা করা যাবে। পেছন থেকে একটা হাত টুকুর কাঁধে এসে পড়লো।
-আপনে টুকু ভাই?
-হুম। তুই ক্যাডা?
-আমি আলেক। আপনের লগে একটু কতা আসিলো। লন প্যালেটফরমে বহি।
বলেই হাতের ক্র্যাচটা বগলের নিচে নিলো সে। টুকু খেয়াল করলো ছেলেটির একটা পা নেই। ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটছে সে। প্রথম দেখাতেই ভড়কে গেলো টুকু। যে ছেলেটার একটা পা-ই নেই সে তো অন্তত তার প্রতিদ্বন্দী হতে পারে না। তারচেয়ে বড় কথা, ছেলেটা তোতলা। কথা বলতেও কষ্ট হয় মনে হলো।
-যাহ শালা দিলি তো মনটারে গলাইয়া!
মনে মনে বলে টুকু। প্লাটফরমে গিয়ে বসলো দু’জন। পাশের প্লাটফরম থেকে ট্রেন ছেড়ে যাবে। হুইসেল বাজাচ্ছে বারবার। টুকুই শুরু করলো আগে,
-বাপে কইরে তোর?
-ভাই, আমারও বাপ-মা নাই। কাকার কাছে বড় হইসি।
-ভাইবইন আসে?
-আসে। খবর লয় না আমার।
-স্টেশনে আইসস ক্যা?
-খয়রাত করতে। আর কুনোহানে জাগা পাইনাই।
-কোনো মসজিদের সামনে খাড়াস না ক্যা? খয়রাত তো অনেক বেশি পাবি।
-এই এলাকার সব মসজিদ বুক। কেউ খাড়াইতে দেয় না। সামনে খাড়াইতে অইলে সিনিয়র খয়রাতিগো ভাগা দেওন লাগে।
-আইচ্ছা আমি তরে ইশটিশনের একটা ভালো জাগা দেইখা ঠিক কইরা দিমু নে। অইহানে বইবি তুই।
-ছুডো ভাই গো কাসে হুনসিলাম আপনে উফোকার করেন। সত্যিই আফনে…।
-হইসে থাইকগা। পাম দেওন লাগবো না। আমার শইলে অনেক ফুডা। পাম বাইর অইয়া যায়।
-পাম না ভাই। খয়রাতি গো থেইকা কুলির কামে সম্মনা বেশি। টেহাও।
-কেডা কইসে তরে? কুলি গো সবাই ঘিন্না করে। পকেটমাইর ভাবে। কেমনে কেমনে জানি চায় আমগো দিগে। কতোবার যা মাইর খাইসি হিসাব নাই।
-হুদাই মারসে?
-আমারে দেকলেই বলে চোর চোর লাগে। এল্লেইগা মারসে। অথচ বিজলি খালায় কয় আমি বলে চান্দের লাহান সোন্দর।
-আপনের ফেস তো আসলেই সুইট। ক্যাডায় কয় আপনের ফেস চোরের লাহান!
-কইসি না আমারে পামে ধরে না! আবারো পাম দ্যাস?

বিজ্ঞাপন

৪.
কদিন ধরেই উসকো খুসকো হয়ে ঘুরছে টুকু। হাতে টাকা পয়সার অভাব। একটা নতুন জামা কেনা দরকার। একটা স্পঞ্জের স্যান্ডেলও কিনতে হবে। তেল অবশ্য কেনা লাগবে না। আলেক কদিন আগে ফকরুদ্দিন ধুনকারকে যে তেলটা কিনে দিয়েছে ওটা দিয়েই আগামী কয়েক দিন চালিয়ে দেওয়া যাবে। এই মুহুর্তে এতো কিছু কেনার টাকা নেই। কিন্তু কারনটা কি? কেন ওসব কিনতে হবে?
-কিরে টুকু নতুন জামা কিনার লিগা টেহা জমাইতাসোস বলে?
খলিল কাকার প্রশ্নটা শুনে বেশ ভালোই লাগলো টুকুর। জবাবটাও দিলো জলদি,
-নিজের ইট্টু যত্ন নিতাসি কাকা। বাপ-মায় ছুডোকাল থিকা নেয় নাই তো। কি আর করা। নিজেরেই নেওন লাগবো।
-পোলাপান বড় অইয়া নিজের যত্ন-আস্তি করলেই ডর লাগে। মুনে অয় পিরিতি করলো বুজি।
চায়ের চুমুকটা সরাসরি মস্তকে ঠেকলো টুকুর। বারকয়েক কাশি দিয়ে কাপের চা টা ফেলে দিলো মাটিতে। দ্রুত উঠে গেলো সেখান থেকে। তার দিকে তাকিয়ে রইলো খলিল মিয়া। আসলেই সে প্রেমে পড়েছে। কিশোরগঞ্জগামী এগারোসিন্দুর প্রভাতির এক যাত্রীর। বুধবার সকাল ৮:১০ এর ট্রেনটা সেদিন আসতে দেরী করছিলো। অবরোধের কারণে ইদানীং অনেক ট্রেনেরই শিডিউল মিস হয়। সে যে বেঞ্চটায় ঘুমায় তার পাশের বেঞ্চে এক বৃদ্ধা বসেছিলো। বৃদ্ধার পাশে একটা মেয়ে। তেরো-চৌদ্দ হবে বয়স। নীল রঙের থ্রি-পিস। মাথায় চপচপে তেল। ঠোঁটে লিপস্টিক নেই কিন্তু চোখে কাজল দেওয়া। মেয়েটার সবচেয়ে সুন্দর হলো তার কণ্ঠ। বৃদ্ধার কোলে শুয়ে সে খোলা গলায় গাইছিলো-
“দিনরাত্রির হয় না রে মিলন
দূরে থাকে চিরকাল
তোমার আমার এই পিরিতি
কাছে পাওয়ার নাই রে কপাল…”
গানটা খলিল কাকার সিডি প্লেয়ারে বহুবার শুনেছে সে। কিন্তু বারি সিদ্দিকির চেয়ে হাজার গুণ ভালো গাইছিল সেই মেয়েটা। এমনই ধারণা টুকুর। পাশের বেঞ্চে গিয়ে বসলো সে। চোখে চোখ পড়লো দু’জনের। টুকু চোখ সরিয়ে নিতে গিয়েও সরালো না। খেয়াল করলো মেয়েটার চোখে পানি। কাজল ভেঙে পানি ঝরছে অবিরত। সে ভেবেছিলো মেয়েটা গান থামিয়ে দিবে হয়তো। গান থামালো না সে।
“মুখোমুখি হতে কেনো পারি না
চুপি চুপি খুঁজে বেড়াই দেখা মেলে না
ধরতে গেলে দেয় না ধরা
থাকে সমান্তরাল
কাছে পাওয়ার নাই রে কপাল।”
কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই বৃদ্ধার সঙ্গে মেয়েটার কথোপকথন কানে গেলো,
-কান্দোছ ক্যারে? বাপ-মা কি হারা জীবন বাইচ্যা তাহে? নানী তো বাইচ্যাই আসে!
বৃদ্ধার কথার কোনো জবাব দিলো না মেয়েটা। গান শুরু করলো আবার
“কাছাকাছি এসে কেনো বলো না
না বলা কথা আর শেষ হবে না
বলতে গেলে হয় না বলা
সঙ্গীর বড় আকাল-
কাছে পাওয়ার নাই রে কপাল”

এবার মেয়েটার পাশে গিয়ে বসলো টুকু। পরণে ছেঁড়া শার্ট তাই একটু লজ্জা লাগছিলো। তবুও দমাতে পারলো না নিজেকে।
-কি হইসে তুমার? এত্তো কানতাসো ক্যান?
কিছুক্ষণ টুকুর দিকে তাকিয়ে থাকলো মেয়েটা। কোনো জবাব দিলো না। বৃদ্ধা জবাব দিলো,
-কালহুয়া অর বাপ মইরা গ্যাসে। ডাহা আমরার আর কেউই নাই। এল্লেইগা আমরা কিশুগনজো যাইতাসিগ্যা।
-আবার আইবেন না আপনেরা? নাকি একবারে চইলা যাইতাসেন?
-সামনের সপ্তাই আইতারি। এক বাইত কাম ঠিক করসে অর কাকায়।
এগারোসিন্দুর এক্সপ্রেস চলে এলো ৫ নম্বর প্লাটফরমে। উঠে দাঁড়ালো তারা। প্রথমবারের মতো কথা বললো মেয়েটা,
-আমার কান্দা দেইক্কা তুমিই পতম জিগাইসো। ডাহা শরের কুটি কুটি মাইনষের মইদ্দে কেউ আমারে জিগাইলো না। তুমি ভালা। অহন যাইগা। ফির্যা দেহা অইবো।
-কি নাম তুমার?
-গাতকী। আসল নাম না কিন্তুক! বাপে ডাকতো এই নামে।
আসল নাম কি তুমার?
-ফির্যা দেহা অইলে কমুনে। যাইগ্যা।
চলে যাচ্ছিলো তারা। আবারো গান ধরলো সে। একটা গানই তার কন্ঠে-
“দিনরাত্রির হয় না রে মিলন
দূরে থাকে চিরকাল
তোমার আমার এই পিরিতি
কাছে পাওয়ার নাই রে কপাল”
তিনদিন ধরে টুকু পাগলের মতো খুঁজছে মেয়েটাকে। সেই বৃদ্ধার চেহারাটা ঠিকভাবে মনে নেই তার। তাই আশেপাশে কোনো বৃদ্ধাকে দেখলেই তার পাশটা ভালো ভাবে দেখে নিচ্ছে। ‘গাতকী’ আছে নিশ্চয়ই। পরদিন দুপুরে এক বৃদ্ধাকে দেখে কাছে গেলো টুকু। বৃদ্ধা ঝিমাচ্ছিলো। পাশে গিয়ে বসলো সে। বৃদ্ধার ব্যাগটাকে ধরে ভালোভাবে খেয়াল করলো সে। নাহ। গাতকীর ব্যাগ নয়। ওর ব্যাগটা নীল। হঠাৎ পিঠে প্রচন্ড থাপ্পর অনুভব করলো টুকু।
-শালার পো, চুরি করার জায়গা পাস না! পুলিশের ব্যাগে হাত দেস!
লোকটার কথা শুনে কিছু বলে ওঠার আগেই চোখ বরাবর আরেকটা ঘুষি পড়লো তার। লোক জমে যাচ্ছে আশেপাশে। চোর, চোর, চোর। পুলিশের মায়ের ব্যাগে হাত। কত্তো বড় সাহস। মার শালারে। কিন্তু সুবলদা কোথায়? এই বিপদে তাকে যে বড় প্রয়োজন!

৫.
স্টেশন থানার ডিউটি অফিসারের রুম। এতোক্ষণ ধরে কুলি সরদার সুবল ঘোষের কথা শুনে মাথা নাড়লেন অফিসার।
-কিচ্ছু করার নাই আমাদের। ঘটনার দুইদিন হইয়া গ্যাসে। এইটারে ছিনতাই কেসে ফালায় দেওয়া হইছে অলরেডি। চোখ মুইছা ফ্যাল সুবল। হুদাই কাদিস না।
-কিন্তু টুকুর তো কুনো দোষ আছিলো না ছার! অরে হুদাহুদি মাইরা ফেললো আপনেগো এক অফিসার।
-দ্যাখ, গণপিটুনির কোনো বিচার নাই।
চোখ মুছছে সুবল। শক্ত হবার চেষ্টা করছে সে। আলেকের কান্না থামাতে পারছে না কেউ। টুকু দাদা, টুকু দাদা বলে হাত পা ছোঁড়াছুঁড়ি করছে সে। থানার গেটে দাঁড়ানো খলিল, বিজলি খালা, সোলেমান আর ফখরুদ্দিন ধুনকারের ফাঁক দিয়ে একজনকে দেখা যাচ্ছে। ফুটপাথে বসে সে গাইছে,
“দিনরাত্রির হয় না রে মিলন
দূরে থাকে চিরকাল
তোমার আমার এই পিরিতি
কাছে পাওয়ার নাই রে কপাল।”

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন