বিজ্ঞাপন

একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা অমল মিত্র আর নেই

May 7, 2023 | 8:22 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসী গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে সম্যক খ্যাতি পাওয়া অমল মিত্রের জীবনাবসান হয়েছে। এই বীর যোদ্ধার মৃত্যুতে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

৭২ বছর বয়সী অমল মিত্র বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। রোববার (৭ মে) বিকেল ৪টা ৩ মিনিটে নগরীর মেহেদিবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন প্রয়াতের অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সন্তান শান্তনু মিত্র।

অমল মিত্র স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য রাজনৈতিক সহযোদ্ধা রেখে গেছেন। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়।

শান্তনু মিত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, রাতে নগরীর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল প্রাঙ্গনে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাদের পারিবারিক সিদ্ধান্তে বলুয়ার দিঘী মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রয়াত বর্ষীয়ান রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও ছায়াসঙ্গী অমল মিত্র চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।

একাত্তরে সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। সাহসী গেরিলা হিসেবে অমল মিত্র ছিলেন পাক সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের আতংক। ভারতে গেরিলা যুদ্ধের ওপর প্রায় দেড় মাস প্রশিক্ষণ শেষে একাত্তরের আগস্টে তিনি দেশে ফিরে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম শহরের আইস ফ্যাক্টরি রোডে সিটি কলেজের সামনে গেরিলা অপারেশনে অমল মিত্রের ভূমিকা স্থান পেয়েছে ইতিহাসধর্মী বিভিন্ন গ্রন্থে। আগ্রাবাদে মেজর পদমর্যাদার এক পাক সেনা কর্মকর্তাকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অপারেশনের খরচ জোগাতে আগ্রাবাদে আমেরিকান এক্সপ্রেসে অভিযান চালিয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রতিশোধ নিতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক কর্মী অস্ত্র হাতে নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিলেন, অমল মিত্র তাদের একজন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম শহরের দুর্ধর্ষ গেরিলা যোদ্ধা অমল মিত্রের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। শোকবার্তায় মেয়র বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মৃত্যুর পরোয়া না করে অমল মিত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। প্রশিক্ষিত হানাদার বাহিনীর বিপক্ষে লড়তে তখন আমরা গেরিলা হামলার কৌশল প্রয়োগ করে চট্টগ্রামকে শত্রুমুক্ত করতে একত্রে কাজ করি।’

‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কঠিন সময়ে তিনি আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে ভূমিকা রাখেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। চট্টগ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখে তিনি সবসময় পাশে ছিলেন। দলের চরম দুর্দিনে কর্মীদের তিনি আগলে রেখেছিলেন পরম মমতায়। তিনি দেশ ও জনগণের কল্যাণে আজীবন কাজ করে গেছেন। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে সেটি পূরণ হওয়ার নয়। প্রজন্ম থেকে থেকে প্রজন্মে একজন আদর্শিক নেতা হিসেবে কর্মীদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন। তার কর্ম এবং সাংগঠনিক কৌশল আমাদের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে’- বলেন মেয়র

বীর মুক্তিযোদ্ধা আমল মিত্রের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘অমল মিত্র ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান জন্য তাঁকে জাতি শ্রদ্ধার সাথে আজীবন স্মরণ করবে। তাঁর মৃত্যুতে আমরা একজন জাতির বীর সন্তানকে হারালাম।’

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় তারা বলেন, ‘অমল মিত্র মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথার এক অনন্য নাম। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী হিসেবে ছাত্রজীবন থেকেই আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথের সৈনিক হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। দলের আদর্শের প্রতি অবিচল ছিলেন। কখনও নীতিচ্যুত হননি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রতিশোধ স্পৃহায় তিনি জ্বলে উঠেছিলেন। দলের দুঃসময়ে তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজপথে ছিলেন। জীবনে কোনো লোভ লালসা ছিল না। তাঁর মৃত্যুতে দল ও দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও-বায়েজিদ) আসনের সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ এবং নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিনও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন