বিজ্ঞাপন

‘আমেরিকা ভিসা বন্ধ করলে আমাদের অসুবিধা কি?’

May 31, 2023 | 9:14 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ১৪ দলের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, আমেরিকা ভিসা বন্ধ করলে আমাদের অসুবিধা কি? আমেরিকা কি আমাদের ভাত দিচ্ছে? অসুবিধা তাদের হবে যারা দেশের টাকা আমেরিকায় পাচার করেছে। যারা দুর্নীতি করে, দেশের টাকা চুরি করে, সরকারি-বেসরকারি আমলা, চোর সবগুলো, যারা আমেরিকায় গিয়ে জোট বেঁধেছে, সমস্যা হবে তাদের। আমেরিকা হচ্ছে চোরদের স্বর্গরাজ্য।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩১ মে) বিকেলে নগরীর কোতোয়ালি থানার লালদিঘীতে জেলা পরিষদ চত্বরে ১৪ দলের গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির জন্য আমেরিকাকে দায়ী করে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘১৯৭৪ সালে আমাদের দেশে খাদ্য সংকট হয়েছিল। তখন আমেরিকার সরকার চারটি জাহাজে করে চাল পাঠিয়েছিল। কিউবার কাছে পাট বিক্রি কেন করেছি, সেই অভিযোগে সেসব জাহাজ ফিরিয়ে নেয়। আমাদের মুখের গ্রাস তারা কেড়ে নিয়েছিল। সেসময় আমেরিকার টাইমস পত্রিকায় এক সাংবাদিক লিখেছিলেন, দেশে দেশে আমেরিকা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে মানুষ মারে।’

বিজ্ঞাপন

সেই আমেরিকা এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে উল্লেখ করে সুজন বলেন, ‘স্যাংশন দিলে এদেশের কৃষকের কোনো অসুবিধা নেই। কৃষকরা আমেরিকা যাচ্ছে না। আমেরিকা নিজেই আজ দেউলিয়া হওয়ার পথে। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দিতে পারবে না। আমি নেত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করব, খিচুরির পাতিল তৈরি করে রাখুন। যেদিন আমেরিকা দেউলিয়া হবে, সেদিন আপনি ওদের খিচুরির পাতিল পাঠাতে পারবেন।’

সুজন আরও বলেন, ‘১৪ দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ও পক্ষের একটি রাজনৈতিক জোট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে হত্যার পর রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা এসেছিলেন, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেছে। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল। তারা মনে করেছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করতে পারবে।’

বিজ্ঞাপন

‘আমেরিকা ভিসা বন্ধ করলে আমাদের অসুবিধা কি?’

যুক্তরাষ্ট্রের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা যখন বুকের রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করছিল, নতুন দেশের নাম লিখেছিল, ৫৪ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছিল, তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছিল ওই বিদেশি রাষ্ট্র। ৩০ লাখ শহিদের বুকের রক্তের যে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সেটা ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ওই বিদেশি রাষ্ট্র ও পাকিস্তানের দোসররা বাংলার মানুষকে পরাজিত করতে পারেনি।’

বিজ্ঞাপন

‘একটি শোষণমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে পুনর্গঠন করছিলেন, ওই বিদেশি শক্তির মদেদে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তারা এই দেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করেছিল। আবার সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটানো হয়েছিল।’

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ‘রাজনৈতিক এতিম’ আখ্যা দিয়ে সুজন বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন রাজনৈতিক এতিম আছেন। তার নাম মাহমুদুর রহমান মান্না। খারাপ মেয়েরা তাকিয়ে থাকে কোন পুরুষের পকেট ভারি আর উনি থাকিয়ে থাকেন কোন দলের পাল্লা ভারি। বিএনপির সঙ্গে আরও যারা আছে, জামাত-রাজাকার, তারা সবাই বলতে চায় নির্বাচনে যাবে না। আমি তাদের বলব, আসেন বন্ধুগণ নির্বাচনে আসেন।’

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘একটি যুদ্ধে বিজয়ী হতে হলে সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনীর প্রয়োজন। একটি দলের আদর্শ-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সুশৃঙ্খল কর্মীবাহিনী। এই সৃশৃঙ্খল কর্মীবাহিনী দলের শক্তি ও ঐক্যের ভিত্তি। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করি, আমাদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী অপশক্তিকে বিনাশ করা।’

‘যারা সমাবেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হতে পারে না। বড় সংগঠনে পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে। তাই বলে একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়াতে পারি না। আমরা সবসময় এটা বলি। তবুও অনেকে উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আসেন। ষড়যন্ত্র করেন। মিছিল নিয়ে এসে বিশৃঙ্খলা করেন। এরা অনুপ্রবেশকারী। যারা এগুলো করেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগরের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবুল বলেন, ‘বিএনপি-জামাত জোট সরকার কুখ্যাত কালোবাজারি-সন্ত্রাসী বাবরকে দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিল। তার নেতৃত্বে এদেশে অনাচার ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। এমনকি শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টাও হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি যদি আবার ক্ষমতায় না আসে, এদেশ পাকিস্তান হয়ে যেতে পারে।’

জেলা ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি আবু হানিফ বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতায় একই মঞ্চে সমবেত হয়েছি। এই জোট কোনো নির্বাচনমুখী জোট নয়। এই জোট স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করতে একটি মুক্তমঞ্চ।’

সমন্বয়ক খোরশেদ আলম সুজনের সভাপতিত্বে এবং জেলা ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান ও নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- নগর কমিটির সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, জেলা সাম্যবাদী দলের আহ্বায়ক অমূল্য বড়ুয়া, নগর গণআজাদী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম আশরাফী ও সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, জেলা ন্যাপের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ মজুমদার, জেলা জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি বেলাল মৃধা, গণতন্ত্রী পার্টির প্রতিনিধি স্বপন সেন, চসিক কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী ও নীলু নাগ, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ এবং নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন