বিজ্ঞাপন

৮০ দিনের ‘অজ্ঞাতবাস’ শেষে থানায় ফিরলেন ওসি-এসআই

May 15, 2023 | 1:58 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রায় ৮০ দিন ‘অজ্ঞাতবাসে’ থাকার পর কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। এক যুবককে গ্রেফতার করে হেফাজতে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসের বর্ধিত ফি-বিরোধী বিক্ষোভ থেকে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

মামলার পর থেকে ওসি নাজিম এবং মামলার আরেক আসামি উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আজিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। মামলাটি তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি গত ১১ মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার পর রোববার (১৪ মে) দুই কর্মকর্তা থানায় যোগ দেন।

জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি’র চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. শাহনেওয়াজ খালেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত, ঘটনাস্থলে থাকা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা এবং সার্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এজন্য তথ্যগত ভুল মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাঁচলাইশ থানার ওসি জয়েন করেছেন। আমি যোগদানপত্র পেয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওসি স্যার এবং এসআই আজিজের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা তদন্ত করে সিআইডি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। উনাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, এর কোনো সত্যতা সিআইডি পায়নি। উনাদের নির্দোষ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনের ওপর এখনও আদালতে শুনানি হয়নি। যেহেতু উনাদের নির্দোষ ঘোষণা করেছে সিআইডি, উনারা গতকাল (রোববার) থানায় যোগ দিয়েছেন।’

পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন ও এসআই আব্দুল আজিজ গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত ছিলেন। কেন তারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখাও দেয়নি নগর পুলিশ।

কিডনি ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে গত ১০ জানুয়ারি সকালে চমেক হাসপাতালের প্রধান গেটের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা। কিডনি রোগী মাকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা সৈয়দ মোহাম্মদ মুনতাকিম প্রকাশ মোস্তাকিম (২৩)।

বিজ্ঞাপন

বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ওসি নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে এসে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন। ওসি নাজিম ঘটনাস্থল থেকে মোস্তাকিমকে আটক করে প্রথমে একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঢুকিয়ে মারধর করেন। পরবর্তী সময়ে থানায় নিয়ে তাকে ফের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

এরপর আটক মোস্তাকিমের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০ থেকে ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পাঁচলাইশ থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান। ওই মামলায় পাঁচদিন কারাভোগের পর ১৫ জানুয়ারি মোস্তাকিম জামিনে মুক্ত হন।

এরপর মোস্তাকিম ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছা‘র আদালতে ওসি ও এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আদালত নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনের ৫ (১) (ক) ধারায় মোস্তাকিমের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করার আদেশ দেন। অভিযুক্তদের পদমর্যাদা বিবেচনায় পুলিশ সুপারের নিচে নয় এমন কোনো কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি অসুস্থতার কারণে চারদিনের ছুটির আবেদন করেন ওসি-এসআই। মঞ্জুর হওয়া ছুটির সময় শেষ হওয়ার পরও তারা আর কর্মস্থলে যোগ দেননি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন