বিজ্ঞাপন

‘শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবেন— আবার ক্ষমতায় যাব’

May 28, 2023 | 8:40 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপির উদ্দেশে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, মার্কিন অ্যাম্বাসেডরের বাসায় ডিনার খেয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখবেন, ড. ইউনূস সাহেব এসে আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবেন- এসব ভুলে যান। এই বাংলাদেশ ইউনূস সাহেবের কথায় চলে না, খালেদা জিয়ার কুলাঙ্গার পুত্র তারেকের কথায় চলে না। বাংলাদেশ চলে শেখ হাসিনার কথায়। আপনারা শুধু দেখবেন, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবেন- আমরা আবার ক্ষমতায় যাব।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে রোববার (২৮ মে) বিকেলে নগরীর লালদিঘী ময়দানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের জনসভায় উপমন্ত্রী নওফেল এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক সাংসদ ওয়াসিকা আয়শা খান।

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আমরা আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে সমবেত হয়েছি। অপরাজনৈতিক শক্তিকে আগামীতে প্রতিহত করার জন্য সমবেত হয়েছি। আমরা সমগ্র বিশ্বের কাছে বার্তা দিতে চাই, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমগ্র বিশ্ব আজ ঐক্যবদ্ধ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আজ সারাবিশ্বে শুধু উন্নয়নের রোলমডেল নন, তিনি রাজনীতির দার্শনিক। তিনি শুধু একটি নির্বাচনের কথা চিন্তা করেন না। তিনি আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেন।’

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শক্তির বলে ক্ষমতায় আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই যথেষ্ট। আমরা ১৪ বছর ধরে জনগণের সেবায় নিয়োজিত আছি রাজনৈতিক শক্তির দ্বারা। বিএনপি-জামাতের নেতারা মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন, আমরা নাকি প্রশাসন আর পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছি।’

‘তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ ২১ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে ছিল। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। প্রশাসনের সহযোগিতা দূরের কথা, আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে, প্রশাসনিকভাবে যে অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম, তারপরও শেখ হাসিনার কর্মীরা মাঠে ছেড়ে যায়নি। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বুকে গুলি, শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেছিলেন। এটাই আওয়ামী লীগ।’

বিজ্ঞাপন

উপমন্ত্রী নওফেল আরও বলেন, ‘সমগ্র বাংলাদেশ আজ ঐক্যবদ্ধ, ১৮ কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। শেখ হাসিনার সরকার কাজের সরকার, শেখ হাসিনার সরকার যে প্রতিশ্রুতি দেয় সেটা রক্ষা করে। সেটা জনগণ জানে। এই লালদিঘী ময়দান থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। এই ময়দান থেকে শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নে ৪০ দফা ঘোষণা করেছিলেন। প্রতিটি দফা তিনি একে একে পূরণ করছেন।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আসুন আমা শপথ করি, আগামী নির্বাচনে আমরা ফের শেখ হাসিনার হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব সমর্পণ করব। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপরাজনৈতিক শক্তিকে প্রতিহত করে আমরা ফের সরকার গঠন করব।’

জনসভায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘গণতন্ত্র আমদানি করার কোনো বস্তু নয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ছিল, গণতন্ত্র আছে। শেখ হাসিনার সরকার ১৪ বছর ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই ক্ষমতায় আছে। বাংলাদেশের জনগণের ভালো শেখ হাসিনার চেয়ে ভালো কেউ বোঝে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আগামী ১০০ বছর পর বাংলাদেশ কেমন হবে, সেটা নিয়ে তিনি কাজ করছেন। জনগণ জানে-বোঝে, কারা তাদের কল্যাণ করবে।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের শুধু ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নেতাদের বলব, মানুষ চিনে রাখবেন। যারা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে, তাদের সংকটের সময় পাশে পাওয়া যাবে না। ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। এটাই জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। বিএনপি-জামাতের কী দুঃসাহস, তারা শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেয়! আওয়ামী লীগের একজন কর্মী বেঁচে থাকতে শেখ হাসিনার কোনো ক্ষতি আমরা হতে দেব না। আসুন আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা করি, বাংলাদেশের উন্নয়ন আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করব।’

বিজ্ঞাপন

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় জনসভায় ১৪ দলের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ও নগর কমিটির সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ও নোমান আল মাহমুদ, আইন সম্পাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান বক্তব্য দেন।

মঞ্চে বিশৃঙ্খলা-বাইরে হাতাহাতি

২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সর্বশেষ লালদিঘী ময়দানে আওয়ামী লীগের একটি জনসভা হয়েছিল। চার বছর পর বদলে যাওয়া লালদিঘীর মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভার মঞ্চে নেতাকর্মীদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের অনেকে মঞ্চে অবস্থান নেন। ফলে চেয়ারে বসা জ্যেষ্ঠ নেতাদের পেছনে ধাক্কাধাক্কি-হুড়োহুড়ি হয়। দুই নেতার নামে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেওয়া হয়।

নওফেল ও নাছির বারবার থামানোর চেষ্টা করেও অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন। সভাপতির বক্তব্যে মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ‘বিএনপি-জামাত’ বলে আখ্যা দেন।

এদিকে, জনসভা চলাকালে মঞ্চের পাশে ও সামনে কর্মীদের মধ্যে দুই দফা হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। মঞ্চের বামপাশে গেইটে প্রথমে হাতাহাতিতে জড়ান যুবলীগের দুই গ্রুপ। এরা যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও চসিকের কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

এরপর জনসভাস্থলের মাঝামাঝিতে আরেকদফা হাতাহাতি ও চেয়ার ছোঁড়াছুড়িতে জড়ান কর্মীদের দু’পক্ষ। এ সময় মঞ্চে জনসভার কার্যক্রম প্রায় পাঁচ মিনিটের মতো বন্ধ রেখে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন নেতারা। জনসভাস্থলে নওফেল ও নাছিরের নামে তখন কর্মীরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন। পরিস্থিতি শান্ত হলে আহত অবস্থায় এক যুবককে বের করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন